রবিবার, ১৪ জুলাই, ২০১৯ ০০:০০ টা
প্রকৃতি

প্রকৃতির অলঙ্কার শকুন বিলুপ্তির পথে

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকৃতির অলঙ্কার শকুন বিলুপ্তির পথে

পাখি প্রজাতির মধ্যে সবচেয়ে বিপন্নের তালিকায় রয়েছে শকুন। অতীতে শত শত শকুন নেত্রকোনা ও সুনামগঞ্জের হাওর এলাকা এবং বড় বড় গাছের মগডালে দেখা গেলেও এখন তেমন একটা দেখা মিলছে না। এক সময় শকুন ছিল গ্রামবাংলার চিরচেনা পাখিদের একটি। সে সময় গরু-ছাগল মারা গেলে দলবেঁধে হাজির হতো শত শত শকুন। নিমিষেই মৃত গবাদিপশু খেয়ে সাবাড় করত। তাড়াতে চাইলে কিছু দূরে আবার বসে থাকত। এ পাখিকে প্রকৃতির অলঙ্কার বলেও আখ্যায়িত করা হয়। জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তারা বলছেন, খাদ্য সংকটসহ খাল-বিল, নদী-নালা ভরাট ও উঁচু গাছপালা হারিয়ে যাওয়ায় শকুনের অস্তিত্বের সংকট দেখা দিয়েছে। কয়েক দিন আগে নেত্রকোনার সহকারী প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আবুল হোসেন শকুন বিলুপ্তির বিষয়ে মহাপরিচালক প্রাণিসম্পদ অধিদফতরকে চিঠিও দিয়েছেন।

ওয়াকেবহালদের অনেকে বলছেন, পৃথিবীতে এমন একজন মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে না যে পাখি ভালোবাসে না। পাখির গান শুনতে পছন্দ করে না। পাখির সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয় না। কয়েক দশক আগেও গ্রামবাংলা সবুজ গাছ-গাছালিতে ভরা ছিল। ঝোপ-ঝাড় ছিল। চারপাশ মুখরিত ছিল পাখির কলকাকলিতে। জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে পাল্লা দিয়ে প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট বন-জঙ্গল উজাড় হচ্ছে। আরও বিনষ্ট হচ্ছে বিভিন্ন গাছ-গাছালি। মানুষের প্রয়োজনে বিভিন্ন জেলার বনাঞ্চল থেকে ঝোপ-ঝাড় পরিষ্কার করে নির্মাণ করা হচ্ছে সড়ক, স্থাপনা, বাজারসহ লোকবসতি। এতে বিপন্ন হয়ে উঠছে প্রকৃতি। প্রকৃতি বিপন্ন হওয়ার কারণেই হারিয়ে যাচ্ছে জীববৈচিত্র্য। ওই কর্মকর্তা চিঠিতে উল্লেখ করেছেন, এক সময় হাওরের খোলা আকাশে বহু উপরে উড়ে বেড়াত ঝাঁকে ঝাঁকে শকুন। একটি শকুনকে নিচে নামতে দেখলেই বাকিগুলো তাকে অনুসরণ করে মরা পশু ভাগ করে খেয়ে নিত। আকাশে ওড়া শকুন দেখে মানুষ বুঝতে পারতেন ওই আকাশের নিচে কোনো প্রাণী মরেছে। এসব খাবার খেয়ে বড় বড় উঁচু গাছ ও শিমুল গাছে ডানা মেলে বসে থাকত শকুন। শকুনই একমাত্র পাখি যারা গবাদিপশুর মৃতদেহ খেতে পারে। মৃত গবাদিপশু খেয়ে শকুন পরিবেশ পরিছন্ন করে রাখত। অ্যানথ্রাক্সসহ বিভিন্ন রোগ-জীবাণু হজম করার ক্ষমতা শকুনের আছে। এখন হাওরে বা নদী পাড়ে শিমুল, তাল, বট, রেইনট্রি, কড়ই কিংবা উঁচু কোনো গাছ অথবা ঝোপ-ঝাড় নেই আগের মতো। তবে হারিয়ে গেছে শুকুন পাখি।

পরিবেশবিদরা বলছেন, কল-কারখানার দূষিত বর্জ্যরে কারণে পরিবেশের মারাত্মক বিপর্যয়ের শিকার হচ্ছে শকুনসহ নানা প্রজাতির পাখি। এ ছাড়াও গ্রামাঞ্চলে এখন আগের মতো গণহারে পশু পালন করা হয় না। যে কটি গবাদিপশু আছে এগুলোর দু-একটি মারা গেলে খোলা আকাশের নিচে না ফেলে মাটির নিচে পুুঁতে রাখে। এসব কারণে শকুন চরম খাদ্য সংকটে পড়েছে। শস্যখেতে বিষটোপ, খাদ্য সংকট ও গবাদিপশুর চিকিৎসার প্রদাহরোধক ওষুধ ডাইক্লোফেনাক ব্যবহারে এবং প্রাচীন ও উঁচু গাছ নিধন হওয়ায় শকুন কমেছে। ফলে শকুনের অস্তিত্ব প্রায় শূন্যের কোঠায়।

সর্বশেষ খবর