শনিবার, ৬ জুলাই, ২০১৯ ০০:০০ টা

খুলনায় বখাটেরা বেপরোয়া

মহল্লায় মহল্লায় গড়ে উঠেছে কিশোর গ্যাং চলছে ধর্ষণ ছিনতাইসহ মাদকের কারবার

সামছুজ্জামান শাহীন, খুলনা

আলাদা ঘটনায় গত ২৯ জুন খুলনার পশ্চিম বানিয়াখামার এলাকায় এক কিশোরীকে ধর্ষণ করে উঠতি বয়সী ৯ বখাটে। বন্ধুর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার ছবি দেখিয়ে ব্ল্যাকমেইল করে ওই কিশোরীকে ধর্ষণ করা হয়। এর ছবি মোবাইলে ধারণ করে তা ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়ারও হুমকি দেওয়া হয়। পরে এ ঘটনায় জড়িত ৭ জনকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে।

এর আগে ২৮ জুন নগরীর বয়রা শ্মশান ঘাট এলাকায় ১৩ বছরের এক শিশুকে ধর্ষণ করা হয়। শিশুটির বাবা-মা বাড়িতে না থাকার সুযোগে একই এলাকার বখাটে যুবক ওই শিশুটিকে ধর্ষণ করে। এ ঘটনা কাউকে জানালে মেরে ফেলার হুমকিও দেওয়া হয়। একইদিন সোনাডাঙ্গা বাইপাসে স্কুলগামী এক কিশোরকে ইট দিয়ে থেঁতলে রক্তাক্ত করে কয়েকজন বখাটে। পরে এলাকাবাসীর প্রতিরোধের মুখে তারা পালিয়ে যায়। ধারাবাহিক এসব ঘটনায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন অভিভাবক ও মানবাধিকার কর্মীরা।  অপরাধ বিশেষজ্ঞদের দাবি, খুলনায় রাজনৈতিক  প্রভাব বিস্তার, ইয়াবা বিক্রি, জমি দখল, টেন্ডার ও চাঁদাবাজিতে কিশোর-তরুণদের ব্যবহার করছে স্বার্থান্বেষী চক্র। গডফাদারদের ছত্রছায়ায় পুলিশের সঙ্গে সুসম্পর্ক রেখে ক্ষমতা প্রদর্শন ও সহজে টাকা আয়ের নেশায় বেপরোয়া হয়ে উঠছে অপরাধীরা। পাড়া-মহল্লায় এ ধরনের অসংখ্য কিশোর গ্যাংয়ের অস্তিত্ব পেয়েছে গোয়েন্দা সংস্থা। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২৯ জুন পশ্চিম বানিয়াখামার এলাকায় কিশোরীকে গণধর্ষণে আটককৃত বখাটেদের সঙ্গে টেন্ডারবাজিতে জড়িত প্রভাবশালী এক যুবলীগ নেতার সম্পৃক্ততা রয়েছে। এর আগে মাদকসহ দুই ছাত্রনেতা গ্রেফতার হওয়ার পরও রাজনৈতিক নেতাদের সম্পৃক্ততার কথা জানা যায়। অভিযোগ রয়েছে, রাজনৈতিক প্রভাবে জামিনে বেরিয়ে এসে বখাটেরা আবারো একই অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে।

বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থা খুলনার সমন্বয়কারী অ্যাডভোকেট মোমিনুল ইসলাম বলেন, মামলার দীর্ঘসূত্রতায় অপরাধ করার পরও শাস্তি হয় না। সেইসঙ্গে সামাজিক অস্থিরতা ও মাদকের সহজলভ্যতার কারণেও অপরাধ প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে। তিনি বলেন, এসব অপরাধী যারা তৈরি করছেন, যারা এদের গডফাদার- তাদের খুঁজে বের করতে হবে। তাদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে।

তবে মানবাধিকার কর্মী শামীমা সুলতানা শিলু মনে করেন, রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে অপরাধীদের সরাসরি যোগাযোগ নেই। অনেকসময় প্রভাব বিস্তার, মহড়া-মিছিল, টেন্ডারবাজি ও মাদক বিক্রিতে কিশোর-তরুণদের কাজে লাগানো হয়। এটা অনৈতিক। এক্ষেত্রে পুলিশের শক্ত ভূমিকা নেওয়ার সুযোগ আছে। যেখানে অপরাধ সেখান থেকেই অপরাধের মূল উৎপাটন করতে হবে। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে পুলিশের দুর্বল চার্জশিটের কারণে অপরাধীরা জামিনে বেরিয়ে আসে। 

মানবাধিকার সংগঠনের তথ্য অনুযায়ী, খুলনায় প্রতিমাসে গড়ে ২০টির বেশি নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে। যার মধ্যে শিশু হত্যা, ইভ টিজিং, ধর্ষণ, নারী নির্যাতন ও পাচারের ঘটনা রয়েছে। খুলনা সরকারি সুন্দরবন আদর্শ কলেজের মনোবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক প্রকাশ চন্দ্র অধিকারী বলেন, বিকৃত মানসিকতা থেকে তরুণরা অপরাধের সঙ্গে যুক্ত হয়। পারিবারিকভাবে স্বাবলম্বী না হওয়ায় মাদক বিক্রিতে সহজে লাভবান হওয়ায় তারা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে।

এদিকে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠা অপরাধের লাগাম টানতে পরিবার, সমাজ ও প্রশাসনের সম্মিলিত প্রচেষ্টার ওপর জোর দিয়েছেন বিশ্লেষকরা। খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার খন্দকার লুৎফুল কবির বলেন, মনস্তাত্ত্বিকভাবে শুধু কিশোররা নয় বয়স্করাও অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। অপরাধ দমনে পুলিশ তৎপর রয়েছে। যে কারণে আসামিদের সঙ্গে সঙ্গে গ্রেফতার করা হয়েছে। তিনি বলেন, অপরাধের সঙ্গে নীতি- নৈতিকতা জড়িয়ে আছে। তাই শুধু পুলিশ নয়, পিতা-মাতা অভিভাবকদের অপরাধ দমনে এগিয়ে আসতে হবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর