মঙ্গলবার, ১৬ জুলাই, ২০১৯ ০০:০০ টা

একীভূত হবে একাধিক দুর্বল ব্যাংক

কেন্দ্রীয় ব্যাংকে তালিকা করতে নির্দেশনা

মানিক মুনতাসির

বাজেটের ঘোষণা অনুযায়ী অপেক্ষাকৃত দুর্বল ব্যাংকগুলোকে একীভূত করার প্রক্রিয়া শুরু করতে যাচ্ছে সরকার। এর প্রাথমিক ধাপ হিসেবে ব্যাংক ও অ-ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর আর্থিক অবস্থা এবং সামগ্রিক পারফরম্যান্স মূল্যায়নে প্রতিবেদন তৈরির নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে। একই সঙ্গে দুর্বল ব্যাংকগুলোর একটি তালিকাও করবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। পাশাপাশি বর্তমানে দেশে সুনির্দিষ্টভাবে একীভূতকরণ (মার্জার আইন) না থাকায় ব্যাংক কোম্পানি আইন সংশোধন করা হবে। এ আইন সংশোধন করে ব্যাংক বা অ-ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে একীভূতের বিষয়টি স্পষ্ট করা হবে। দুর্বল ব্যাংকের তালিকা প্রণয়ন ও ব্যাংক কোম্পানি আইনের সংশোধন দুটি কাজই একই সঙ্গে চলবে বলে জানিয়েছে অর্থবিভগের সূত্রগুলো। অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে এ-সংক্রান্ত চিঠি পাঠানো হয়েছে বলে জানা গেছে। অর্থবিভাগের কর্মকর্তারা জানান, পারফরম্যান্স বিচারে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো বছর বছর লোকসান গুনলেও বেসরকারি ব্যাংকগুলোর পরিচালন মুনাফা বাড়ছে। অন্যদিকে বেসরকারি অনেক ব্যাংক ও অ-ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠানের আর্থিক ভিত্তি অত্যন্ত দুর্বল। ফলে আমানতকারীরা ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন। ইতিমধ্যে পিপলস লিজিং নামের একটি অ-ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠান অবসায়নের অনুমোদন দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবে এর পর আর কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে এমন নাজুক অবস্থায় যেতে দিতে চায় না সরকার। এজন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর আর্থিক অবস্থা মূল্যায়ন করে প্রয়োজনে একটির সঙ্গে আরেকটিকে একীভূত করা হবে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বাজেটে আর্থিক খাত সংস্কারের বিষয়ে যেসব কথা বলা হয়েছে, সেগুলোর দ্রুত বাস্তবায়ন করা জরুরি। এমনিতেই শেয়ারবাজার থেকে মানুষের আস্থা প্রায় উঠে গেছে। ব্যাংকিং খাতেও আস্থা কমছে। ফলে গ্রাহকদের আস্থা ফেরাতে দ্রুত কার্যকর সিদ্ধান্ত নেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি। সূত্র জানায়, আর্থিক খাতের সংস্কারের অংশ হিসেবে জাতীয় সংসদের আগামী অধিবেশনেই ব্যাংক কোম্পানি আইন সংশোধনের প্রস্তাব আসতে পারে। এ ছাড়া অপেক্ষাকৃত দুর্বল ব্যাংকগুলোকে একীভূত করার বিষয়ে ইতিমধ্যে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করেছেন অর্থমন্ত্রী। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংককে একটি পৃথক প্রতিবেদন তৈরি করতে বলা হয়েছে। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের একীভূত করতে বর্তমানে সুনির্দিষ্টভাবে কোনো আইনি কাঠামো নেই। ফলে দুর্বল কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান স্বেচ্ছায় একীভূত হচ্ছে না। তাদের দুর্বলতার কারণে গ্রাহকরা আমানতের অর্থ সময় মতো ফেরত না পাওয়ায় পুরো আর্থিক খাতের দুর্নাম হচ্ছে। এ দুর্নাম এড়াতে বা আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা রক্ষায় দুর্বল ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো যাতে বাধ্যতামূলকভাবে একে অপরের সঙ্গে একীভূত হতে পারে, সেজন্য ব্যাংক কোম্পানি আইন সংশোধনের খসড়া প্রণয়ন করছে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। আইনের সংশোধন এমনভাবে করা হবে যাতে কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সার্বিক অবস্থা দুর্বলতার একটি স্তরে নেমে গেলে তারা নিজেরাই অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে একীভূত হয়ে উদ্ধারের পথ খুঁজতে পারে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, পুরো আর্থিক খাতের শৃঙ্খলা নষ্ট বা দুর্নাম করার জন্য একটি দুর্বল ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানই যথেষ্ট। কোনো কারণে একটি ব্যাংক আমানতকারীদের টাকা দিতে না পারলে তা গ্রাহকদের আস্থায় চিড় ধরে এবং সেটার নেতিবাচক প্রভাব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে পুরো খাতে। এজন্য প্রতিকারকমূলক ব্যবস্থা হিসেবে একীভূত আইন করা কিংবা ব্যাংক কোম্পানি আইনে বিষয়টিকে যুক্ত করা জরুরি বলে মনে করেন তিনি।

সর্বশেষ খবর