সোমবার, ১৫ জুলাই, ২০১৯ ০০:০০ টা

টেনশন ছিল মঞ্জুর হত্যা মামলা

আরাফাত মুন্না

১৯৯০ সালে গণআন্দোলনের মুখে রাষ্ট্রপতি এরশাদের পতনের পর তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগে ৪৩টি মামলা হয়। এর তিনটিতে নিম্ন আদালতে সাজার আদেশ হয়েছে। এর মধ্যে হাই কোর্টে একটিতে খালাস পান এরশাদ। আর দুই মামলায় সাজা খাটেন তিনি। বাকি ৪০ মামলার মধ্যে ৩৯টিতে খালাস ও অব্যাহতি পেয়েছেন। তবে ২৪ বছর আগে দায়ের হওয়া সেনাবাহিনীর মেজর জেনারেল আবুল মঞ্জুর হত্যা মামলাটি এরশাদের জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত গলার কাঁটা হয়েই ছিল। বিভিন্ন সময়ে এ মামলা নিয়ে আক্ষেপও করেছেন তিনি। মামলায় ২৩ বার বিচারক বদল হয়েছে। দোষী সাব্যস্ত হলে এ মামলাটিতে সাবেক এ সেনাশাসকের সর্বোচ্চ সাজার রায়ও আসতে পারত বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। এরশাদের প্রধান আইনজীবী শেখ সিরাজুল ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, এরশাদের বিরুদ্ধে শুধু মঞ্জুর হত্যা মামলাটিই নিষ্পত্তির অপেক্ষায় ছিল। বাকি ৪২টি মামলার নিষ্পত্তি হয়ে গেছে। বারবার বিচারক পরিবর্তনের কারণেই এ মামলাটি নিষ্পত্তিতে বিলম্ব হয়েছে। আমাদের বিশ্বাস, আইন স্বাভাবিক গতিতে চললে এ মামলাতেও তিনি খালাস পেতেন। এখন ফৌজদারি কার্যবিধি অনুযায়ী মামলা থেকে এরশাদের নাম বাদ দেওয়া হবে বলেও জানান এ আইনজীবী। ১৯৮১ সালের ৩০ মে চট্টগ্রামে একদল সৈন্যের গুলিতে নিহত হন তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান। ওই ঘটনার পর পুলিশের হাতে আটক হন মেজর জেনারেল আবুল মঞ্জুর। তিনি তখন সেনাবাহিনীর ২৪ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি ছিলেন। পুলিশ হেফাজত থেকে ১ জুন চট্টগ্রাম সেনানিবাসে নেওয়ার পর তাকে গুলি চালিয়ে হত্যা করা হয়। তখন এরশাদ ছিলেন সেনাপ্রধানের দায়িত্বে। পরে তিনি রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করেন। গণআন্দোলনে এরশাদের পতনের ১৪ বছর পর ১৯৯৫ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ থানায় মঞ্জুর হত্যা মামলাটি করেন মেজর জেনারেল মঞ্জুরের ভাই। ওই বছরই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা তৎকালীন সহকারী পুলিশ সুপার আবদুল কাহার আকন্দ অভিযোগপত্র দেন এবং বিচার শুরু করে আদালত। তবে সরকার বদল এবং রাষ্ট্রপক্ষের গড়িমসিতে এ মামলার বিচারকাজ বিলম্বিত হতে থাকে দফায় দফায়। সব মিলিয়ে ২৩ বার বিচারক বদল হয়েছে মামলার। বর্তমানে ২৪তম বিচারক মামলাটির শুনানি গ্রহণ করছেন। সর্বশেষ ২০১৪ সালের ২২ জানুয়ারি মামলার ২৩তম বিচারক ঢাকার প্রথম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ হোসনে আরা আক্তার আলোচিত এ মামলার রায় ঘোষণার জন্য ওই বছর ১০ ফেব্রুয়ারি দিন ঠিক করে দেন। কিন্তু এক সপ্তাহের মাথায় বিচারকের বদলির আদেশ হয়। তার জায়গায় নতুন বিচারক হিসেবে যোগ দেন খন্দকার হাসান মাহমুদ ফিরোজ। রায় দেওয়ার আগে তিনি নতুন করে যুক্তিতর্ক শুনতে চান। সে জন্য ২৭ ফেব্রুয়ারি দিন ঠিক করে দেন। কিন্তু রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী (পিপি) আসাদুজ্জামান খান রচি সেদিন এ মামলায় অধিকতর তদন্তের আবেদন করলে বিচারক তা মঞ্জুর করেন। এরপর কয়েক দফায় সময় বাড়ানো হলেও পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) অধিকতর তদন্ত প্রতিবেদন আর জমা দিতে পারেনি। আগামী ২৬ আগস্ট অধিকতর তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য নির্ধারিত রয়েছে। তার আগেই মামলার প্রধান আসামি মারা গেলেন।

সর্বশেষ খবর