শনিবার, ৬ জুলাই, ২০১৯ ০০:০০ টা
শি জিন পিংয়ের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর বৈঠক

মিয়ানমারের নেতাদের সঙ্গে কথা বলবে চীনা কমিউনিস্ট পার্টি

কূটনৈতিক প্রতিবেদক

মিয়ানমারের নেতাদের সঙ্গে কথা বলবে চীনা কমিউনিস্ট পার্টি

চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিন পিংয়ের সঙ্গে বৈঠক করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। চীনের কমিউনিস্ট পার্টির প্রভাবশালী  নেতা ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী সং তাও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে মিয়ানমারের নেতাদের সঙ্গে কথা বলবে চীনা কমিউনিস্ট পার্টি। এদিন চীনের জাতীয় বীরদের স্মৃতিস্তম্ভে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। পাঁচ দিনের সফর শেষে আজ দেশে ফিরবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বার্তা সংস্থাগুলোর প্রতিবেদন অনুসারে, শুক্রবার স্থানীয় সময় বিকাল ৪টার দিকে প্রধানমন্ত্রী বেইজিংয়ের তিয়েনআন মেন স্কয়ারে পৌঁছে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। শুদ্ধা নিবেদনের শুরুতেই দুই দেশের জাতীয় সংগীত বাজানো হয়। এর পরে বিউগলে বাজানো হয় করুণ সুর। শ্রদ্ধা নিবেদনের পর প্রধানমন্ত্রী কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন।  উনবিংশ ও বিংশ শতাব্দীতে চীন বিপ্লবে আত্মত্যাগকারীদের স্মৃতির উদ্দেশ্যে তিয়েনআন মেন স্কয়ারে স্মৃতিসৌধ বানানো হয়। পরে বেইজিংয়ের দিয়ায়োতাই স্টেট গেস্ট হাউসে প্রেসিডেন্ট শি জিন পিংয়ের সঙ্গে বৈঠক হয়। শি জিন পিং ও শেখ হাসিনার বৈঠকের পর পররাষ্ট্রমন্ত্রী সং তাও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করেন। রাতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সম্মানে দেওয়া শি জিন পিংয়ের নৈশভোজেও অংশ নেন শেখ হাসিনা। বার্তা সংস্থা বাসসের খবরে বলা হয়, চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী সং তাও  নিশ্চিত করেছেন যে, তার দল কমিউনিস্ট পার্টি অব চায়না (সিপিসি) সমঝোতার ভিত্তিতে দীর্ঘদিনের রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর অং সান সু চি ও অন্য নেতৃবৃন্দের সঙ্গে যোগাযোগ করবে। তিনি বলেন, ‘সমঝোতার মাধ্যমে রোহিঙ্গা সংকটের সমাধানে আমরা অং সান সু চিসহ মিয়ানমারের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আলোচনা করব।’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশে ব্যাপক উন্নয়নের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করে সং তাও আরও আশ্বস্ত করেন, বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় চীনের সমর্থন অব্যাহত থাকবে।

তিনি বলেন, ‘দুই দেশের মধ্যে বর্তমানে অত্যন্ত বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বিরাজ করছে এবং বাংলাদেশের উন্নয়ন অভিযাত্রায় আমরা আমাদের সমর্থন অব্যাহত রাখব।’ সিপিসি নেতা বাংলাদেশের অত্যন্ত বেশি জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনের উল্লেখ করে একে ‘বিশ্বে দুর্লভ’ বলে বর্ণনা করেন। এর জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ বিগত অর্থবছরে ৮ দশমিক ১ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। অপরদিকে চলতি অর্থবছরে ৮ দশমিক ২ শতাংশ জিডিপি অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে।  সিপিসি ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মধ্যকার সম্পর্ক আরও গভীর হবে বলে সং তাও আশা প্রকাশ করেন। কেবলমাত্র উচ্চপর্যায়ে নয়, বিভিন্ন পর্যায়ের আওয়ামী লীগ প্রতিনিধি দল চীন সফর করবে বলে আশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘এই সফরের মাধ্যমে দুটি দলের মধ্যকার বন্ধন আরও দৃঢ় হবে।’ এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, শিগগিরই একটি সিপিসি প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ সফর করবে। চীনকে বাংলাদেশের উন্নয়ন অংশীদার হিসেবে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও সিপিসির মধ্যে গভীর সম্পর্ক বিদ্যমান। তিনি ১৯৯৩ সালে বিরোধী দলের নেতা হিসেবে চীনে তার প্রথম সফরকে স্মরণ করে বলেন, সফরের পর থেকেই উভয় পক্ষের মধ্যে সম্পর্কের ভিত্তি মজবুত হয়। শেখ হাসিনা ১৯৫২ ও ১৯৫৭ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের চীন সফরের কথা স্মরণ করেন। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু তাঁর ভ্রমণের কথায় ভবিষ্যতে একটি ‘নতুন চীন’ তৈরি হচ্ছে বলে উল্লেখ করেছিলেন। এখন আমি সেটাই দেখছি বঙ্গবন্ধু ভ্রমণের পর যে পূর্বাভাস দিয়েছিলেন।’ শেখ হাসিনা বলেন, তিনি এখন বঙ্গবন্ধুর ডায়েরি থেকে ‘নিউ চীন’ নামে একটি বই সম্পাদনা করছেন। তিনি বলেন, ‘চীন নিয়ে বঙ্গবন্ধুর ভবিষ্যদ্বাণী সম্বলিত বইটি শিগগিরই প্রকাশিত হবে।’ সিপিসি নেতা এই বইটি চীনা ভাষাতে অনুবাদ করার আগ্রহ প্রকাশ করে বলেন, তারা প্রকাশ করার পর চীনা জনগণের মধ্যে বইটি বিতরণ করবে। প্রধানমন্ত্রী গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের ৭০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে চীনা জনগণ ও চীনা কমিউনিস্ট পার্টিকে তার আন্তরিক অভিনন্দন জানান। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি বিনিয়োগ ও শিল্পবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মুহাম্মদ ফারুক খান, পররাষ্ট্র সচিব মো. শহিদুল হক ও চীনে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এম ফজলুল করিম অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন।

সর্বশেষ খবর