রবিবার, ১৪ জুলাই, ২০১৯ ০০:০০ টা

ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়ছে সারা দেশে

জয়শ্রী ভাদুড়ী

ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়ছে সারা দেশে

দিনাজপুরের সেতাবগঞ্জের বাসিন্দা মমতাজ উদ্দিনসহ তার পরিবারের পাঁচ সদস্য ডেঙ্গুতে আক্রান্ত। গত মাসের শেষের দিকে তীব্র জ্বর এবং শরীরের ব্যথা নিয়ে চিকিৎসকের সরণাপন্ন হন মমতাজ উদ্দিন। পরীক্ষা-নিরীক্ষায় দেখা যায় তিনি ডেঙ্গুতে আক্রান্ত। এরপর তার স্ত্রী, বোন, দুই মেয়ে এবং তিন বছরের নাতি হিমেলও বাদ যায়নি ডেঙ্গু জ্বরের কবল থেকে।
শুধু দিনাজপুরের এই পৌরসভায় নয় ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়েছে চট্টগ্রাম, কুমিল্লাসহ দেশের বেশ কিছু জায়গায়। তবে হাসপাতালে ভর্তি না হওয়ায় তার তথ্য পাচ্ছে না স্বাস্থ্য অধিদফতর। স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন্স সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের দেওয়া তথ্যে জানা যায়, এ পর্যন্ত চট্টগ্রামে তিনজন এবং খুলনায় চারজন ডেঙ্গু আক্রান্তকে শনাক্ত করা হয়েছে। খুলনায় আক্রান্তদের মধ্যে দুজন ছাড়পত্র নিয়েছেন বাকি দুজন এখনো চিকিৎসাধীন রয়েছেন। রাজধানীর বাইরে ঢাকা বিভাগে ২০ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন। আক্রান্তদের মধ্যে ১৫ জন এখনো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তবে অনেকেই হাসপাতালে ভর্তি না হওয়ায় ডেঙ্গু আক্রান্তের সঠিক তথ্য পাচ্ছে না কর্তৃপক্ষ।
গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন ১৫২ জন। এখন পর্যন্ত হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ৯০৮ জন। সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ৫১৮ জন এবং বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে চিকিৎসাধীন ৩৯০ জন। এ মাসে গতকাল পর্যন্ত ১ হাজার ৯১৫ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন।
এর মধ্যে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ১৮০ জন, হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট হাসপাতালে ৫১ জন, সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতালে ৬৬ জন, সেন্টাল হাসপাতালে ৭৩ জন, বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৫০ জন চিকিৎসাধীন রয়েছেন। প্রতিদিন বাড়ছে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা। গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে ৭৯।
স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) তেজগাঁও, তুরাগ, পল্লবী, মগবাজার, উত্তরা, গুলশান, বনানী, কাফরুল, খিলগাঁও, রামপুরা, মিরপুর, পীরেরবাগ, মোহাম্মদপুর, শেওড়াপাড়া, কাজীপাড়া, বনানী, গুলশান, বারিধারায় সবচেয়ে বেশি এডিস মশার প্রজননক্ষেত্র হিসেবে চিহ্নিত করেছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) দয়াগঞ্জ, নারিন্দা, স্বামীবাগ, গেন্ডারিয়াসহ আশপাশের এলাকা, দক্ষিণ মুগদাপাড়া, বাসাবো, মানিকনগর বিশ্বরোড, শেরেবাংলা রোড, হাজারীবাগ, মগবাজার ও রমনা, সেগুনবাগিচা, শাহবাগ, ফরাশগঞ্জ, শ্যামপুর, উত্তর যাত্রাবাড়ীতে এডিস মশার প্রজননক্ষেত্র বেশি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। রাজধানীকে কেন্দ্র করে ডেঙ্গু নিয়ে জরিপ পরিচালনা করা হলেও দেশেব্যাপী ডেঙ্গু নিয়ে নেই কোনো কার্যক্রম। এর ফাঁকে রাজধানীর গি  পেরিয়ে ছড়িয়ে পড়ছে ডেঙ্গু।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন অনুষদের সাবেক ডিন অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, এ বছর ডেঙ্গু জ্বরে রোগীর শরীরের তাপমাত্রা খুব বেশি উঠছে না। কিন্তু দুই-তিন দিনের মধ্যে রক্তের পাল্টিলেট কমে হেমরেজিকের ঝুঁকি বেড়ে যাচ্ছে। অন্যান্য বছর ডেঙ্গু আক্রান্তদের শরীরে র‌্যাশ উঠত এবং প্রচ  ব্যথা হতো। কিন্তু এ বছর এরকম উপসর্গ না থাকায় ডেঙ্গু আক্রান্ত কি না সেটা রোগীরা বুঝতে পারছেন না। এ জন্য চিকিৎসকদের কাছেও রোগী দেরিতে আসছে। অনেক সময় রোগী খুব দ্রুত খারাপ অবস্থায় চলে যাচ্ছে। তিনি আরও বলেন, ডেঙ্গু নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। রোগীকে প্রচুর ফ্লুইড অর্থাৎ তরল খাওয়াতে হবে। ডেঙ্গু রোগীকে প্যারাসিটামল ছাড়া কোনো ব্যথার ওষুধ খাওয়ানো যাবে না। নিজের বাড়ি এবং চারপাশ পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।

সর্বশেষ খবর