শুক্রবার, ৫ জুলাই, ২০১৯ ০০:০০ টা
শেষ নেই সামাজিক অপরাধের

ফতুল্লায় এবার ১০ ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে মাদ্রাসা শিক্ষক আটক

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি

ফতুল্লায় এবার ১০ ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে মাদ্রাসা শিক্ষক আটক

সিদ্ধিরগঞ্জের অক্সফোর্ড স্কুল শিক্ষকের বিরুদ্ধে ২০ শিক্ষার্থীকে ধর্ষণ ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই ফতুল্লার মাহমুদপুর এলাকায় ১০-এর অধিক শিক্ষার্থীকে ধর্ষণ ও যৌন নিপীড়নের অভিযোগে মাদ্রাসার এক অধ্যক্ষকে আটক করেছে র‌্যাব। গতকাল সকাল সাড়ে ১০টায় ফতুল্লার মাহমুদপুর পাকার মাথা এলাকায় ‘বায়তুল হুদা মাদ্রাসা’ নামের এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অভিযান চালায় র‌্যাব। এ সময় ১০-এর অধিক ছাত্রীকে ধর্ষণ ও যৌন হয়রানির অভিযোগে মাওলানা মো. আল আমিনকে আটক করা হয়। মো. আল আমিন ‘বায়তুল হুদা মাদ্রাসা’র প্রতিষ্ঠাতা, পরিচালক ও অধ্যক্ষ। আটকের সময় তার মোবাইল ও অফিসের কম্পিউটার থেকে অসংখ্য পর্নো ভিডিও জব্দ করা হয়েছে। তার বাড়ি কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার ভূঁইয়াপাড়া এলাকায়। র‌্যাব জানায়, মাদ্রাসার ভিতরে পরিবার নিয়ে থাকতেন অধ্যক্ষ আল আমিন। বাসায় তার স্ত্রী না থাকলে বা মাদ্রাসা ছুটি হলে নানা কৌশলে অধ্যক্ষ আল আমিন ছাত্রীদের মাদ্রাসায় ধর্ষণ, ধর্ষণের চেষ্টা ও যৌন হয়রানি করতেন। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ওই অধ্যক্ষ শিশুদের ধর্ষণ, ধর্ষণের  চেষ্টা ও  যৌন হয়রানির কথা স্বীকার করেছেন। র‌্যাব-১১-এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আলেপ উদ্দিন জানান, গত ২৭ জুন সিদ্ধিরগঞ্জের কান্দাপাড়া এলাকার অক্সফোর্ড স্কুলের ২০ শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের দায়ে গ্রেফতাকৃত শিক্ষক আরিফের নিউজ ও ভিডি ফুটেজ র‌্যাব-১১র ফেসবুক পেজে আপ করার পর তা ভাইরাল হয়। সেই ভিডিও চিত্র ও নিউজ ফতুল্লার মাহমুদপুর এলাকার বায়তুল হুদা মাদ্রাসার তৃতীয় শ্রেণির এক শিক্ষার্থী ও তার মা দেখেন। ওই সময় ৩য় শ্রেণির ওই ছাত্রী তার মাকে বলে, ‘আমার মাদ্রাসার হুজুরকে যদি টিভিতে দেখাতো তাহলে আমার ভালো লাগতো।’ তখন মা তাকে প্রশ্ন করলে ওই ছাত্রী জানায়, ‘আমার মাদ্রাসার হুজুরও আমার সঙ্গে বাজে কাজ করেছে।’

এরপর ওই ছাত্রীর মা ঘটনাটি অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আলেপ উদ্দিনকে জানান। তারপরই শুরু হয় এ বিষয়ে র‌্যাবের তদন্ত। এতে বেরিয়ে আসে লোমহর্ষক সব তথ্য। র‌্যাব জানায়, অধ্যক্ষ মাওলানা আল-আমিন দেড় বছর যাবত ২য় শ্রেণি থেকে ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত ১০-এর অধিক ছাত্রীকে বিভিন্ন সময় প্রলোভন দেখিয়ে, কাউকে ভয় দেখিয়ে ধর্ষণ ও যৌন নিপিড়ন করেছেন। তার মোবাইল ও অফিসের কম্পিউটারে অসংখ্য পর্নো ভিডিও পাওয়া গেছে। মূলত সে এগুলো দেখিয়েই শিশুদের উত্তেজিত করার চেষ্টা করতেন বলে আল-আমিন নিজেও প্রাথমিকভাবে স্বীকার করেছেন। এদিকে অভিযুক্ত ওই শিক্ষকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে গতকাল বিক্ষোভে ফেটে পড়েন ভুক্তভোগী ছাত্রীদের অভিভাবকসহ স্থানীয়রা। তারা ওই শিক্ষকের ফাঁসি চেয়ে শ্লোগান দেন। পরে বেলা সাড়ে ১২টায় ঘটনাস্থলে এসে উপস্থিত হন র‌্যাব-১১র অধিনায়ক (সিও) লে. কর্নেল কাজী শামসের উদ্দিন, ফতুল্লা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আসলাম হোসেন, পরিদর্শক (ইন্টেলিজেন্স) আজিজুল হক। পরে সেখানে এক সংক্ষিপ্ত সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব-১১র অধিনায়ক কাজী শামসের উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা দশের অধিক ছাত্রীকে ধর্ষণ ও যৌন নিপিড়নের অভিযোগে ফতুল্লার মাহমুদপুর এলাকার বায়তুল হুদা মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ মাওলানা আল-আমিনকে আটক করেছি। তার মোবাইল ও কম্পিউটার থেকে অসংখ্য পর্নো ভিডিও উদ্ধার করা হয়েছে। র‌্যাবের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি অপরাধ স্বীকার করেছেন। তার বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও পর্নোগ্রাফি আইনে দুটি পৃথক মামলা দায়ের হচ্ছে।’

সর্বশেষ খবর