ঘটনা এক : শুক্রবার রাত দেড়টা। এ প্রতিবেদকের মোবাইল ফোনে কল করলেন মন্ত্রিত্বপ্রত্যাশী আওয়ামী লীগের এক কেন্দ্রীয় নেতা। দুবারের মাথায় ফোনটি ধরতেই তিনি জানতে চাইলেন- ‘মন্ত্রিসভার সম্প্রসারণের খবর কী? কিছু কি শুনছেন? বললাম, খবর পেলে জানাব।’
ঘটনা দুই : শুক্রবার সকালে ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন দলের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। সংবাদ সম্মেলন শেষে সাধারণ সম্পাদকের রুমে খোশগল্প করছিলেন কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা। এ সময় সেতুমন্ত্রী ছাড়াও মন্ত্রিসভার দুজন সদস্য উপস্থিত ছিলেন। একজন সম্পাদকম-লীর সদস্য মন্ত্রিসভার এক সদস্যের কাছে জানতে চাইলেন, ‘শুনলাম ক্যাবিনেটের আকার বাড়ছে, কারা কারা আসছে-জানেন কিছু?’ ঘটনা তিন : খুলনা বিভাগে সরকারদলীয় এক এমপি প্রায় প্রতিদিনই এ প্রতিবেদকসহ গণমাধ্যমের বিভিন্ন কর্মীদের কাছে মোবাইল ফোনে জানতে চান, মন্ত্রিসভা সম্প্রসারণ কবে নাগাদ হচ্ছে? কারা আসবেন নতুন মুখ হিসেবে জানেন কিছু? বিশেষ টেলিফোন পাব তো? মন্ত্রিসভার আকার বাড়ছে-এমন খবর কয়েক মাস ধরেই চাউর হয়েছে। চীন সফর শেষে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে ফিরলেই মন্ত্রিসভার আকার বাড়তে পারে বলে দলের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের এমন বক্তব্যের পর বিষয়টির আরও ডালপালা গজিয়েছে। দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, সম্পাদকম-লীর সদস্য কিংবা দলীয় এমপিই নন, ১৪-দলীয় জোটের শরিকরাও আশায় আছেন মন্ত্রিসভায় তারা ডাক পাবেন। গাড়িতে উঠবে পতাকা। এ জন্য খোঁজখবর নিতে দলের শীর্ষ নেতা, মন্ত্রিসভার সদস্য, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কর্মকর্তা ও গণমাধ্যমের কর্মীদের কাছে তারা জানতে চাইছেন। আবার কেউ কেউ গণভবনে যাওয়া-আসাও বাড়িয়ে দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী যেসব সরকারি অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করছেন সেগুলোতেও সরব উপস্থিতি দেখা যাচ্ছে মন্ত্রিসভায় স্থান পেতে আগ্রহীদের। সূত্রমতে, আওয়ামী লীগ সরকারের টানা তৃতীয় মেয়াদের সরকারের মন্ত্রিসভায় যোগ হতে যাচ্ছে আরও কিছু নতুন মুখ। গতকাল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চীন সফর শেষে দেশে ফিরেছেন। চলতি সপ্তাহে নতুন মুখ যুক্ত হওয়ার জোর সম্ভাবনা রয়েছে। তবে কারা আসছেন এখনো চূড়ান্ত হয়নি। মন্ত্রিসভার সম্প্রসারণ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘কবে নাগাদ মন্ত্রিসভার আকার বাড়ছে তা ঠিক বলতে পারব না। মন্ত্রিসভার আকার বাড়ানো কিংবা কে মন্ত্রী হবেন সম্পূর্ণ এখতিয়ার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। তিনি বলেন, এখনো আমাদের কিছু মন্ত্রণালয়ে মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী নেই। যেমন মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে কেউ নেই। সে কারণে নতুন মুখ আসতে পারে।’ জানা গেছে, এখন পর্যন্ত দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা এবং ত্রাণ, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন, প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান, মৎস্য ও পশুসম্পদ, নৌপরিবহন, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা, পানিসম্পদ, সংস্কৃতি, শ্রম ও কর্মসংস্থান এবং ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পূর্ণমন্ত্রী নেই। এ ছাড়া, স্বরাষ্ট্র, বস্ত্র ও পাট, ভূমি, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত, খাদ্য, বাণিজ্য, কৃষি, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক, রেলপথ ও আইন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর জায়গা ফাঁকা রয়েছে। নতুন মন্ত্রিসভা গঠনের পাঁচ মাসের মাথায় ১৯ মে মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পুনর্বণ্টন করা হয়। স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী তাজুল ইসলামকে শুধু স্থানীয় সরকারের মন্ত্রী করা হয়, স্বপন ভট্টাচার্য হন পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী। আর ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বারকে শুধু ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী করা হয়। আর জুনাইদ আহমেদ পলককে রাখা হয় তথ্য ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বে। এ ছাড়া স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসানকে তথ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী করা হয়।