শনিবার, ৬ জুলাই, ২০১৯ ০০:০০ টা

স্টিকার বদলে মেয়াদোত্তীর্ণ পণ্য ফের বাজারে

শামীম আহমেদ

ভোগ্যপণ্যের মোড়কের গায়ে অমোচনীয় কালিতে উৎপাদনের তারিখ ও মেয়াদ লেখার নিয়ম থাকলেও অনেকেই তা মানছেন না। কাগজের স্টিকার দিয়ে লাগানো হচ্ছে মেয়াদের তারিখ। পরে স্টিকার বদলে ফের বাজারে ছাড়া হচ্ছে মেয়াদোত্তীর্ণ পণ্য। এই অনিয়ম সবচেয়ে বেশি হচ্ছে বেকারি পণ্যে। এ ছাড়া অমোচনীয় কালি দিয়ে মেয়াদ লেখার পর মোড়ক বদলেও বিক্রি হচ্ছে অনেক মেয়াদোত্তীর্ণ পণ্য। আবার নষ্ট পাউরুটি, বিস্কুট ফেরত নিয়ে সেগুলো মিশিয়েই তৈরি হচ্ছে নতুন পণ্য। ফলে মোড়কের মেয়াদ দেখে কিনেও প্রতারিত হচ্ছেন ক্রেতা। নষ্ট খাদ্যপণ্য খেয়ে নিজের অজান্তেই আক্রান্ত হচ্ছেন নানা রোগে। সরজমিনে বাজার ঘুরে এমন অসংখ্য প্রতিষ্ঠানের বেকারি পণ্যের মোড়কে অমোচনীয় কালিতে লেখা উৎপাদন ও মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ দেখা যায়নি। গত ৩০ জুন ভাটারা এলাকার একটি দোকানে পাউরুটিতে কালো কালো ছত্রাক দেখে দোকানির সঙ্গে বিতন্ডায় লিপ্ত হন ক্রেতা। এক পর্যায়ে তা হাতাহাতির পর্যায়ে পৌঁছায়। জনতা এগিয়ে গেলে দোকানি জানান, অবিক্রীত পাউরুটি ফেরত নিয়ে গতকালই এগুলো দিয়ে গেছে। কুইন ব্রেড নামের পাউরুটিটির মোড়কের গায়ে দেখা যায় কাগজের স্টিকার দিয়ে লাগানো হয়েছে খুচরা মূল্য, উৎপাদন ও মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ। পাউরুটির উৎপাদন তারিখ লেখা ২৯ জুন। মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ ২ জুলাই। আরও দুই দিন মেয়াদ থাকতেই পাউরুটিতে ছত্রাক জন্মেছে। খিলগাঁওয়ের এ প্রতিষ্ঠানটির টেলিফোন নম্বরে যোগাযোগ করলে একজন ফোন রিসিভ করেন। বিষয়টি জানালে ‘মালিক নেই’ বলে ফোন কেটে দেন। এ ব্যাপারে মান নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থাÑ বিএসটিআই’র উপ-পরিচালক (সিএম) রিয়াজুল হকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ভোগ্যপণ্যের প্যাকেটের গায়ে অমোচনীয় কালিতে উৎপাদন তারিখ, খুচরা মূল্য ও মেয়াদ লেখা নিয়ম। এটা না মানায় অনেক প্রতিষ্ঠানকে জেল-জরিমানা করেছি। মেয়াদোত্তীর্ণ বেকারি পণ্য মিশিয়ে ফের নতুন পণ্য তৈরির অভিযোগ আছে। এ ব্যাপারে তথ্য পেলেই আমরা ব্যবস্থা নেই। এসব বিষয়ে জনগণ আমাদেরকে তথ্য দিয়ে সহায়তা করলে সহজে এসব অসাধু ব্যবসায়ী ধরা যায়। তবে আমরা নিয়মিত অভিযান চালিয়ে যাচ্ছি। প্যাকেটের ওপরে মেয়াদ থাকলেও সন্দেহ হলে পরীক্ষা করি। তবে বাজারের তুলনায় জনবল কম থাকায় যতটুকু মনিটরিং করা প্রয়োজন ততটুকু হয়তো করতে পারছি না।  এদিকে শুধু বেকারি পণ্যই নয়, আটা, ময়দা, নুডলস, তেল থেকে শুরু করে কোনো ভোগ্যপণ্যই নিশ্চিন্তে ব্যবহার করতে পারছেন না ক্রেতারা। বিভিন্ন কৌশলে অস্বাস্থ্যকর, ব্যবহার অনুপযোগী পণ্য ক্রেতার ব্যাগে তুলে দিচ্ছে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী। গত বৃহস্পতিবার মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় একটি নামকরা ব্র্যান্ডের ডিলার সাইফুদ্দিন অ্যান্ড ব্রাদার্সের গুদামে একাধিক মেয়াদোত্তীর্ণ আটা, ময়দার প্যাকেটে মেয়াদ বাড়ানোর জন্য সিল মারা অবস্থায় আটক করা হয় প্রতিষ্ঠানটির বিক্রয় প্রতিনিধি শরীফকে। ধ্বংস করা হয় প্রায় ছয় মণ মেয়াদোত্তীর্ণ আটা-ময়দা। গত বছর জুনে মেয়াদোত্তীর্ণ সেমাই, নুডলস ও বিস্কুট নতুন করে প্যাকেট করে বিক্রির অভিযোগে রাজধানীর লালবাগ এলাকায় চার ব্যবসায়ীকে জেল-জরিমানা করে র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত। ২-৩ বছর আগেই মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়া পণ্যগুলো নতুনভাবে প্যাকেট করে বিক্রি করছিলেন তারা। ধ্বংস করা হয় এক হাজার ১০০ বস্তা মেয়াদোত্তীর্ণ পণ্য।

সর্বশেষ খবর