শিরোনাম
সোমবার, ৮ জুলাই, ২০১৯ ০০:০০ টা

ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ২৮০৩ মারা গেছেন তিনজন

আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ ১৫ জুলাই থেকে চিকিৎসায় ভ্রাম্যমাণ মেডিকেল টিম

নিজস্ব প্রতিবেদক

ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ২৮০৩ মারা গেছেন তিনজন

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন দাবি করেছেন, চলতি বছর ৩ জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত দুই হাজার ১০০ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন। এদের মধ্যে দুজন মারা গেছেন। তার দাবি, ডেঙ্গু পরিস্থিতি এখনো নিয়ন্ত্রণের বাইরে যায়নি। অন্যদিকে স্বাস্থ্য অধিদফতরের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ১ জানুয়ারি থেকে গতকাল পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন দুই হাজার ৮০৩ জন। এ পর্যন্ত মারা গেছেন তিনজন। আর ছাড়পত্র নিয়ে হাসপাতাল ছেড়েছেন দুই হাজার ৫১ জন। বর্তমানে ভর্তি আছেন ৪৫৯ জন।

অবশ্য মেয়রের বক্তব্য অনুযায়ী, আক্রান্তদের ৯৮-৯৯ শতাংশেরই ‘ক্লাসিক্যাল ডেঙ্গু’ হচ্ছে, যা ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে চলে যায় এবং এতে তেমন ক্ষতির কারণ থাকে না। গতকাল সচিবালয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগের সভাকক্ষে ঢাকা মহানগরীর মশক নিধন কার্যক্রম বিষয়ক পর্যালোচনা সভার শুরুতে এ তথ্য জানান দক্ষিণ সিটির মেয়র।

স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলামসহ বিভিন্ন সিটি করপোরেশনের প্রতিনিধি এবং মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অংশ নেন। সভায় দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র দাবি করেন, এ পর্যন্ত মাত্র দুজনের মৃত্যু হয়েছে। তবে স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার তথ্য অনুযায়ী, ১৫ জুন পর্যন্ত ৪৮৬ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছিল, যাদের মধ্যে দুজন মারা যান। এরপর মারা গেছেন আরও একজন, যিনি পেশায় চিকিৎসক ছিলেন।

সাঈদ খোকন বলেন, ‘ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সব রকমের উদ্যোগ চলমান রয়েছে। ডেঙ্গু নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার মতো কিছু নেই। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণের বাইরে এখনো যায়নি এবং খুব দ্রুততম সময়ের মধ্যে এটি কমে আসবে। এতে আতঙ্কিত হওয়ার মতো কোনোই কারণ নেই এবং আতঙ্কিত হওয়ার মতো পরিস্থিতিও সৃষ্টি হয়নি।’ দক্ষিণের মেয়র বলেন, এ পর্যন্ত যে ২১০০ জন আক্রান্ত হয়েছেন তাদের মধ্যে এক হাজার ৮৭৫ জন চিকিৎসা নিয়ে বাসায় গেছেন, চিকিৎসাধীন রয়েছেন ৩০০ জন।

বৈঠকে সাঈদ খোকন আরও বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে ডেঙ্গু মশা একটি আলোচিত বিষয়ে পরিণত হয়েছে। বর্ষা মৌসুমে এর প্রাদুর্ভাব ছড়িয়ে থাকে। বিগত কয়েক বছরের তুলনায় এবার মনে হয়েছে ডেঙ্গুর প্রকোপ কিছুটা বেশি, যদিও মাত্র (বর্ষা) মৌসুম শুরু হয়েছে, ডেঙ্গুর মৌসুম শেষ হয়নি। তিনি জানান, এ জন্য রুটিন ওয়ার্কের বাইরে বিশেষ কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধু মেডিকেলের বিশেষজ্ঞদের নিয়ে সায়েন্টিফিক সেমিনারের আয়োজন করে করণীয় নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগ ও কার্যক্রমের সঙ্গে জনগণকে সম্পৃক্ত করে ডেঙ্গু কিংবা চিকুনগুনিয়া নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। তিনি বলেন, ‘দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রতিটি এলাকায় মশক নিধন কার্যক্রম চলমান রয়েছে। জুমার নামাজে ইমামরা খুতবায় বয়ান দিচ্ছেন। শিক্ষকদের চিঠি দেওয়া হয়েছে, তারা অ্যাসেম্বলিতে বাচ্চাদের এ বিষয়ে সচেতন করে তুলছেন। আমরা ইতিমধ্যে কমিউনিটি অ্যাম্বাসেডর নিয়োগ দিয়েছি। প্রতিটি ওয়ার্ডকে চারটি ভাগে ভাগ করে একেকটি এলাকা থেকে মসজিদের ইমাম, শিক্ষক, অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারী, সুশীল সমাজসহ সাতজন করে নাগরিক প্রতিনিধি নিয়ে একটি ওয়ার্ডে ২৮ জন কমিউনিটি অ্যাম্বাসেডর নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তারা বিষয়গুলো তদারক করছেন। আমাদের স্প্রেম্যান যদি অনুপস্থিত থাকেন, তাহলে সহজেই চিহ্নিত করতে পারছি।’ বৈঠকে দক্ষিণ সিটির মেয়র জানান, ডেঙ্গুসহ বর্ষা মৌসুমে যেসব রোগ বেশি হয়, সেগুলোর চিকিৎসা দিতে দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকার সব ওয়ার্ডে আগামী ১৫ জুলাই থেকে ভ্রাম্যমাণ মেডিকেল টিম নামানো হবে। ওই দিন থেকে ৪৫০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং পাড়া-মহল্লাভিত্তিক ভ্রাম্যমাণ মেডিকেল টিম ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে অবস্থান নেবে। এর আগে এলাকাবাসীকে জানিয়ে দেওয়া হবে, যদি কেউ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে থাকে বা ডেঙ্গু না হলেও যদি ঠান্ডা, কাশি, জ্বরসহ প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার প্রয়োজন পড়ে, সংশ্লিষ্ট এলাকার মোবাইল টিম থেকে স্বাস্থ্যকর্মী ও চিকিৎসকরা বিনামূল্যে তাদের চিকিৎসা দেবেন এবং ওষুধ সরবরাহ করবেন।

ওই টিম কোনো রোগীকে হাসপাতালে পাঠানোর প্রয়োজন মনে করলে মহানগর জেনারেল হাসপাতাল, শিশু হাসপাতালসহ নিকটবর্তী হাসপাতালে ভর্তি করানো হবে এবং চিকিৎসার ব্যয় দক্ষিণ সিটি করপোরেশন বহন করবে।

মেয়র জানান, ১৫ জুলাই একটি হটলাইন চালু করা হবে। মেডিকেল টিমে গিয়ে কেউ চিকিৎসা নিতে না পারলে হটলাইনে ফোন করলেই স্বাস্থ্যকর্মী ও চিকিৎসকরা বাসায় চলে যাবেন। এদিকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, এবার ডেঙ্গু আগের চেয়ে অনেক বেশি মারাত্মক হয়ে এসেছে। দ্রুত হাসপাতালে না নেওয়া গেলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে। তারা বলছেন, এবার যে ধরনের রোগী আসছে তাদের মধ্যে ডেঙ্গু হেমোরেজিক ও শক সিনড্রম বেশি পাচ্ছেন তারা।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর