রাষ্ট্রপতির ক্ষমায় মুক্তির পর ফের গ্রেফতার হয়ে প্রায় ১০ বছর কারাভোগ শেষে মুক্তি পেয়েছেন হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত জামালপুরের আজমত আলী। গতকাল বেলা ১১টায় জামালপুর কারাগার থেকে তিনি মুক্তি পান। তার মেয়ে বিউটি খাতুন তাকে গ্রহণ করেন। যাবজ্জীবন সাজার রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে তার পক্ষে সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইড কমিটির সমন্বয়ক রিপন পৌল আবেদন করেন। গত ২৭ জুন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ আজমত আলীকে মুক্তির রায় দেয়। ওই আদেশের ভিত্তিতে তাকে তৎক্ষণাৎ মুক্তি দিতে সুপ্রিম কোর্টের সহকারী রেজিস্ট্রার মো. আবু তাহের বিশেষ ডাকযোগে নির্দেশনাটি জামালপুরের দায়রা জজ আদালত ও জেল কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠান। মুক্তিপ্রাপ্ত জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলার পাখিমারা গ্রামের আজমত আলী টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলার ঘোড়ামারার ভেঙ্গুলা উচ্চবিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ছিলেন। আদালতসূত্রে জানা যায়, ১৯৮৭ সালের ১ এপ্রিল জমি নিয়ে বিরোধের জেরে তার এলাকার কলিম উদ্দিনের ছেলে রেজাউল করিম নিহত হন। ওই ঘটনায় আজমত আলীকে আসামি করে হত্যা মামলা করা হয়। এ মামলায় ১৯৮৯ সালের ৮ মার্চ জামালপুরের জেলা ও দায়রা জজ তাকে যাবজ্জীবন সাজা দেয়। এ রায়ের বিরুদ্ধে হাই কোর্টে আপিল করে রাষ্ট্রপতির সাধারণ ক্ষমায় ১৯৯৬ সালের ২১ আগস্ট মুক্তি পান আজমত আলী। পুনরায় হাজির না হওয়ায় ২০০৯ সালের ২৯ অক্টোবর গ্রামের বাড়ি থেকে আজমত আলীকে গ্রেফতার করে নিম্ন আদালতে সোপর্দ করে পুলিশ। সেই থেকে তিনি কারাবন্দী ছিলেন। ২০১০ সালের ১১ আগস্ট রাষ্ট্রপক্ষের আপিলে হাই কোর্টের রায় (খালাস) বাতিল করে বিচারিক আদালতের রায় (যাবজ্জীবন) বহাল রাখে।
এদিকে পুনর্বিবেচনার রায়ে বলা হয়েছে, ‘মহামান্য রাষ্ট্রপতির ক্ষমার পর ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ (১) ধারা অনুযায়ী তাকে মুক্তি দেওয়া হয়। পরে আবার জেলে পাঠানো অন্যায্য ও দুর্ভাগ্যজনক।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আজমত আলীকে তৎক্ষণাৎ মুক্তি দেওয়া হোক এবং তার পুনর্বিবেচনার আবেদনটি নিষ্পত্তি করা হলো।’ আজমত আলীর মেয়ে বিউটি খাতুন বলেন, ‘বাবা রাষ্ট্রপতির ক্ষমা পাওয়ার পরও ১০ বছর জেল খেটেছেন। বাবার মুক্তির জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরতে গিয়ে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি।’ আজমত আলী বলেন, ‘আজ একদিকে আনন্দের, অন্যদিকে দুঃখেরও। জীবনের ১০টি বছর জেলেই হারিয়ে গেছে। যারা আমাকে চক্রান্তমূলক জেল খাটিয়েছেন তাদের শাস্তি চাই।’ জামালপুরের জেল সুপার মুখলেছুর রহমান বলেন, ‘আজমত আলীর রায়ের কপি পাওয়ামাত্রই মুক্তি দিয়ে তার স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করেছি।’