শিরোনাম
বুধবার, ১৭ জুলাই, ২০১৯ ০০:০০ টা

মদিনায় বাংলাদেশ হজ অফিসে হচ্ছেটা কী

মোহাম্মদ আল-আমীন, সৌদি আরব

প্রতি বছর হজ মৌসুমে মদিনায় চালু করা হয় বাংলাদেশ হজ অফিস। নিয়োগ দেওয়া হয় হজ অফিসার ও শখানেক হজকর্মী। এসবের উদ্দেশ্য থাকে বাংলাদেশ থেকে আসা আল্লাহর মেহমানদের সহযোগিতা করা। প্রতি বছরই এ অফিসে কমবেশি অনিয়মের খবর পাওয়া যায়। তবে এ বছর শুরুতেই অনিয়ম আর দুর্নীতির এন্তার অভিযোগ উঠেছে মদিনায় বাংলাদেশ হজ অফিসের বিরুদ্ধে।

অভিযোগের শুরুটা মৌসুমি হজকর্মী নিয়োগকে কেন্দ্র করে। গত ২১ এপ্রিল মদিনা হজ অফিসে হজকর্মীদের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়। সেদিন গত কয়েক বছর যাবৎ কাজ করেছেন এমন তিন-চারজনের ফাইল গায়েব হয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটে। পরে উপস্থিত ২৩৬ জন আবেদনকারীর মধ্য থেকে মোট ৮২ জন হজকর্মী, গাড়িচালক, অনুবাদক, পরিচ্ছন্নতা কর্মী এবং কম্পিউটার অপারেটরের নাম তালিকাভুক্ত করা হয়। পরবর্তীতে ফোন করে এই ৮২ জনকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিয়ে নিয়োগপত্র সংগ্রহ করতে বলা হয়। কিন্তু হজ মৌসুমের কার্যক্রম শুরুর সময় স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে তিন ধাপে ৬২ জনকে কাজ করার সুযোগ দেওয়া হয়। সৌদি সরকারের আইন অমান্য করে বৈধ ইকামাধারীদের (কাজ করার অনুমতিপত্র) বাদ দিয়ে ইকামার মেয়াদ নেই এমন একাধিক ব্যক্তিকে নিয়োগ দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া গত বছর বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী ব্যক্তিদেরও এ বছর নিয়োগ দেওয়া হয়েছে হজকর্মী হিসেবে। তালিকায় নাম থাকা এবং হজ অফিস থেকে ডাক পাওয়া এবং পরে কাজ না পাওয়া নারী হজকর্মী আমেনা খাতুন বলেন, সবকিছু ঠিক থাকার পরও আমাকে নেওয়া হয়নি। তার অভিযোগ, যাদের নেওয়া হয়েছে তাদের কয়েকজনের ইকামার মেয়াদ নেই। এদিকে পুরুষ হজকর্মী এবং গাইডদের নিয়েও হাজীদের অভিযোগ রয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে সরকারি ব্যবস্থাপনার একজন হজযাত্রী বলেন, হাজীদের গাইড করার জন্য তাদের নিয়োগ দেওয়া হলেও তারা দলবেঁধে আড্ডায় মেতে থাকেন। পরিচয়পত্রের ফিতা গলায় ঝোলানো থাকলেও কার্ডটি পকেটে থাকায় তাদের পরিচয় জানাও কঠিন হয়ে যায়।

নিয়ম অনুযায়ী হজকর্মীদের ডিউটির সময় সার্বক্ষণিক ‘হজকর্মী’ লেখা বিশেষ কুটি পরে গলায় পরিচয়পত্র ঝুলিয়ে রাখা বাধ্যতামূলক হলেও তা মানছেন না অনেকেই। দুই শিফটে অর্থাৎ সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা এবং রাত ৮টা থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত ডিউটি হলেও রাত ৮টার শিফটের হজকর্মীদের রাত ১২টা-১টার পর আর খোঁজ পাওয়া যায় না। সুস্পষ্টভাবে হজযাত্রীদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণের অভিযোগ রয়েছে হজকর্মী সাউদ শাহ আলম ও গাড়িচালক জাফর সাদিকের বিরুদ্ধে। অভিযোগ রয়েছে- জাফর সাদিক তার বাবা মুবাশ্বের, রিপন, পরিচ্ছন্নতা কর্মী আনোয়ার ও সাউদসহ চার-পাঁচজন হজকর্মীর কফিল (সৌদি স্পন্সর) জামিল হজ মিশনে কাজ করার কারণে তারা ক্ষমতার দাপট দেখান অন্যদের সঙ্গে। এক কফিলের পাঁচ-ছয়জন একসঙ্গে থাকায় তারা একটি সিন্ডিকেট তৈরি করার চেষ্টা চালাচ্ছেন বলে জানা গেছে। গত রবিবার সন্ধ্যায় সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে মদিনার দুজন সাংবাদিককে সৌদি নাগরিক জামিলকে দিয়ে হেনস্তা করানোর চেষ্টা করেন সাদিক ও সাউদ। পরে মদিনা সাংবাদিক পরিষদের সভাপতি মুসা আবদুল জলিল তাদের উদ্ধার করে নিয়ে যান। সোমবার বিকালে আবারও কফিল জামিলকে দিয়ে আরও কয়েকজনকে হেনস্তা করার চেষ্টা করেন সাউদ; যা তিনি পরে নিজ মুখেই স্বীকার করেছেন। এদিকে ফাঁকা ভাউচার বই কিনে নিজেদের ইচ্ছামতো জিনিসপত্রের দাম লিখে হজ মিশন থেকে বিল ওঠানোর অভিযোগ রয়েছে পরিচ্ছন্নতা কর্মী আনোয়ার ও কেয়ারটেকার শফিকের বিরুদ্ধে।

সূত্র জানায়, মদিনা হজ অফিসে মিনারেল ওয়াটার বলে হাজীদের যে বোতলের পানি খাওয়ানো হয় সেটা মূলত কূপের অপরিশুদ্ধ পানি। গত দুই বছর যাবৎ সুক বদরের পরে কিং আবদুল আজিজ রোডের পাশের কূপ থেকে তিন-চার দিন পরপর গভীর রাতে বোতল ভর্তি করে পানি নিয়ে এসে হাজীদের খাওয়ানো হয় আর এই পানির বিপরীতে মোটা অঙ্কের বিল করে আত্মসাৎ করেন তারা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মদিনার হজ অফিসার (উপসচিব, এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন) রেজানুর রহমান মুঠোফোনে বলেন, কোনো অভিযোগ পেলে সঙ্গে সঙ্গে অ্যাকশনে যাচ্ছি, যদি কেউ ইকামা ছাড়া কাজ করেন তাহলে বিষয়টি আমরা মক্কায় জানাব। তিনি আরও বলেন, সাউদকে বলে দেওয়া হয়েছে এবং একটি কমিটি হচ্ছে তারাও বিষয়টি দেখবে। পানির বিষয়ে তিনি বলেন, এটি হলে খুবই লজ্জার বিষয় হবে। আমি খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেব। মক্কা হজ মিশনের কাউন্সিলর মাকসুদুর রহমানের সঙ্গে টেলিফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমরা চাই সবার সহযোগিতায় সুন্দরভাবে হজ সম্পন্ন হোক, আমরা পাঁচটি অভিযোগ পেয়েছি এবং তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়েছে। তদন্তে কেউ দোষী প্রমাণিত হলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সর্বশেষ খবর