বৃহস্পতিবার, ৪ জুলাই, ২০১৯ ০০:০০ টা

নতুন রোহিঙ্গা ক্যাম্প নির্মাণ নিয়ে উত্তেজনা

ফারুক তাহের, চট্টগ্রাম

নতুন রোহিঙ্গা ক্যাম্প নির্মাণ নিয়ে উত্তেজনা

উখিয়ার থাইংখালী ১৯ নং রোহিঙ্গা ক্যাম্প সংলগ্ন ল াখালীর বনভূমির বিশাল এলাকাজুড়ে রোহিঙ্গাদের জন্য নতুন আরও একটি ক্যাম্প নির্মাণ করা হচ্ছে। এরই মধ্যে প্রায় ৪০০ বাড়িঘর নির্মাণ করা হয়েছে এখানে। নতুন এই ক্যাম্প নির্মাণ নিয়ে স্থানীয় জনগণের মাঝে চাপা উত্তেজনা বিরাজ করছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, রোহিঙ্গারা উখিয়া-টেকনাফের হাজার হাজার একর বন ও সমতল ভূমি দখল করে ইতিমধ্যে স্থানীয়দের জনজীবন অতিষ্ঠ করে তুলেছে। দীর্ঘদিনের ভোগদখলীয় ও নিজেদের তৈরি বাগান থেকে উচ্ছেদ করে আর্থিকভাবে চরম ক্ষতিগ্রস্ত করা হয়েছে স্থানীয়দের। এর আগে গত মাসের শেষ দিকে উখিয়ায় নতুন করে পাহাড় কেটে আরও একটি ক্যাম্প স্থাপনের কার্যক্রম নিয়ে  গ্রামবাসীর মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। প্রায় ডজনখানেক বুলডোজার দিয়ে পাহাড়ের পর পাহাড় কেটে পালংখালী ইউনিয়নের চৌখালী নামক স্থানে ওই ক্যাম্প স্থাপন করা হয়। ল াখালীর ক্যাম্প নির্মাণের সময় সামাজিক বনায়নের আওতায় তৈরি একটি বিশালায়তনে আগর বাগান ধ্বংস করা হয় বলে অভিযোগ উঠেছে। জনগণের চাপে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান এম গফুর উদ্দিন চৌধুরী বিতর্কিত ওই ক্যাম্প নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে পালংখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান গফুর উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘কতিপয় এনজিও’ সংস্থা নিজেদের আখের গোছানোর জন্য রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন যেমন দীর্ঘায়িত হচ্ছে, তেমনি ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের স্থানান্তর প্রক্রিয়াও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে তারা রোহিঙ্গাদের ইন্ধন জোগাচ্ছে যেন তারা মিয়ানমারে ফিরে না যায়। পাশাপাশি নতুন করে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশেও উৎসাহিত করা হচ্ছে। যাতে রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে এনজিওগুলো দীর্ঘ সময় দাতা সংস্থা প্রদত্ত অর্থকড়ি লুটপাট করতে পারে। এসব সংস্থার তদারকিতেই ল াখালী এলাকায় নতুন করে ক্যাম্প নির্মাণ করা হচ্ছে। এতে বিরান হয়ে যাচ্ছে অবশিষ্ট পাহাড়-প্রকৃতি ও স্থানীয়দের দখলি ভূমি ও বাগান। তাই এলাকাবাসীর স্বার্থে এবং তাদের টিকে থাকতে হলে এই ক্যাম্প নির্মাণে বাধা দেওয়া উচিত।’

স্থানীয় এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, দুই এনজিও একতা ও মুসলিম হ্যান্ডস প্রভাব বিস্তার করে স্থানীয় শতাধিক পরিবারের শত বছরের ভোগদখলীয় ফলজ, বনজ বাগান উচ্ছেদ করে  রোহিঙ্গাদের জন্য নতুন করে ক্যাম্প নির্মাণ করছে। তারা বলেন, কিছু দিন আগেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিতে স্থানীয়দের জায়গা-জমি ও পাহাড়ি বনভূমি যেন আর ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেদিকে প্রশাসনকে নজর দিতে বলেছেন। কিন্তু উখিয়ার ল াখালী ও চৌখালীতে আবার ক্যাম্প নির্মাণ করে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ উপেক্ষা করা হচ্ছে।  উখিয়ার ১৯ নং রোহিঙ্গা ক্যাম্প মাঝি (নেতা) আবু ওয়াহাব রাশেদ জানান, ‘দূরবর্তী ক্যাম্পগুলোতে যাতায়াত সুবিধার জন্য এডিবি সড়ক নির্মাণ কাজ শুরু করেছে। এতে অসংখ্য রোহিঙ্গার ঝুপড়ি বা বাড়িঘর সরিয়ে নিতে হবে। তাদের পুনর্বাসনের জন্য নতুন করে বাড়িঘর তৈরি করা হচ্ছে। সেখানে আগের কোনো বাগানের অস্তিত্ব ছিল না। সম্পূর্ণ একটি পরিত্যক্ত বনভূমিতে এ বাড়িগুলো নির্মাণ করা হয়েছে।’ শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার আবুল কালাম বলেন, ‘দেশি ও আন্তর্জাতিক চাপে রোহিঙ্গারা প্রত্যাবাসনের অপেক্ষায় আছে। এরই মধ্যে এডিবি ও ওয়ার্ল্ড ব্যাংক ক্যাম্প উন্নয়ন কাজ করবে এবং ঝুঁকিপূর্ণ রোহিঙ্গাদের সরিয়ে নেওয়ার জন্য নতুন করে বাড়িঘর নির্মাণ করা হয়েছে। এর অর্থ এই নয় যে, নতুন ক্যাম্প করা হচ্ছে। যারা ঝুঁকিতে আছে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিতও আমাদের করতে হবে।’ অন্যদিকে উখিয়ার চৌখালী নামক পাহাড়ি এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা ও বনকর্মীরা জানিয়েছেন, ওই এলাকার আগর বাগানটিতে বিপুল পরিমাণ আগর গাছ ছিল।

এ ছাড়া বিভিন্ন প্রজাতির ফলজ বাগান নিধন করে রোহিঙ্গা ক্যাম্প স্থাপন করায় পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এখানে প্রতিদিন নষ্ট হচ্ছে প্রাকৃতিক পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য। জানা গেছে, কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের উখিয়া রেঞ্জের আওতাধীন থাইংখালী বনবিটের মোছারখোলা টহল ফাঁড়ির চৌখালী নামক স্থানটিতে শতাধিক হেক্টর জমি রয়েছে আগর বাগানের। আগর বাগানের গাছপালা ধ্বংস করেই শতাধিক একর বনভূমি ও জোত জমিতে নতুন করে রোহিঙ্গা শিবিরটি স্থাপন করা হয়েছে। এ নিয়ে এলাকায় এখনো উত্তেজনা রয়েছে।

সর্বশেষ খবর