সোমবার, ৮ জুলাই, ২০১৯ ০০:০০ টা

কক্সবাজার কারাগারে ধারণ ক্ষমতার ৯ গুণ বেশি বন্দী

ঘুমাচ্ছেন পালা করে

আনিস রহমান

চট্টগ্রাম বিভাগের মোট ১১টি কারাগারে বর্তমানে ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত বন্দী গিজগিজ করছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বন্দী অবস্থান করছে পর্যটন নগরী কক্সবাজার জেলা কারাগারে। এই কারাগারে ধারণ ক্ষমতার প্রায় ৯ গুণ বেশি বন্দী রয়েছে। স্থান সংকুলান না হওয়ায় প্রতিদিন নানা বয়সী বন্দীদের কারা অভ্যন্তরে থাকা, খাওয়া, চলাফেরা থেকে শুরু করে প্রতিটি মুহূর্ত চরম দুর্ভোগের মধ্যে কাটাতে হচ্ছে। শুধু যে দিনেই তাদের কষ্ট হচ্ছে তা নয়, রাতে তাদের ঘুমাতে হচ্ছে পালা করে। এতে অতিরিক্ত গরম আর অসহ্য যন্ত্রণায় অসুস্থ বন্দীর সংখ্যা বাড়ছে। এমন পরিস্থিতিতে কারা প্রশাসন সম্প্রতি অতিরিক্ত বন্দীদের মধ্য থেকে সহস্রাধিক বন্দীকে একই বিভাগের অন্য দুটি কারাগারে স্থানান্তরের ব্যবস্থা করেন। তারপরও বন্দীদের থাকার জায়গা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে কর্তৃপক্ষকে। কক্সবাজারসহ সারা দেশের কারাগারে ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত বন্দীর অবস্থানসহ একাধিক বিষয় নিয়ে গতকাল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৈঠকে স্বরাষ্ট্র সচিব (সুরক্ষা, সেবা বিভাগ), আইজি প্রিজন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম মোস্তফা কামাল পাশা ছাড়াও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, বর্তমানে কক্সবাজার জেলা কারাগারে বন্দীর সংখ্যা আশঙ্কাজনকহারে বাড়তে থাকায় প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে অনেকের সমস্যা হচ্ছে। এ ছাড়া নানাবিধ সমস্যার সার্বিক চিত্র তুলে ধরে কারা অধিদফতরে এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে। তারা আরও জানান, সাক্ষাৎ কক্ষের স্থানটি ছোট হওয়ায় কেউ কারও কথা ঠিকমতো শুনতে পারছে না। এ প্রসঙ্গে কক্সবাজার জেলা কারাগারের জেলার রিতেশ চাকমা বলেন, আজ (রবিবার) সকাল পর্যন্ত কারাগারে মোট বন্দী ছিল চার হাজার ৪৬৩ জন। এর মধ্যে পুরুষ চার হাজার ২১০ জন আর মহিলা বন্দী ২৫৩ জন। যদিও কারাগারটির বন্দী ধারণ ক্ষমতা ৫৩০ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৪৯৬ আর মহিলা ৩৪ জন। ওই হিসাবে ধারণ ক্ষমতার প্রায় ৯ গুণ বন্দী আছে। এত বিপুল সংখ্যক বন্দী নিয়ে প্রতিদিন আমাদের সকাল বিকাল হিমশিম খেতে হচ্ছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি সমস্যা হচ্ছে বন্দীদের থাকার জায়গা দিতে। গাদাগাদি করে রাখা হচ্ছে বন্দীদের। তিনি বলেন, প্রতিনিয়ত বন্দীর চাপ বাড়তে থাকায় গত ২৮ জুন বান্দরবান ও রাঙামাটি কারাগারে সাজাপ্রাপ্ত এক হাজার বন্দীকে স্থানান্তর করা হয়েছে। এদের বেশির ভাগই ভ্রাম্যমাণ আদালতে সাজাপ্রাপ্ত বন্দী। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, এমনিতেই কারাগারে ডাক্তারের স্বল্পতা রয়েছে। কক্সবাজার জেলা কারাগারে বন্দীদের চিকিৎসা এখন ডাক্তারের পরিবর্তে ফার্মাসিস্ট দিয়ে চালানো হচ্ছে। তার মতে, কারাগারে বন্দীদের জন্য পর্যাপ্ত ওষুধ আছে কিন্তু ডাক্তার নেই। আরেক এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ইয়াবা মামলায় ১০২ জন আত্মসমর্পণ করা বন্দীসহ কারাগারে যত বন্দী রয়েছে তার মধ্যে ৭০ শতাংশ বন্দীই মাদক মামলার আসামি। তিনি বলেন, কারাগারে ২০০ জন বন্দী থাকার জন্য একটি ছয়তলা ভবন তৈরির কাজ চলমান রয়েছে। সেটি দ্রুত চালু করা সম্ভব হলে বন্দীর চাপ কিছুটা হলেও কমে যেত বলে তিনি মনে করছেন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর