শুক্রবার, ১৯ জুলাই, ২০১৯ ০০:০০ টা
হাই কোর্টের সাত দফা নির্দেশনা

ধর্ষণের বিচার শেষ ১৮০ দিনে

নিজস্ব প্রতিবেদক

দেশের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালগুলোয় বিচারাধীন ধর্ষণ ও ধর্ষণের পর হত্যা মামলার বিচারকাজ নির্ধারিত সময়ের (১৮০ দিন) মধ্যে শেষ করতে নির্দেশ দিয়েছে হাই কোর্ট। এজন্য সংশ্লিষ্ট ট্রাইব্যুনালের বিচারকদের সব ধরনের আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে আদেশে। আদালত বলেছে, তিন-চার বছরের বাচ্চারা ধর্ষিত হবে, মামলার বিচারকাজ তাড়াতাড়ি শেষ হবে না, এটা দুঃখজনক। গতকাল ধর্ষণ মামলার চার আসামির জামিন আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাই কোর্ট বেঞ্চ সাত দফা নির্দেশনাসহ এ আদেশ দেয়। নির্দেশনাগুলো বাস্তবায়ন ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য এই আদেশের অনুলিপি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব, আইন সচিব ও সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলকে দেওয়া হয়েছে। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল শাহানা পারভীন, হাসিনা মমতাজ, মৌদুদা বেগম।

হাই কোর্টের নির্দেশনাগুলো হচ্ছে- দেশের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালসমূহে বিচারাধীন ধর্ষণ এবং ধর্ষণ-পরবর্তী হত্যা মামলাসমূহ অগ্রাধিকার ভিত্তিতে আইনের নির্ধারিত সময়সীমার (বিচারের জন্য মামলাপ্রাপ্তির তারিখ থেকে ১৮০ দিন) মধ্যে যাতে বিচারকাজ সম্পন্ন করা যায় সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ট্রাইব্যুনালের বিচারকদের সব ধরনের আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া যাচ্ছে। ট্রাইব্যুনালসমূহকে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০-এর ধারা ২০-এর বিধান অনুযায়ী মামলার শুনানি শুরু হলে তা শেষ না হওয়া পর্যন্ত প্রতি কর্মদিবসে একটানা মামলা পরিচালনা করতে হবে।

ধার্য তারিখে সাক্ষীর উপস্থিতি ও সাক্ষীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রতি জেলায় অতিরিক্তি জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন), সিভিল সার্জনের একজন প্রতিনিধি ও সংশ্লিষ্ট ট্রাইব্যুনালের পাবলিক প্রসিকিউটরের সমন্বয়ে একটি মনিটরিং কমিটি গঠন করতে হবে। ট্রাইব্যুনালে পাবলিক প্রসিকিউটর কমিটির সমন্বয়কের দায়িত্বে থাকবেন এবং কমিটির কার্যক্রম সম্পর্কে প্রতি মাসে সুপ্রিম কোর্ট, স্বারাষ্ট্র ও আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন পাঠাবেন। যেসব জেলায় একাধিক ট্রাইব্যুনাল রয়েছে সেসব জেলায় সব ট্রাইব্যুনালের পাবলিক প্রসিকিউটর মনিটরিং কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত হবেন এবং তাদের মধ্যে যিনি জ্যেষ্ঠ তিনি সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করবেন।

ধার্য তারিখে রাষ্ট্রপক্ষ সংগত কারণ ছাড়া সাক্ষীকে আদালতে উপস্থাপন করতে ব্যর্থ হলে মনিটরিং কমিটিকে জবাবদিহি করতে হবে। মনিটরিং কমিটি সাক্ষীদের ওপর দ্রুততম সময়ে যাতে সমন জারি করা যায় সে বিষয়েও মনিটরিং করবেন। ধার্য তারিখে সমন পাওয়ার পরও অফিশিয়াল সাক্ষীগণ যেমন ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশ, ডাক্তার বা অন্য বিশেষজ্ঞরা সন্তোষজনক কারণ ছাড়া সাক্ষ্য প্রদানে উপস্থিত না হলে, ট্রাইব্যুনাল ওই সাক্ষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ এবং গ্রয়োজনে বেতন বন্ধের আদেশ প্রদান বিবেচনা করবেন। আদালতের সুচিন্তিত অভিমত এই যে, অবিলম্বে সাক্ষী সুরক্ষা আইন প্রণয়ন করা প্রয়োজন এবং আদালত এটাও প্রত্যাশা করছে যে, সরকার অতি স্বল্প সময়ে এ বিষয়ে আইন প্রণয়ন করবেন।

সর্বশেষ খবর