শিরোনাম
বুধবার, ২৪ জুলাই, ২০১৯ ০০:০০ টা

হাসপাতালে শুধুই ডেঙ্গু রোগী

জয়শ্রী ভাদুড়ী

হাসপাতালে শুধুই ডেঙ্গু রোগী

রাজধানীতে প্রতিদিন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছেন ৪শর বেশি মানুষ। হাসপাতালগুলোতে এখন শুধুই ডেঙ্গু রোগী। এর একটি বড় অংশজুড়ে রয়েছে শিশুরা। সরকারি হিসাবে ডেঙ্গু জ্বরে ৫ জনের মৃত্যুর কথা বলা হলেও ২২ জনের মৃত্যু বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া গেছে। এর মধ্যে ১০ জনই শিশু। ডেঙ্গু আক্রান্ত রেকর্ড ছাড়ানোয় রাজধানীজুড়ে নেওয়া হচ্ছে সতর্কতা।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন ৪৭৩ জন। বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ১ হাজার ৮২৩ জন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৩৯৩ জন, মিটফোর্ড হাসপাতালে ১৮৮ জন, ঢাকা শিশু হাসপাতালে ৬৫ জন, শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ১১২ জন, হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট হাসপাতালে ১৬০ জন, বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৬৩ জন, ইবনে সিনা হাসপাতালে ৪৫ জন, সেন্ট্রাল হাসপাতালে ৬৬ জন, ইসলামী ব্যাংক সেন্ট্রাল হাসপাতালে ৬৬ জন, এ্যাপোলো হাসপাতালে ৪৭ জন চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এ পর্যন্ত ছাড়পত্র নিয়েছেন ৫ হাজার ৯৩৮ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৯৯ জন, মিটফোর্ডে ৫২ জন, ঢাকা শিশু হাসপাতালে ১৬ জন, হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট হাসপাতালে ৬০ জন।

সারা দেশে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা এখন কয়েক লাখ বলে ধারণা করা হচ্ছে। ডেঙ্গু আক্রান্ত অনেকেই হাসপাতালে ভর্তি না হওয়ায় এবং সব হাসপাতাল-ক্লিনিকের পরিসংখ্যান সঠিকভাবে না আসায় ডেঙ্গু আক্রান্তের সরকারি পরিসংখ্যান প্রকৃত সংখ্যার চেয়ে অনেক কম। মৃতের সংখ্যাতেও একই অবস্থা। এ পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ২২ জনের মৃত্যুর বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া গেছে। এর মধ্যে ১০ জনই শিশু।

গত ১৫ জুলাই স্কয়ার হাসপাতালে মারা গেছে লাবণ্য আলিনা কাজী নামে চার বছরের এক শিশু। আলিনার বাবা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব মোহাম্মদ কাজী ফয়সাল জানান, ডেঙ্গুর কারণে তার মৃত্যু হয়েছে বলে মৃত্যু সনদে উল্লেখ করা হয়েছে। হলি ফ্যামিলি রেডক্রিসেন্ট হাসপাতালে গত ৫ জুলাই মারা যায় মো. ইরতাজা শাহাদ প্রত্যয় নামে সাত বছরের এক শিশু। গত ২৪ জুন স্কয়ার হাসপাতালে মারা যায় মগবাজারের বাটার গলির বাসিন্দা ইকবাল হোসাইনের পাঁচ বছরের মেয়ে সাবিকুন নাহার। গত ১৬ জুন এ্যাপোলো হাসপাতালে মারা যায় ১১ বছরের এক শিশু। মহাখালীর ইউনিভার্সাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত তিন শিশুর মৃত্যু হয়েছে। গত ১৬ জুলাই এই হাসপাতালের পিআইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরহাম নূর নামে একটি শিশু মারা গেছে। আরহাম তৃতীয়বারের মতো ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিল। এর আগে গত ১১ জুলাই মো. সাদি নামে আরেক শিশু ডেঙ্গুতে মারা যায়। সাদি ঢাকা আইনজীবী সমিতির সদস্য ইয়াসিন মিয়ার সন্তান। গত ২ জুন এই হাসপাতালে মারা যায় উমাইজা হোসাইন নামে আরেক শিশু। উমাইজাদের বাসা শান্তিনগর এলাকায়। এদিকে ঢাকা শিশু হাসপাতালে এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে দুই শিশুর মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছেন হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক সৈয়দ সফি আহমেদ।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন অনুষদের সাবেক ডিন অধ্যাপক ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকায় শিশুরা এমনিতেই ঝুঁকিতে থাকে। এবার ডেঙ্গুর ধরনে কিছুটা পরিবর্তন আসায় শরীরে জ্বর অনুভূত হলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। দেরি হলে ঝুঁকি আরও বেড়ে যায়। ডেঙ্গু আক্রান্ত হলে প্রচুর পরিমাণে ফ্লুইড অর্থাৎ তরল জাতীয় খাবার গ্রহণ করতে হবে। ডেঙ্গু প্রতিরোধে জাতীয় কর্মপরিকল্পনা জরুরি : ডেঙ্গু মশা রোধে জন্মানোর স্থান ধ্বংস এবং জাতীয়ভাবে একটি কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করা জরুরি। সংক্রামক ব্যাধি আইন এবং সিটি করপোরেশন আইনের অধীন ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি। গতকাল পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) মিলনায়তনে ‘দেশব্যাপী ডেঙ্গুর বিস্তার : জাতীয় কর্মপরিকল্পনার প্রয়োজনীয়তা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় এ প্রস্তাবনা রাখেন বক্তারা। পবা, ডব্লিউবিবি ট্রাস্ট, গ্রিন ফোর্স, বানিপা ও বিসিএইচআরডির যৌথ উদ্যোগে সভাটি অনুষ্ঠিত হয়।

পবার চেয়ারম্যান আবু নাসের খানের সভাপতিত্বে সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সংগঠনটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. লেনিন চৌধুরী।

সর্বশেষ খবর