সোমবার, ৮ জুলাই, ২০১৯ ০০:০০ টা

খুলনায় পাল্টে গেছে বিনিয়োগ পরিবেশ

মোংলা বন্দরকে ঘিরে বিদেশিদের আগ্রহ, বিনিয়োগে আগ্রহ বাড়ছে শিল্পোদ্যোক্তাদের, বেসরকারি বিনিয়োগে শীর্ষে জাহাজ নির্মাণ প্রতিষ্ঠান

সামছুজ্জামান শাহীন, খুলনা

খুলনায় পাল্টে গেছে বিনিয়োগ পরিবেশ

মোংলা বন্দরের অবকাঠামো উন্নয়ন ও পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ শুরুর পর থেকে দক্ষিণাঞ্চলকে ঘিরে বিনিয়োগে আগ্রহ বাড়ছে শিল্পোদ্যোক্তাদের। বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ তৈরি হওয়ায় গড়ে উঠেছে নতুন নতুন শিল্পপ্রতিষ্ঠান। একের পর এক বিদেশি রাষ্ট্রদূত ও বিনিয়োগকারীরা খুলনায় আসছেন। তারা বাণিজ্যিক পণ্য আনা-নেওয়ার ক্ষেত্রে মোংলা বন্দর ব্যবহারের পাশাপাশি আগ্রহ প্রকাশ করেছেন বিনিয়োগ ও অবকাঠামো উন্নয়নে।

জানা যায়, গত কয়েক বছরে খুলনার রূপসা শিল্পাঞ্চল, বাগেরহাট, যশোর ও খুলনা-মোংলা সড়কের দুই পাশে গড়ে উঠেছে অসংখ্য শিল্পপ্রতিষ্ঠান। পাশাপাশি খুলনার বটিয়াঘাটা ও তেরখাদায় গড়ে তোলা হচ্ছে অর্থনৈতিক জোন। পুরনো ধাঁচের হার্ডবোর্ড, নিউজপ্রিন্ট মিল ও পাটকলের জায়গায় খুলনার পরিচিতি এখন সিমেন্ট ফ্যাক্টরি, ফ্রোজেন ফুড, অটোমোবাইল রিপেয়ারিং, পোলট্রি ফিড ও যুদ্ধজাহাজ নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে।

বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের তথ্যমতে, গত চার মাসে খুলনার বেসরকারি শিল্পপ্রতিষ্ঠানে প্রায় ১ হাজার ৬২ কোটি টাকার বিনিয়োগ হয়েছে। এ ছাড়া ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বিদেশি বিনিয়োগ হয়েছে প্রায় ৩৩০ কোটি টাকা, যা গত অর্থবছরের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। বেসরকারি বিনিয়োগে শীর্ষে রয়েছে জাহাজ নির্মাণ প্রতিষ্ঠান, সিমেন্ট ফ্যাক্টরি, ফ্রোজেন ফুড, পেপার বোর্ড নির্মাণ ও গ্যাস বোতলজাতকরণ প্রতিষ্ঠান। গত অর্থবছরে খুলনা শিপইয়ার্ডে জাহাজ নির্মাণ শিল্পে সর্বোচ্চ বিনিয়োগ হয়েছে প্রায় ১ হাজার ২৮ কোটি টাকা। আর খুলনার বটিয়াঘাটায় ওয়েস্টপেপার রিসাইক্লিং করে গ্রে বোর্ড পেপার ও হোয়াইট বোর্ড তৈরিতে চীন বিনিয়োগ করেছে ২৪৭ দশমিক ৫২ মিলিয়ন বা প্রায় ২৫ কোটি টাকা। বিনিয়োগকারীদের মতে, মোংলা বন্দরের আধুনিকীকরণ, বিমানবন্দর চালু ও উদ্যোক্তাদের উন্নয়ন প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা গেলে বেসরকারি বিনিয়োগ আকৃষ্টকরণ সম্ভব হবে। তবে এর মধ্যে মোংলা বন্দর অবকাঠামো উন্নয়নে চীনা প্রকল্প ও খুলনা-মোংলা রেললাইন নির্মাণে ভারতীয় প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। এদিকে ৪ জুলাই বাংলাদেশে নিযুক্ত নেপালের রাষ্ট্রদূত ধন বাহাদুর ওলি মোংলা বন্দর পরিদর্শন করে এই বন্দর দিয়ে সড়কপথে বাণিজ্যিক পণ্য নেপালে আনা-নেওয়ার কাজ দ্রুত শুরু হবে বলে জানিয়েছেন। এর আগে গত এপ্রিলে ভুটানের প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফরের সময়ও দেশটি মোংলা বন্দর ব্যবহার ও সীমান্তে আরও তিনটি স্থলবন্দর চালুর বিষয়ে আগ্রহ দেখিয়েছে। গত বছর চীন থেকে পরীক্ষামূলকভাবে মোংলায় প্রায় ২৫ হাজার ৩৫০ টন সারের চালান নিয়ে এসেছিল নেপালের কোম্পানি। নেপালের রাষ্ট্রদূত ধন বাহাদুর ওলি বলেন, বাংলাদেশ থেকে পণ্য আমদানি-রপ্তানির জন্য রেল যোগাযোগ সুবিধাকে কাজে লাগাতে চায় নেপাল। একই সঙ্গে তারা বাংলাদেশের মোংলা সমুদ্রবন্দরসহ নৌ ও সড়কপথ ব্যবহার করতে আগ্রহী। খুলনা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি কাজী আমিনুল হক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, মোংলা বন্দর ঘিরে দক্ষিণাঞ্চলে বিনিয়োগের অপার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। পদ্মা সেতু, খুলনা বিমানবন্দর ও খুলনা-মোংলা রেললাইন নির্মাণের পর যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হবে। এ অঞ্চলের ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারিত হলে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। এদিকে খুলনা জোনকে বিনিয়োগ সম্ভাবনায় ‘গ্রোথ সেন্টার’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি ডিসিপ্লিনের প্রধান অধ্যাপক ড. শাহনেওয়াজ নাজিমুদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে এখানে শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন ব্যবসা-বাণিজ্য ও শিল্পায়নে আগ্রহীরা। এতে কর্মসংস্থানের পাশাপাশি অর্থনীতি চাঙ্গা হবে। আর বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, খুলনার পরিচালক প্রণব কুমার রায় বলেন, বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ তৈরি হওয়ায় দক্ষিণাঞ্চলে গড়ে উঠছে নতুন নতুন শিল্পপ্রতিষ্ঠান। সেই সঙ্গে বিনিয়োগে আগ্রহ বাড়ছে দেশি-বিদেশি শিল্পোদ্যোক্তাদের। তিনি বলেন, এরই মধ্যে চীন, ভারত, নেপালসহ কয়েকটি দেশ এ অঞ্চলে অবকাঠামো উন্নয়ন ও বিনিয়োগের ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর