সোমবার, ১৫ জুলাই, ২০১৯ ০০:০০ টা

সার্টিফিকেট বিক্রির পাঠশালা

মির্জা মেহেদী তমাল

সার্টিফিকেট বিক্রির পাঠশালা

চারুকলায় ডিপ্লোমা কোর্স করবেন? নাকি প্রকৌশলী হবেন? ডাক্তার বা গ্রন্থাগার- কী হতে চান আপনি? কোনো সমস্যা নয়। কিংবা চাকরি প্রয়োজন? কোথাও ইন্টারভিউ দেবেন? সার্টিফিকেট নিশ্চয় দরকার হবে। তাতেও সমস্যা নেই। পেয়ে যাবেন সব কিছু। সারা দেশে এমন বহু প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে, যেখানে সাইনবোর্ড রয়েছে বিশাল বিশাল। কিন্তু শিক্ষাদানের কোনো ব্যবস্থা নেই। কারণ তারা শিক্ষাদানের কোনো ব্যবস্থা রাখেনি। ভর্তির পর সার্টিফিকেট তুলে দেওয়া হয় শিক্ষার্থীদের। সেই সার্টিফিকেটই বলে দেবে শিক্ষার্থী হয়ে গেছে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার বা গ্রন্থাগার। এমনই সার্টিফিকেট বিক্রির পাঠশালার সন্ধান পাওয়া গেছে বগুড়া ও রংপুরে। একটি নয়, এক দম্পতির সার্টিফিকেট বিক্রির ১২টি প্রতিষ্ঠান আবিষ্কার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। গতকাল গ্রেফতার করা হয়েছে এ দম্পতিকে। এরা হলেন- আল ফারাবি মো. নুরুল ইসলাম ও তার স্ত্রী মোসাম্মত আকলিমা খাতুন। দীর্ঘ তদন্ত শেষে সিআইডি তাদের যে প্রতিষ্ঠানগুলো শনাক্ত করেছে সেগুলো হলো, নুরুল ইসলাম ইউনিভার্সিটি অব ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি, নিয়াক মেডিকেল এসিস্ট্যান্ট ট্রেনিং ইনস্টিটিউট, কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ (পলিটেকনিক), বগুড়া টিএইচবিপিইডি কলেজ, এসবি সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি কলেজ, পাবলিক হেলথ ডেভেলপমেন্ট ওয়ার্ক, শহীদ মোনায়েম হোসেন বিএড কলেজ, টিএউচবিপিএড কলেজ, নুরুল ইসলাম আকলিমা প্যারামেডিকেল ইনস্টিটিউট; কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড বিএম কলেজ এবং রংপুরে রংপুর একাডেমিক অ্যান্ড প্রফেশনাল ইনস্টিটিউট এবং অ্যাকাডিমিক অ্যান্ড প্রফেশনাল ইনস্টিটিউট। প্রতিষ্ঠানগুলো পরিচালনার আড়ালে চারুকলা ডিপ্লোমা ইনস্টিটিউটসহ একাধিক অনুমোদনবিহীন নামসর্বস্ব ভুয়া প্রতিষ্ঠান খুলে চাকরিপ্রত্যাশী বেকার যুবকের কাছে চারুকলা ডিপ্লোমা সার্টিফিকেট বিক্রি করে আসছে। বিগত চার বছর ধরে তারা এ প্রতারণা ব্যবসা করে আসছে। এ ছাড়া উচ্চবিদ্যালয়ে চাকরির সুযোগের কথা বলে বেকার শিক্ষার্থীদের ভর্তি করাত তাদের প্রতিষ্ঠানে। ভর্তি হলেই পাস করার নিশ্চয়তা দিত। এ দম্পতি নিজেদের মালিকানা বগুড়ার এসবি সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি কলেজ, টিএইচবিপিইডি কলেজ, এবং শহীদ মোনায়েম হোসেন বিএড কলেজের নামে প্রচারিত লিফলেটে চারুকলা ডিপ্লোমা কোর্সে ভর্তির বিষয়ে ‘জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদিত’ উল্লেখ করে বিজ্ঞপ্তি প্রচার করতে থাকে। বিজ্ঞপ্তি দেখে ড. মো. জাহাঙ্গীর আলম (পরিচালক, রাজশাহী আঞ্চলিক কেন্দ্র, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়) বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করে। তদন্ত করতে গিয়ে সিআইডি রিন্টু নামে একজন ভুক্তোভোগীর কাছে জানতে পারে যে, শিক্ষার্থী হিসেবে নামসর্বস্ব চারুকলা ডিপ্লোমা ইনস্টিটিউটে ভর্তির জন্য যান রিন্টু। অধ্যক্ষ আল ফারাবি মো. নুরুল ইসলামের স্ত্রী মোছা. আকলিমা খাতুন তার কাছে ১ লাখ টাকার বিনিময়ে ২০১৬ সালে অনুষ্ঠিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ ও উত্তীর্ণ করে দেওয়ার নিশ্চয়তা দেন। এসবি সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি কলেজ, বগুড়া এর চারুকলা কোর্স ও গ্রন্থাগার ও তথ্যবিজ্ঞান ডিপ্লোমা কোর্সের নামে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকেও থেকে প্রতারণামূলকভাবে সর্বমোট সাত কোটি ৩১ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়। এরা চারুকলা ডিপ্লোমা কোর্স ও গ্রন্থাগার ও তথ্যবিজ্ঞান ডিপ্লোমা কোর্সের সার্টিফিকেট বিক্রি করে চাকরিপ্রার্থী বেকার যুবকদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।

সর্বশেষ খবর