সোমবার, ৮ জুলাই, ২০১৯ ০০:০০ টা

রিকশাশূন্য তিন সড়ক

কমেছে যানজট, সাধারণের ভোগান্তি, বাসে ভিড়, শাহবাগে রোগীদের বিড়ম্বনা

নিজস্ব প্রতিবেদক

রিকশাশূন্য তিন সড়ক

নতুনবাজার এলাকায় রাস্তায় নেই রিকশা। গতকাল তোলা ছবি -জয়ীতা রায়

রিকশাশূন্য ছিল রাজধানীর তিন সড়ক। পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী গতকাল থেকে রাজধানীর তিন সড়কে রিকশার চলাচল বন্ধ রয়েছে। প্রথম দিনে রাস্তায় রিকশা না থাকায় তিন সড়কে যানজট কমেছে। তবে ব্যাপক ভিড় ছিল লোকাল বাসগুলোতে। গণপরিবহনের জন্য দীর্ঘ অপেক্ষা করতে দেখা গেছে যাত্রীদের। ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে অনেককেই। এদিকে মূল তিন সড়ক রিকশা চলাচল বন্ধ থাকায় গলিগুলোতে ভিড় জমিয়েছেন রিকশাচালকরা। এতে অলি-গলিতে বেড়েছে  যানজট। সরজমিনে ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত গাবতলী থেকে আসাদগেট হয়ে আজিমপুর ও সায়েন্সল্যাব থেকে শাহবাগ পর্যন্ত অন্য দিনের মতো রিকশা চলাচল করতে দেখা যায়নি। তবে আধা ঘণ্টা-এক ঘণ্টা পরপর রাস্তায় দুই-একটি রিকশা চলাচল করতে দেখা গেছে। এ ছাড়া কুড়িল, নতুন বাজার, বাড্ডা, রামপুরা, মালিবাগ রেলগেট, খিলগাঁও হয়ে সায়েদাবাদের সড়কে রিকশা চলাচল করতে দেখা যায়নি। তবে ভিতরের গলিগুলো থেকে যাত্রী নিয়ে প্রধান সড়কে যাত্রী নামাতে দেখা গেছে চালকদের। সড়কগুলোতে অন্য দিনের তুলনায় কম যানজট দেখা গেছে।

যানজট কম সায়েদাবাদ-কুড়িল সড়কে : পূর্বঘোষণা অনুযায়ী গতকাল রিকশা চলাচল বন্ধ করা হয়েছে রাজধানীর সায়েদাবাদ থেকে কুড়িল পর্যন্ত সড়কে। সকাল থেকেই সড়কের বিভিন্ন স্থানে রিকশা প্রবেশ ঠেকাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে কাজ করতে দেখা গেছে। কোথাও কোথাও অল্প সংখ্যক রিকশা চলাচল করতে দেখা গেলেও অন্যান্য দিনের তুলনায় যানজট ছিল অনেক কম। তবে সড়কে রিকশা না থাকায় সাধারণ মানুষকে বেশ দুর্ভোগও পোহাতে হয়েছে। সরজমিনে এই সড়কে ঘুরে এমন চিত্রই দেখা গেছে। এই সড়কে নিয়মিত যাতায়াতকারী বাসযাত্রী ফজলুল হক জানান, অন্য দিন মালিবাগ চৌধুরীপাড়া থেকে কুড়িল পর্যন্ত যেতে প্রায় এক ঘণ্টা সময় লেগে যেত। সড়কে রিকশা না থাকায় কোনো যানজট ছিল না। তাই ২০ মিনিটেরও কম সময়ে আমি চৌধুরীপাড়া থেকে কুড়িল আসতে পেরেছি। এদিকে মূল সড়কে রিকশা না থাকায় আশপাশের গলিগুলোতে রিকশা চলাচল ছিল বেশি। অতিরিক্ত রিকশার কারণে ওইসব এলাকায় যানজটের খবরও পাওয়া গেছে। রাজধানীর উত্তর বাড্ডা এলাকার রিকশাচালক জামশেদ জানান, মেইন রোডে প্রবেশ করতে না দেওয়ায় গলির ভিতর তিনি রিকশা চালিয়েছেন। তবে গলিগুলোতে যাত্রীর তুলনায় রিকশা বেশি হওয়ায় খুব একটা আয় হয়নি। রাজধানীর মেরুল বাড্ডা থেকে নতুনবাজার যাওয়ার জন্য সড়কে অপেক্ষা করছিলেন মামুনুর রশিদ নামের একজন ব্যবসায়ী। তিনি বলেন, এই স্বল্প দূরত্বে যাওয়ার জন্য আমরা সাধারণত রিকশায় যাতায়াত করি। কিন্তু আজ (গতকাল) রিকশা বন্ধ। লোকাল বাসগুলোতে অতিরিক্ত ভিড়। সাধারণ যাত্রীদের কথা বিবেচনা করে আগে গণপরিবহনের ব্যবস্থা করে রিকশা চলাচল বন্ধ করা হলে ভালো হতো।

শাহবাগ এলাকায় রোগীদের ভোগান্তি : রাজধানীর সায়েন্স ল্যাবরেটরি থেকে শাহবাগে গতকাল রিকশা চলাচল বন্ধ ছিল। দু-একটা রিকশা চললেও, পুলিশ ও আনসার সদস্যদের বাধার মুখে পড়তে হয়েছে। রিকশা চলাচল বন্ধ হওয়ার কারণে ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে জনসাধারণকে। সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছেন হাসাপাতালের রোগী, তাদের স্বজন এবং সায়েন্স ল্যাবরেটরি থেকে শাহবাগ এলাকার বাসিন্দাদের। বিপাকে পড়তে হয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী এবং তাদের অভিভাবকদেরও। ভোগান্তির কথা জানতে চাইলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের আউটডোরে চিকিৎসা নিতে আসা গ্রিন রোডের বাসিন্দা নুরজাহান বেগম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, কয়েকটি টেস্ট করানোর জন্য তিনি হাসপাতালে এসেছেন। গ্রিন রোড থেকে রিকশা নিলেও, আনসার সদস্যরা তাকে কাঁটাবন মোড়ে নামিয়ে দিয়েছেন। এরপর হেঁটেই তাকে হাসপাতালে আসতে হয়েছে।

আয় কমেছে রিকশা চালকদের : মূল সড়কে রিকশা চলাচল বন্ধ থাকায় আয় কমেছে রিকশা চলকদের। বাড্ডার গলিতে রিকশা চালাচ্ছিলেন আশিকুর রহমান। তিনি বলেন, ঘোষণা অনুযায়ী মূল সড়কে রিকশা চলাচল বন্ধ থাকায় আমরা প্রধান সড়কে রিকশা নিয়ে যাইনি। তিনি বলেন, বড় রাস্তায় দুই ঘণ্টা রিকশা চালালে যে আয় হয় সেই অনুযায়ী সকাল থেকে গলিতে রিকশা চালিয়ে সেই পরিমাণ আয় হয়নি। উল্লেখ, রাজধানীর সড়কগুলো যানজটমুক্ত ও শৃঙ্খলা ফেরানোর লক্ষ্যে কয়েকটি সড়কে রিকশা চলাচল সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন। সড়কগুলো হলো- প্রথমটি গাবতলী থেকে আসাদগেট-নিউমার্কেট হয়ে আজিমপুর পর্যন্ত। দ্বিতীয়টি সায়েন্স ল্যাবরেটরি থেকে শাহবাগ পর্যন্ত এবং তৃতীয়টি কুড়িল থেকে বাড্ডা-রামপুরা, মালিবাগ, খিলগাঁও হয়ে সায়েদাবাদ পর্যন্ত।

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর