শনিবার, ৬ জুলাই, ২০১৯ ০০:০০ টা

মোবাইল ফোন মৃত্যুর ফাঁদ

দুর্ঘটনায় বেশি পড়ছে কিশোর-তরুণরা

জিন্নাতুন নূর

মোবাইল ফোন মৃত্যুর ফাঁদ

মোবাইল ফোন ছাড়া এখন মানুষের চলেই না। ব্যস্ত জীবনকে সহজ করতে প্রয়োজনীয় এই যন্ত্রটির বিকল্প যেমন নেই আবার এর অতিরিক্ত ব্যবহার এবং ব্যবহারের অসাবধানতায় দিন দিন বাড়ছে দুর্ঘটনা ও মৃত্যুঝুঁকি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অতিরিক্ত ব্যবহারে মোবাইল ফোন বিস্ফোরিত হয়ে দ্বগ্ধ হচ্ছে মানুষ। আবার কানে মোবাইলের হেডফোন থাকায় অন্যমনস্ক ব্যবহারকারীরা প্রায়ই রেললাইন ও সড়ক দুর্ঘটনার কবলে পড়ছে। বিপদজ্জনক ভঙ্গিতে সেলফি তুলতে গিয়েও কখনো কখনো ব্যবহারকারীরা দুর্ঘটনায় পড়ে মৃত্যুবরণ করছে। রেলওয়ে পুলিশ সূত্রে জানা যায়, সারা দেশে কম-বেশি দুর্ঘটনা ঘটলেও ঢাকা থেকে শুরু করে টাঙ্গাইল পর্যন্ত রেললাইন এলাকায় মোবাইল ফোন সৃষ্ট  দুর্ঘটনাগুলো বেশি ঘটছে। আর দুর্ঘটনার শিকার বেশি হচ্ছে কম বয়সী তরুণ ও কিশোররা। দুর্ঘটনার ধরন, রেলওয়ে পুলিশ এবং চিকিৎসকদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, কানে মোবাইলের হেডফোন লাগিয়ে রাস্তায় অসাবধানে চলাফেরা, বিপদজনকভাবে মোবাইল দিয়ে সেলফি তোলা এবং মোবাইল ফোনে চার্জ দেওয়া অবস্থায় কথা বলতে গিয়ে বিস্ফোরণজনিত দুর্ঘটনা থেকে ব্যবহারকারীরা মারাত্মক আহত ও নিহত হচ্ছে। রাজবাড়ীতে গত ১৪ জুন নিমতলা বিশ্বাসপাড়া এলাকায় মাদ্রাসাছাত্র আবু বক্কর (২৩) রেললাইনের ওপর দিয়ে কানে মোবাইল ফোনের হেডফোন লাগিয়ে যাওয়ার সময় ট্রেনের ধাক্কায় মারা যায়। চলতি বছরের ২৫ জানুয়ারি রাজবাড়ীর কালুখালীতে গঙ্গানন্দপুর এলাকায় একইভাবে হেডফোন লাগিয়ে রেললাইনে বসে গান শুনছিল দুই কিশোর অন্তু ও সাকিব। অতঃপর ট্রেনের ধাক্কায় এই দুই কিশোরের মৃত্যু ঘটে।

বাংলাদেশ রেলওয়ে সার্কেল (ঢাকা)-এর সহকারী পুলিশ সুপার ওমর ফারুক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, মোবাইল ফোন ব্যবহারে রেললাইনে যে দুর্ঘটনা ঘটে তা প্রতিরোধে আমরা মাসে তিন থেকে চারটি সভায় আলোচনা করি। এ ব্যাপারে কমিউনিটি পুলিশও সচেতন আছে। সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য গত ঈদে লিফলেট বিলি করেছি, আবারও করব। তিনি জানান, সাধারণত শহর এলাকায় কমবয়সী কিশোর ও তরুণরাই এ ধরনের দুর্ঘটনার শিকার বেশি হচ্ছে।

এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, মোবাইল ফোনে কথা বলা ও কানে হেডফোন লাগিয়ে গান শুনতে গিয়ে যতগুলো দুর্ঘটনা ঘটেছে তার অধিকাংশই রেললাইনকেন্দ্রিক। অসচেতনভাবে রেললাইন দিয়ে চলাফেলার জন্য এই দুর্ঘটনাগুলো ঘটছে। ঢাকা রেলওয়ে থানার সূত্রে, তাদের আওতাধীন নারায়ণগঞ্জ থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু পর্যন্ত মোট ১৪২ কি.মি. রেলপথে ২০১০ সাল থেকে ২০১৮ সালের মে পর্যন্ত সময়ে কানে মোবাইল ফোনের হেডফোন দিয়ে চলাচল করতে গিয়ে ৪৮৪ জনের মৃত্যু ঘটে। আর দুর্ঘটনায় মৃতদের মধ্যে নারী-পুরুষ সব বয়সের মানুষই ছিল। আবার রাজধানীতে চলতি জানুয়ারিতে খিলক্ষেত এলাকায় রেললাইনে দাঁড়িয়ে মোবাইল ফোন দিয়ে সেলফি তুলতে গিয়ে ট্রেনের ধাক্কায় শিপন (১৭) নামের এক কিশোরের মৃত্যু হয়। এ ছাড়া গত ৮ এপ্রিল নওগাঁর আত্রাইয়ের আহসানগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশন এলাকায় রেললাইনে দাঁড়িয়ে একইভাবে সেলফি তুলতে গিয়ে সানজিদ (১২) নামের কিশোরের ট্রেনের ধাক্কায় মৃত্যু হয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, মোবাইল ফোন বিস্ফোরণের প্রধান কারণ হচ্ছে নিম্নমানের ব্যাটারি। এ ছাড়া ফোনে চার্জ দেওয়া অবস্থায় কথা বলা ও ইন্টারনেট ব্যবহারের জন্যও ফোনটি বিস্ফোরিত হতে পারে। গত ২২ জুন হবিগঞ্জের বাহুবল উপজেলার চকেরগাও গ্রামে চার্জ দেওয়া অবস্থায় মোবাইল ফোনে কথা বলার সময় তা বিস্ফোরিত হয়ে সাজু মিয়ার (১৩) মৃত্যু হয়। গত ৩০ এপ্রিল মাদারীপুরের কালকিনিতে মোবাইল ফোন বিস্ফোরণে নবীন নামের ১২ বছর বয়সী আরেক কিশোরের কোমর পর্যন্ত ঝলসে যায়। 

শেখ হাসিনা ন্যাশনাল বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের প্রধান সমন্বয়ক ডা. সামান্ত লাল সেন জানান, বিগত কয়েক মাসে মোবাইল ফোন বিস্ফোরণে আহত হয়ে বেশ কয়েকজন রোগী আমাদের কাছে চিকিৎসা নিতে এসেছে। এদের মধ্যে কয়েকজন মারা গিয়েছে। তিনি বলেন, এ ধরনের বিস্ফোরণে প্রধানত মুখম ল, কান ও শ্বাসনালি গুরুতরভাবে পুড়ে যায়। বার্ন ইউনিটের প্রাপ্ত তথ্যে বিস্ফোরণে আহতরা মোবাইলে চার্জ দিয়ে কথা বলার সময়ই বেশি বিস্ফোরণ ঘটে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর