শনিবার, ৬ জুলাই, ২০১৯ ০০:০০ টা

ফুলের রাজ্য যশোরের গদখালী

শত কোটি টাকার ফুল রপ্তানির সম্ভাবনা

নিজস্ব প্রতিবেদক, যশোর

ফুলের রাজ্য যশোরের গদখালী

যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার একটি ছোট ইউনিয়ন গদখালী। আশির দশকের শুরুতে সেখানে বাণিজ্যিকভাবে ফুল চাষ শুরু হয়। কয়েক দশকে সেই ফুল চাষে যশোর জেলাকে অন্যরকম পরিচিতি দিয়েছে। গদখালী এখন ফুলের রাজ্য। দেশ-বিদেশের মানুষ যশোরকে চিনছে সেই ফুল দিয়ে। গদখালীর ফুল চাষ ছড়িয়ে পড়েছে পুরো জেলায়। এ জেলার প্রায় ১৫০০ হেক্টর জমিতে এখন বছরজুড়ে চাষ হচ্ছে অন্তত ৯ জাতের বাহারি ফুল। এর সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িয়ে আছে কয়েক লাখ মানুষের জীবন-জীবিকা। উৎপাদন খরচ কম, লাভ বেশি, সারা বছরই চাষ করা যায়। ফলে ফুল চাষে জ্যামিতিকভাবে আগ্রহ বাড়তে থাকে চাষিদের। সৃষ্টি হয় চাহিদা। তবে জোগানের ক্ষেত্রে কিছুটা বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। ক্ষতিগ্রস্ত হতে থাকেন ফুল চাষিরা। বিষয়টি নিয়ে ভাবতে শুরু করে বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটি। সংস্থাটির সভাপতি আবদুর রহিম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ফুলের চাহিদা সবচেয়ে বেশি থাকে। এই সময়ে যাতে বাজারে ফুল ওঠানো যায়, তা মাথায় রেখেই সব চাষি ফুল চাষ করেন। সে সময় এত বেশি ফুল বাজারে ওঠে যে দাম কমে যায়। চাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত হন। আবার ফুল যে তারা সংরক্ষণ করবেন সে ব্যবস্থাও নেই। গতানুগতিক পদ্ধতিতে পরিবহন বাসের ছাদে অথবা অন্য পণ্যের সঙ্গে ট্রাকে ফুল ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠানো হয়। এতে ফুলের গুণগত মান নষ্ট হয় এবং দাম কমে যায়। বেশির ভাগ ফুলের বীজ চাষিরা নিজেরাই সংরক্ষণ করেন ও চারা উৎপাদন করেন। কিন্তু এসব বীজ সংরক্ষণের জন্য আলাদা কোনো হিমাগার নেই। আলুসহ অন্যান্য ফসল রাখার হিমাগারে একসঙ্গে ফুলের বীজ সংরক্ষণ করা হয়। কিন্তু অন্য ফসল সংরক্ষণের তাপমাত্রা ও ফুলবীজ সংরক্ষণের তাপমাত্রা এক নয়। এতে ফুলবীজের গুণগত মান নষ্ট হয়। এসব কারণে ফুল চাষ, বীজ ও ফুল সংরক্ষণ, গ্রেডিং, প্যাকেজিং ও পরিবহনের জন্য একটি সমন্বিত ব্যবস্থা গড়ে তুলতে সরকারের প্রতি দাবি জানিয়ে আসছিলেন বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটির নেতারা। এ ব্যাপারে দাতা সংস্থাগুলোর সঙ্গেও তারা দেন-দরবার করেন। পরে ৪০ কোটি টাকার দুটি প্রকল্প পাস হয়। ইউএসএআইডির অর্থায়নে এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে এলজিইডি। আবদুর রহিম বলেন, প্রকল্প দুটির আওতায় ফুল ও ফুলবীজ সংরক্ষণের জন্য একটি বিশেষায়িত হিমাগার ও ফ্লাওয়ার প্রসেসিং ইউনিট ও মার্কেট এবং ১৩ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক তৈরির কাজ চলমান রয়েছে। কাঁচা ফুলের ব্যবসায়ীরা বলছেন, বিভিন্ন দেশ থেকে ফুল ব্যবসায়ীরা প্রায়ই গদখালী পরিদর্শনে আসেন। তারা ফুলের গুণগত মান দেখে সন্তুষ্ট হন। কিন্তু এখানে ফুলের গ্রেডিং, প্যাকেজিং ও সংরক্ষণের ব্যবস্থা না থাকায় তারা আর উৎসাহিত হন না। ফ্লাওয়ার সোসাইটির সভাপতি আবদুর রহিম বলেন, ‘যশোরের ফুল চাষিরা এখন বছরে আড়াইশ থেকে তিনশ কোটি টাকার ফুল উৎপাদন করছেন। গদখালীতে কোল্ডস্টোরেজ ও ফ্লাওয়ার প্রসেসিং ইউনিটের কাজ শেষ হলে ফুল রপ্তানির সুযোগ তৈরি হবে। এতে ফুলের দাম যেমন বাড়বে, বাড়বে ফুল চাষের পরিধিও। সেক্ষেত্রে আমরা আশা করছি, যশোরে তখন ৫০০ থেকে সাড়ে ৫০০ কোটি টাকার ফুল উৎপাদন হবে। অর্ধেক ফুল দেশের বাজারে বিক্রির পর বাকি ফুল অর্থাৎ আড়াইশ থেকে তিনশ কোটি টাকার ফুল বিদেশে রপ্তানি করা সম্ভব হবে’। তিনি বলেন, ইউএসএআইডি শুধু অবকাঠামো তৈরি করে দিচ্ছে। এখানে প্রয়োজনীয় ইকুইপমেন্ট আমাদের উদ্যোগে সংগ্রহ করতে হবে। ইউএসএআইডি ও এলজিইডির এ কাজ আগামী ডিসেম্বর নাগাদ শেষ হবে। সেক্ষেত্রে কোল্ডস্টোরেজ ও ফ্লাওয়ার প্রসেসিং ইউনিটের কাজ আগামী বছর জুলাই নাগাদ শুরু করা সম্ভব হবে। গদখালী বাজারের ফুল ব্যবসায়ীরা জানান, এ বাজারে গোলাপ এক টাকা পিস, একশ রজনীগন্ধা একশ থেকে দেড়শ টাকা, এক হাজার গাঁদা দুইশ টাকা, গ্লাডিওলাস ছয় থেকে আট টাকা, জারবেরা তিন থেকে আট টাকায় বিক্রি হয়। ব্যবসায়ীরা জানান, যশোরের ফুল চাষিরা বেশির ভাগ ফুলের বীজ সংরক্ষণ ও চারা নিজেরাই উৎপাদন করে থাকেন। কিন্তু জারবেরা ও গাঁদাসহ কয়েকটি ফুলের বীজ ও চারা এখনো আমদানি করতে হয়। দীর্ঘদিন ধরে তারা গদখালীতে একটি ফুল গবেষণা কেন্দ্র স্থাপনের জন্য সরকারের কাছে দাবি করে আসছেন। ফ্লাওয়ার সোসাইটির সভাপতি আবদুর রহিম বলেন, গদখালীতে ফুল গবেষণা কেন্দ্র স্থাপনের বিষয়টি কৃষি মন্ত্রণালয় অনুমোদন করেছে। এখন তা পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে।

সর্বশেষ খবর