রবিবার, ৭ জুলাই, ২০১৯ ০০:০০ টা

তিন মাস ধরে রহস্য আটকে আছে রাসায়নিক পরীক্ষায়

আবাসিক হোটেলে দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যু

মাহবুব মমতাজী

তিন মাস ধরে রহস্য আটকে আছে রাসায়নিক পরীক্ষায়

রাজধানীর ফার্মগেটে আবাসিক হোটেল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থীর লাশ উদ্ধারের ঘটনার কোনো কূলকিনারা হয়নি। ঘটনার তিন মাস পার হলেও তাদের মৃত্যুরহস্য এখনো আটকে আছে রাসায়নিক পরীক্ষার রিপোর্টে। তবে পরিবার দাবি করছে, তাদের পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। পুলিশের প্রাথমিক ধারণা, যৌন উত্তেজক ওষুধ সেবনে তারা মারা গেছেন। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, পুরুষের সেবন করা যৌন উত্তেজক ওষুধে নারীর মৃত্যুর কোনো নজির নেই।

২ এপ্রিল ফার্মগেটের আবাসিক হোটেল স¤্রাটের ৮০৮ নম্বর কক্ষ থেকে উদ্ধার করা হয় ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটির ছাত্রী মরিয়ম চৌধুরী (২০) ও তেজগাঁও বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের ছাত্র আমিনুল ইসলাম সজলের (২২) লাশ। সজলের বাড়ি কুমিল্লার নাঙ্গলকোটের হরিপুর গ্রামে। আর মরিয়মের গ্রামের বাড়ি মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলার কোলা গ্রামে। এই দুজনের লাশ উদ্ধারের সময় পুলিশ ও হোটেল কর্তৃপক্ষ দাবি করে, যৌন উত্তেজক ট্যাবলেট সেবন করে তারা মারা গেছেন। সজলের পকেটে ডুমেক্স-৬০ নামে দুটি যৌন উত্তেজক ট্যাবলেট পাওয়া যায় বলে জানা গেছে। অথচ লাশ উদ্ধারের সময়কার একটি ভিডিওতে এমোডিস নামে একটি ট্যাবলেটের পাতা দেখা যায়। এই ভিডিওটি এ প্রতিবেদকের কাছে রয়েছে। চিকিৎসা-সংশ্লিষ্টরা জানান, এ ট্যাবলেট সাধারণত কারও ডায়রিয়া হলেই কেবল সেবন করা হয়। পুলিশের করা সুরতহাল প্রতিবেদন অনুযায়ী, দুজনের শরীরে কোনো আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। আত্মহত্যাও করেননি তারা।

মরিয়ম চৌধুরীর বাবা মোস্তাক আহমেদ চৌধুরী এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘এটি শতভাগ পরিকল্পিত একটি হত্যাকা-। আমার মেয়ের সঙ্গে ওই ছেলের কোনো পরিচয় ছিল না। তাহলে কীভাবে আমার মেয়ে স্ত্রী পরিচয় দিয়ে হোটেলে উঠল। আর তাদের কাছে বিবাহের কোনো কাগজপত্রই ছিল না।’ ঘটনার সময়কার হোটেলের সিসিটিভি ফুটেজও পুলিশ সংগ্রহ করতে পারেনি বলে তাদের জানিয়েছে। অথচ ঘটনার দিন বলছিল, তারা সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করেছে।

এ ঘটনার প্রায় দুই মাস পর ওই হোটেলের মালিক জসিম উদ্দিন চৌধুরী কচিসহ তিনজনকে আসামি করে ১৪ মে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে মামলা করেন মোস্তাক আহমেদ চৌধুরী। মামলাটি গ্রহণ করে ঢাকা মহানগর হাকিম আতিকুল ইসলাম তেজগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) মামলাটি তদন্তের নির্দেশ দেন। জানা গেছে, মরিয়ম জিগাতলার মুন্সীবাড়ি রোডের একটি মেসে ভাড়া থাকতেন। ১ এপ্রিল রাতে মরিয়ম তার খালার বাসায় যাওয়ার কথা বলে বাসা থেকে বের হন। যাওয়ার সময় মরিয়ম জানিয়েছিলেন, রাতে তিনি ফিরবেন না। কিন্তু পুলিশের প্রযুক্তির সহায়তায় দেখা যায়, ওই ছাত্রী এদিন বিকালেই ধানমন্ডি এলাকা থেকে ফার্মগেট এলাকার দিকে আসেন। সজলের স্বজনরা জানান, সজল একই এলাকার হাজী আবদুল হাই রোডের একটি মেসে ভাড়া থাকতেন। একই দিন রাতে আত্মীয়ের বাসায় যাওয়ার কথা বলে বাসা থেকে বের হন সজল। পরদিন তার মৃত্যুর সংবাদ পান তারা। পুলিশের তদন্ত কর্মকর্তা তেজাগাঁও থানার এসআই শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা লাশ দুটির বেশ কয়েকটি পরীক্ষা দিয়েছি। ওই সব পরীক্ষার রিপোর্ট হাতে পেলে মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে জানতে পারব। দুই-তিন দিনের মধ্যেই রিপোর্ট পাওয়া যেতে পারে।’ তদন্ত-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, হোটেলের সিসিটিভি ক্যামেরা সচল নয়। হোটেলের অভ্যর্থনা, লিফটের সামনে, করিডরে সিসি ক্যামেরা আছে। তবে পুলিশ একটি ভিডিও ফুটেজ থেকে ওই হোটেলে সজল-মরিয়মের প্রবেশের দৃশ্য দেখতে পেয়েছে। আর হোটেল স¤্রাটে সজল-মরিয়ম উঠেছিল ৮০৮ নম্বর কক্ষে। পাশের ৮০৯ নম্বর কক্ষে টয়লেটের ওপর ফাঁকা জায়গা রাখা আছে, যা দিয়ে অনায়াসে ৮০৮ নম্বর কক্ষে প্রবেশ করা যায়। তবে হোটেল কর্তৃপক্ষের দাবি, পানি গরম করা মেশিন গিজার বসানোর জন্য সেই ফাঁকা জায়গা তৈরি করা হয়েছে। ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. সেলিম রেজা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, ময়নাতদন্তের পর তারা ভিসেরা পরীক্ষার জন্য পাঠিয়েছেন। ওই রিপোর্ট না পাওয়া পর্যন্ত মৃত্যুর রহস্য সম্পর্কে কিছুই বলা যাচ্ছে না।

সর্বশেষ খবর