শুক্রবার, ৫ জুলাই, ২০১৯ ০০:০০ টা

সীমানা-বিরোধে নরসিংদীতে তিন মাস বন্ধ নদী খনন কাজ

নরসিংদী প্রতিনিধি

সীমানা নিয়ে বিরোধ আর আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় নরসিংদীর বেলাবতে বন্ধ হয়ে গেছে নদী খনন (ড্রেজিং) প্রকল্পের কাজ। ফলে সরকারের বেঁধে দেওয়া সময়ে প্রকল্পের কাজ শেষ করতে না পারায় বিঘিœত হচ্ছে উন্নয়নের অগ্রযাত্রা। অন্যদিকে লোকসান গুনতে হচ্ছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন (বিআইডব্লিউটিএ) কর্তৃপক্ষ বলছে, আন্ত মন্ত্রণালয়ের সভার পর স্থানীয় প্রশাসনকে সীমানা নির্ধারণসহ সার্বিক সহযোগিতার জন্য নির্দেশ দেওয়া সত্ত্বেও জেলা ও উপজেলা প্রশাসন প্রকল্প কাজে কোনো সহায়তা করছে না। পরিণতিতে তিন মাস ধরে ড্রেজিং কাজ বন্ধ রয়েছে। অসহযোগিতার অভিযোগ অস্বীকার করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, বিআইডব্লিউটিএ অপরিকল্পিতভাবে কাজ শুরু করেছে। খনন এলাকা সঠিকভাবে নির্ধারণ করা হয়নি। ফলে স্থানীয়রা বিভিন্ন সময় কাজে বাধা দিচ্ছে। তবে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি কমিটি করা হয়েছে।

বিআইডব্লিউটিএ সূত্রে জানা যায়, অভ্যন্তরীণ নৌপথের ৫৩টি রুটে ক্যাপিটাল ড্রেজিংয়ের আওতায় প্রথম পর্যায়ে ২৪টি নৌপথ খনন শুরু হয়। ভৈরব-কটিয়াদী নৌপথে ৮৩ লাখ ঘনমিটার খননের জন্য চুক্তি হয় খুলনা শিপইয়ার্ড লি. ও নবারুন ট্রেডার্স লিমিটেডের মধ্যে। ১১১ কোটি টাকার খননকাজের মধ্যে নরসিংদীর বেলাব ও পোড়াদিয়া এলাকায় আড়িয়াল খাঁ নদীর প্রায় ৪০ কিলোমিটার খনন করা হবে। এর মধ্যে প্রায় ২৯ কিলোমিটার খনন হয়েছে। কিন্তু সীমানাসংক্রান্ত জটিলতার কারণে নতুন বাজার, রাধাখালী ব্রিজ ও মনোহরদীর বাউলারচর এলাকায় খননকাজ বন্ধ রয়েছে। সিএস ও আরএস পর্চায় জটিলতার কারণে বিভিন্ন সময় স্থানীয়রা নদী খননে বাধা দিচ্ছেন। বৃহস্পতিবার বিআইডব্লিউটিএর সহকারী প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ সাইদুর রহমানের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল প্রকল্পের কাজ পরির্শনে আসে। তারা বেলাব ও পোড়াদিয়া আড়িয়াল খাঁ নদী খননে বিভিন্ন পয়েন্ট ঘুরে দেখেন। একই সঙ্গে নদীর গভীরতা মেপে দেখেন। প্রতিনিধি দলের নেতা সাইদুর রহমান তিন মাস ধরে প্রকল্পের কাজ বন্ধ থাকায় হতাশা প্রকাশ করেন।

তিনি বলেন, বেশির ভাগ এলাকায় কাজ সম্পন্ন হয়ে গেছে। কিছু সংখ্যক এলাকা বাকি রয়েছে। সেগুলো খনন করতে গেলে স্থানীয় লোকজন বাধা দিচ্ছে। তিনি বলেন, কালের বিবর্তনে নদীর প্রবাহ পরিবর্তনের কারণে সীমানা নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। তাছাড়া যুগ যুগ ধরে নদী খনন করা হয়নি। পলি পড়ে নদী ভরাট হয়ে গেছে। এই সুযোগে স্থানীয় লোকজন এসব জায়গা দখল করে নিয়েছে। এখন নদী খনন করতে গেলে তারাই বাধা দিচ্ছে। সমস্যা প্রতিকারে আন্ত মন্ত্রণালয়ের যে সভা হয়, সেই সভার পর সেখানে সীমানা নির্ধারণ করে দেওয়ার জন্য মন্ত্রণালয় থেকে স্থানীয় প্রশাসনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু অদৃশ্য কারণে জেলা ও  উপজেলা প্রশাসন নীরব। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নবারুন ট্রেডার্স লি.র পরিচালক ইমতিয়াজ রশিদ বলেন, তিন মাস ধরে কাজ বন্ধ। ফলে আমাদের কোটি কোটি টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে। সরকারের বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করা যাচ্ছে না। বেলাব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শামীমা শরমিন বলেন, বিআইডব্লিউটিএ অপরিকল্পিতভাবে কাজ শুরু করেছে। খনন এরিয়াও সঠিকভাবে নির্ধারণ করা হয়নি। তাছাড়া এখানে জনস্বার্থ রয়েছে। যার ফলে স্থানীয়রা বিভিন্ন সময় কাজে বাধা দিচ্ছে। বেলাব এবং মনোহরদী দুই উপজেলার লোকজনের স্বার্থ রয়েছে। তাই দুই পক্ষই মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছে। ফের কাজ শুরু করতে একটু সময় লাগছে। তবে কাজ এগিয়ে নেওয়ার জন্য জেলা প্রশাসকের উদ্যোগে একটি কমিটি করা হয়েছে। ইউএনও মনে করেন, আগামী সপ্তাহ নাগাদ কাজ শুরু করা সম্ভব হবে।

সর্বশেষ খবর