রবিবার, ১৪ জুলাই, ২০১৯ ০০:০০ টা

বীমা খাতের ৩০ হাজার কোটি টাকার ওপর নজর সরকারের

কোম্পানির ৩০ শতাংশ অর্থ বিনিয়োগ করতে হবে সরকারি সিকিউরিটিজে

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

দেশে ব্যবসারত বীমা কোম্পানিগুলোর কাছে লাইফ ফান্ডসহ প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগযোগ্য তহবিল রয়েছে। এখন এই তহবিলে চোখ পড়েছে সরকারের। সরকার চাইছে, বীমা কোম্পানিগুলো (নন-লাইফ) তাদের সম্পদের কমপক্ষে ৩০ শতাংশ সরকারি বিভিন্ন সিকিউরিটিজে বিনিয়োগ করুক। সরকার আরও চায়, বীমা খাতের তারল্যের একটি অংশ বিভিন্ন ভৌত অবকাঠামো খাত- যেমন সড়ক, মহাসড়ক, রেলপথ, সেতু, বিমানবন্দর, নদীবন্দর, সমুদ্রবন্দর, সড়ক পরিবহন, পানি সরবরাহ প্রকল্প, স্বাস্থ্যসেবা, পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা, বিদ্যুৎ উৎপাদন, বিতরণ বা সঞ্চালন, টেলিযোগাযোগ এবং কর্তৃপক্ষ নির্ধারিত প্রকল্পে বিনিয়োগ হোক। এ বিষয়ে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষকে (ইডরা) নির্দেশনা দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এরই মধ্যে ইডরা বীমা কোম্পানিগুলোর সম্পদ বিনিয়াগের বিষয়ে নন-লাইফ বীমাকারীর সম্পদ বিনিয়োগ ও সংরক্ষণ প্রবিধানমালার খসড়াও করেছে। এখন সেটি চূড়ান্তের অপেক্ষায়। তবে ওই খসড়াটি চূড়ান্ত করার আগে সরকারি সিকিউরিটিজে বিনিয়োগ বাড়ানোর বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় আপত্তি জানিয়েছে নন-লাইফ বীমা কোম্পানিগুলো। তারা বলছে, প্রস্তাবিত প্রবিধানমালা অনুসারে যদি মোট সম্পদের ৩০ শতাংশ সরকারি সিকিউরিটিজে বিনিয়োগ করতে হয়, তবে বীমা কোম্পানিগুলোয় তারল্য সংকট দেখা দেবে। এতে সময়মতো গ্রাহকের দাবি ও পুনর্বীমা প্রিমিয়াম পরিশোধ কঠিন হবে। কমে আসতে পারে মুনাফা ও লভ্যাংশের হার। ইডরাও বলছে, সরকারি সিকিউরিটিজে এত বেশি বিনিয়োগ করা বীমা কোম্পানির জন্য কঠিন হবে। অর্থ মন্ত্রণালয় অবশ্য ওই আপত্তিতে কান দিতে চাইছে না।

সূত্র জানায়, অর্থ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুসারে বীমা (নন-লাইফ বীমাকারীর সম্পদ বিনিয়োগ ও সংরক্ষণ) প্রবিধানমালা, ২০১৯ চূড়ান্ত করার জন্য ১১ জুন আন্তমন্ত্রণালয় সভা করে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। ওই সভার কার্যবিবরণীতে দেখা গেছে, বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের বোর্ড মেম্বার ফারজানা চৌধুরী অর্থ বিভাগের নির্দেশনার বিষয়ে আপত্তি জানিয়ে বলেন, বীমা খাতে সরকারি সিকিউরিটিজে কমপক্ষে ৩০ শতাংশ বিনিয়োগ করার ক্ষেত্রে অর্থ বিভাগের প্রস্তাব মোতাবেক তা বাস্তবায়নের কোনো সুযোগ নেই। কারণ লাইফ ও নন-লাইফ ব্যবসা এক নয়। নন-লাইফ ব্যবসা সম্পূর্ণ বছরভিত্তিক। অপরদিকে লাইফ ব্যবসা হলো দীর্ঘমেয়াদি। সে কারণে এ মুহূর্তে এটি বাস্তবায়ন করা হলে বীমা (নন-লাইফ) কোম্পানিগুলোর জন্য কঠিন সমস্যার সৃষ্টি হবে। ইডরার সদস্য ড. এম মোশাররফ হোসেন, এফসিএ বলেন, সরকারি সিকিউরিটিজে বীমা খাতের সম্পদের ৩০ শতাংশ বিনিয়োগ করা কঠিন হবে। এ ধরনের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করার আগে বীমা কোম্পানিগুলোর প্রিভিয়াস রিপোর্ট পর্যালোচনা করা দরকার। ওই সভার সভাপতি তখনকার আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের অতিরিক্ত সচিব অজিত কুমার পাল বলেন, নন-লাইফ বীমাকারীর সম্পদ সরকারি সিকিউরিটিজে বিনিয়োগের পরিমাণ ৩০ শতাংশ নির্ধারণ করাই যৌক্তিক হবে। এতে বীমা কোম্পানিগুলোর স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত হবে। বীমা কোম্পানিগুলোর উচিত মুনাফা বাড়াতে উদ্ভাবনী উদ্যোগের মাধ্যমে নতুন নতুন সুযোগ সৃষ্টি করা। এ বিষয়ে জানতে চাইলে শীর্ষস্থানীয় একটি বীমা কোম্পানির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বীমা কোম্পানিগুলো ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করে যে মুনাফা পায়, সরকারি সিকিউরিটিজে পাওয়া যাবে তার অর্ধেক। এ ছাড়া এ ধরনের বিনিয়োগ করতে হবে দীর্ঘ সময়ের জন্য। এখন যদি হয়, মোট সম্পদের কমপক্ষে ৩০ শতাংশ সরকারি সিকিউরিটিজে সংরক্ষিত হয়, তবে তা দীর্ঘ মেয়াদে বিনিয়োগ করতে হবে। ফলে নন-লাইফ বীমা কোম্পানিগুলোর একদিকে যেমন তারল্য সংকটের কারণে প্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষে যথাসময়ে গ্রাহকদের বীমা দাবি পরিশোধ ও পুনর্বীমাকারীর প্রিমিয়াম পরিশোধ সম্ভব হবে না। অন্যদিকে সিকিউরিটিজে বিনিয়োগের ফলে মুনাফা কম হওয়ায় বীমা শিল্পে অস্থিরতা বাড়বে এবং বীমা ব্যবসা বাধাগ্রস্ত হবে।

সর্বশেষ খবর