শনিবার, ২০ জুলাই, ২০১৯ ০০:০০ টা

গতি নেই ঢাকার খাল উদ্ধারে

জয়শ্রী ভাদুড়ী

গতি নেই ঢাকার খাল উদ্ধারে

মোহাম্মদপুরের দখল হওয়া রামচন্দ্রপুর খাল

সরকারের উদাসীনতায় অবৈধ দখলকবলিত হয়েছে ঢাকার অধিকাংশ খাল। দুই বছর আগে খাল দখল করেছে এমন ২৫৮ জনের তালিকা করেছে ঢাকা জেলা প্রশাসন। সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এবং প্রভাবশালী ব্যক্তি রয়েছে এ তালিকায়। বছর পার হলেও তালিকাতেই আটকে আছে কর্তৃপক্ষ, খাল উদ্ধারে নেই কোনো উদ্যোগ। সূত্র জানায়, সরকারি খাল দখলমুক্ত করতে ২০১৬ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর অবৈধ দখলদারদের তালিকা তৈরির সিদ্ধান্ত নেয় ঢাকার জেলা প্রশাসন। এরপর সরেজমিন জরিপ করে ঢাকার কোন খালের কোন অংশ কোন প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তি দখল করেছে তার তালিকা তৈরি করে। প্রতিবেদনে খালগুলোর বর্তমান অবস্থা, খালের মালিকানা কার, অবৈধ দখলদার কারা, খালের কতটুকু অংশ বালু দিয়ে ভরাট করা হয়েছে, খালের কোন কোন জায়গায় আবর্জনা, কোন খাল সচল আর কোন খাল অচল এসব তথ্য যুক্ত করা হয়েছে। এই প্রতিবেদন ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এবং ওয়াসাকে দিয়েছে ঢাকা জেলা প্রশাসন। এরপর এই তিন সংস্থার একাধিক বৈঠক হলেও উদ্যোগ নেওয়া হয়নি খাল পুনরুদ্ধারে। বাসাবো, বেগুনবাড়ী, মহাখালী, রামচন্দ্রপুর, আবদুল্লাহপুর, কল্যাণপুর, গুলশান, বনানী, কাটাসুর, ইব্রাহিমপুর, বাউনিয়া, দিয়াবাড়ী, শাহজাদপুর খালের অস্তিত্ব থাকলেও এগুলো এখন দখলদারদের থাবায় সংকুচিত। এ ব্যাপারে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘ঢাকার অধিকাংশ খাল ঢাকা ওয়াসার আওতায়। এ ব্যাপারে তারা প্রকল্প অনুমোদন করে কাজ করবে। আমরা অভ্যন্তরীণ ড্রেন নির্মাণ, সংস্কার ও নিয়মিত পরিচ্ছন্নতার কাজ করি যাতে সিটি করপোরেশন এলাকায় জলজট না হয়। খালের বিষয়ে ওয়াসা সঠিক তথ্য দিতে পারবে।’ জলবায়ু ইনস্টিটিউটের তথ্যমতে, রাজধানীর খালগুলোর সঙ্গে আশপাশের চারটি নদ-নদীর সংযোগ ছিল। সূত্রাপুর থেকে লোহারপুল হয়ে বুড়িগঙ্গা, মোহাম্মদপুরের বসিলা হয়ে বুড়িগঙ্গা, উত্তরা-আবদুল্লাহপুর হয়ে তুরাগ, উত্তরখান হয়ে তুরাগ, খিলক্ষেত-ডুমনি হয়ে বালু ও মানিকনগর হয়ে শীতলক্ষ্যা নদীতে চলাচল করা যেত। বুড়িগঙ্গা নদীর বসিলা থেকে ধানমন্ডি, তেজগাঁও, রামপুরা হয়ে তুরাগ নদে মিলেছিল শুক্রাবাদ খাল। এ খালের রায়েরবাজার, জিগাতলা ও শুক্রাবাদ এলাকায় এখন আর কোনো অস্তিত্ব নেই। খালের ৮০ শতাংশই স্থায়ী স্থাপনার দখলে চলে গেছে। মোহাম্মদপুর ও পিসি কালচার হাউজিংয়ের ভিতর দিয়ে প্রবাহিত কাটাসুর খালটি ময়লা-আবর্জনায় ধুঁকছে। পলিথিন ও বিভিন্ন বর্জ্যে খাল পরিণত হয়েছে নালায়। সেগুনবাগিচা খালটি একসময় পান্থপথ থেকে শুরু হয়ে হাতিরপুল, রমনা হয়ে সেগুনবাগিচা, বিজয়নগর, আরামবাগ, কমলাপুর, মানিকনগর, ডেমরা হয়ে শীতলক্ষ্যা নদীতে মিলেছিল। ঢাকার অন্যতম বড় খাল বেগুনবাড়ী খালের মাঝখানের অংশ হয়েছে হাতিরঝিল। খালটি পান্থপথ থেকে শুরু হয়ে সোনারগাঁও হোটেলের পেছন দিয়ে তেজগাঁও শিল্প এলাকা হয়ে রামপুরা ব্রিজের তলদেশ দিয়ে বনশ্রী ও আফতাবনগরের মধ্য দিয়ে বালু নদের সঙ্গে মিশেছে। কল্যাণপুর, শ্যামলী, আদাবর ও বায়তুল আমান এলাকা পর্যন্ত বিস্তৃত কল্যাণপুর খাল। একসময় এ খাল তুরাগ নদে সংযুক্ত ছিল। আবদুল্লাহপুর খালটি হরিরামপুর, রানাভোলা, আবদুল্লাহপুর, উত্তরা, দলিপাড়া হয়ে বাউনিয়ায় গিয়ে মিশেছে। বেদখল হয়ে যাওয়া আরও কয়েকটি খালের মধ্যে রয়েছে বাসাবো ও সবুজবাগ এলাকা দিয়ে প্রবাহিত খিলগাঁও খাল, মুগদাপাড়া, জিরানী ও সবুজবাগ দিয়ে যাওয়া জিরানী খাল, মান্ডা, গোলাপবাগ, মানিকনগর দিয়ে যাওয়া মান্ডা খাল। খাল দখল করে পৈতৃক সম্পত্তির মতো ব্যবহার করলেও উদাসীন কর্তৃপক্ষ। দুষ্ট স্বভাবের লোকেরা খালের যেসব অংশ এখনো দৃশ্যমান সেসব জবরদখল করার জন্য ময়লা-আবর্জনা ফেলে ভরাটের চেষ্টা করছে।

সর্বশেষ খবর