শুক্রবার, ৫ জুলাই, ২০১৯ ০০:০০ টা

রহস্য উন্মোচন হয়নি সেই ব্যাংক ডাকাতির

অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ২২ লাখ ৯৯ হাজার ৯৬৯ টাকা লুট

মাহবুব মমতাজী

গত এক বছরেও রহস্য কাটেনি রাজধানীর প্রিমিয়ার ব্যাংকে ফিল্মিস্টাইলে ঘটে যাওয়া ডাকাতির ঘটনার। আশপাশের সিসিটিভির ফুটেজ সংগ্রহ করেও সেই দুর্বৃত্তকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। তবে ঘটনার সপ্তাহখানেক পর ব্যাংক কর্মকর্তারা সন্দেহভাজন একজনকে চিহ্নিত করে দিলেও তার কোনো সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়নি বলে তদন্ত কর্মকর্তারা জানান। গত বছরের ২০ আগস্ট বিকালে রাজধানীর বাড্ডা লিংক রোডে প্রিমিয়ার ব্যাংকের একটি শাখায় ডাকাতি হয়। এক দুর্বৃত্ত ব্যাংকের সব কর্মকর্তাকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ২২ লাখ ৯৯ হাজার ৯৬৯ টাকা লুট করে পালিয়ে যান। লুটের পর ওই ব্যক্তি ব্যাংকে থাকা সিসিটিভির ডিভিআরও নিয়ে যান বলে অভিযোগ করেন ব্যাংক কর্মকর্তারা। তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ব্যাংকটির ওই শাখায় সর্বশেষ হিসাব খুলেছেন এমন কয়েকজনের তথ্য সংগ্রহ করা হয়। এর মধ্যে একজনের ছবিসহ তথ্য ব্যাংকের অন্তত পাঁচজন কর্মকর্তাকে দেখানো হলে তারা ৯০ ভাগ নিশ্চিত করেন যে, ওই ব্যক্তিই সেই, যে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে টাকা লুট করে নিয়ে যায়। এর পরিপ্রেক্ষিতে সেই ব্যক্তিকে আটক করে পুলিশ। এরপর তাকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হলেও তিনি ঘটনার সঙ্গে নিজের সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি অস্বীকার করেন এবং জানান, ওইদিন সকাল থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত তিনি বিমানবন্দর থানায় পারিবারিক একটি মামলায় আটক ছিলেন। যাচাই করে তার দেওয়া তথ্যের সত্যতা খুঁজে পেলে পুলিশ তাকে ছেড়ে দেয়। পরে জানা যায়, আটক ওই ব্যক্তি এক্সপোর্ট-ইমপোর্ট ব্যবসায় জড়িত। কিন্তু এখনো পুরো ঘটনাটিকে রহস্যজনক মনে করছে পুলিশ। তাদের ভাষ্য, একটি ব্যাংকের সিসিটিভি সেন্ট্রাললি মনিটরিং করার পরও তারা ব্যাংকের ভিতর ও বাইরের কোনো ফুটেজ পুলিশকে সরবরাহ করতে পারেননি। আর অভিযোগ করা হচ্ছে, একজন ব্যক্তিই সবাইকে জিম্মি করে টাকা নিয়ে পালিয়ে যায়! ফলে সব হিসাব মেলানো কঠিন হয়ে পড়ছে। এতে ব্যাংকের কর্মকর্তারাও সন্দেহের বাইরে নন বলে জানিয়েছেন তদন্ত কর্মকর্তারা।

মামলার এজাহারসূত্রে জানা যায়, ঘটনার দিন বিকাল পৌনে ৪টার দিকে একজন অজ্ঞাত ব্যক্তি ব্যাংকটির শাখা ব্যবস্থাপক ফজলুল হকের কক্ষে সরাসরি ঢুকে পড়েন। এ সময় তার মুখে ক্লিনিক্যাল মাস্ক ও কাঁধে ব্যাগ ঝোলানো ছিল। আনুমানিক ৩৫ বছর বয়সী লোকটি একটি কাগজ দেখাবেন বলে ব্যাগ থেকে একটি পিস্তল ও ছুরি বের করে শাখা ব্যবস্থাপককে জিম্মি করে ফেলেন। বাইরে তার আরও লোক অবস্থান করছে জানিয়ে বলেন, কোনোরূপ সাড়া শব্দ করলে শাখা ব্যবস্থাপককে মেরে ফেলবেন। যারা লেনদেন করতে এসেছিলেন তাদের বের করে দিয়ে ব্যাংকের সব কর্মকর্তাকে এক জায়গায় জড়ো হতে বলেন। পরে সবাইকে ব্যাংকের লকার রুমে ঢুকিয়ে বাইরে থেকে লাগিয়ে দিয়ে চলে যান। এরপর লকার রুম থেকে মোবাইল ফোনে বিষয়টি তারা ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে জানান। খবর পেয়ে বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে তাদের উদ্ধার করে বাড্ডা থানা পুলিশ। উদ্ধারের পর শাখা ব্যবস্থাপক ক্যাশ পরীক্ষা করে টাকা লুটের বিষয়টি নিশ্চিত হন। যাওয়ার সময় ওই ব্যক্তি সিসি ক্যামেরার রেকর্ডিংয়ের ডিভিআরটিও খুলে নিয়ে যান বলে জানান। এ মামলা প্রথমে বাড্ডা থানা পুলিশ তদন্ত করে। কয়েকদিন পর তা গোয়েন্দা পুলিশে (ডিবি) হস্তান্তর করা হয়। এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি-উত্তর) উপকমিশনার (ডিসি) মশিউর রহমান এই প্রতিবেদককে জানান, ‘ঘটনাটি আমাদের তদন্তাধীন রয়েছে। তবে এখনো ইতিবাচক কোনো ফল বের করা যায়নি।’

সর্বশেষ খবর