বুধবার, ২৪ জুলাই, ২০১৯ ০০:০০ টা

ছয় নদী বাঁচাতে মাস্টারপ্ল্যান

কাজ হবে ঢাকার চার চট্টগ্রামের দুই নদীর দখল দূষণ রোধ, সীমানা চিহ্নিত ও সংরক্ষণ নাব্যতা বাড়ানো

নিজামুল হক বিপুল

রাজধানীর চার নদী বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা, তুরাগ ও বালু এবং চট্টগ্রামের কর্ণফুলী ও হালদা নদী বাঁচাতে ক্র্যাশ প্রোগ্রাম, স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি মহাপরিকল্পনা (মাস্টারপ্ল্যান) অনুমোদিত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চলতি মাসেই এই অনুমোদন দেন। মহাপরিকল্পনায় নদীগুলোর সীমানা নির্ধারণ, অবৈধ দখল চিহ্নিত করা, দখলমুক্ত সীমানা সংরক্ষণ, নদী দূষণরোধ, দখলরোধ এবং নাব্য বৃদ্ধির ওপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। অনুমোদিত মাস্টারপ্ল্যানের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।

ক্র্যাশ প্রোগ্রাম : মাস্টারপ্ল্যানের শুরুতেই বলা হয়েছে ক্র্যাশ প্রোগ্রামের (জরুরি কর্মসূচি) কথা। এক বছর মেয়াদি এই কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে অবৈধ দখলরোধ, নাব্য বৃদ্ধি এবং দূষণরোধের বিষয়টি। এতে অবৈধ দখলরোধ সম্পর্কে বলা হয়েছে, নদীর সীমানা নির্ধারণ, নদী তীরের অবৈধ দখল চিহ্নিতকরণ, অবৈধ দখল উচ্ছেদ এবং অবৈধ দখল মুক্ত নদীর সীমানা সংরক্ষণের বিষয়। এই চারটি কার্যক্রমের মধ্যে প্রথম দুটি বাস্তবায়নের জন্য সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে তিন থেকে ছয় মাস। এই কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এ দুটি কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, ভূমি মন্ত্রণালয়, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু বিষয়ক মন্ত্রণালয়, জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন, ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদফতর, রাজউক, সিডিএ, বিআইডব্লিউটিএ এবং জেলা প্রশাসন। আর অবৈধ দখল উচ্ছেদ ও অবৈধ দখল মুক্ত নদীর সীমানা সংরক্ষণ কার্যক্রম শুরু হয়েছে জানুয়ারি থেকে। চলবে ধারাবাহিকভাবে। এটি বাস্তবায়ন করছে আইন ও ভূমি মন্ত্রণালয়, ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদফতর, রাজউক, সিডিএ, বিআইডব্লিউটিএ, পরিবেশ অধিদফতর ও জেলা প্রশাসন। নদীর নাব্য বাড়ানোর কমিটি গঠন, আইন সংশোধন ও জারি করার জন্য সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে তিন মাস। এটি বাস্তবায়ন করবে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় এবং নদী খনন কার্যক্রম চলতি জুলাই মাস থেকে শুরু হয়ে চলবে নিয়মিত। এই কার্যক্রম বাস্তবায়ন করবে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ, বিআইডব্লিউটিএ, পানি উন্নয়ন বোর্ড এবং জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন। এক বছরের ক্র্যাশ প্রোগ্রামের মধ্যে নদী দূষণ রোধের বিষয়ে নদী দূষণের কারণ, এর উৎস এবং প্রকৃতি নির্ধারণের কার্যক্রমের জন্য সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে দুই থেকে পাঁচ মাস। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে এই কাজ সম্পন্ন করবে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু বিষয়ক মন্ত্রণালয়। স্বল্প মেয়াদি কার্যক্রম : স্বল্প মেয়াদের কার্যক্রম বাস্তবায়নের জন্য দুই থেকে পাঁচ বছর সময় নির্ধারিত। এই সময়ের মধ্যে অবৈধ দখল রোধের অংশ হিসেবে নদী তীরের অবৈধ দখল চিহ্নিত করতে ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে জুন মাস পর্যন্ত ছয় মাসের সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে। এই কাজ বাস্তবায়ন করবে ভূমি ও আইন মন্ত্রণালয়, ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদফতর, রাজউক, সিডিএ, বিআইডব্লিউটিএ ও জেলা প্রশাসন। আর অবৈধ দখলমুক্ত নদীর সীমানা সংরক্ষণের চলমান কাজটি বাস্তবায়ন করবে স্থানীয় সরকার বিভাগ, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু বিষয়ক মন্ত্রণালয়, ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদফতর, রাজউক, সিডিএ, বিআইডব্লিউটিএ ও পরিবেশ অধিদফতর। স্বল্প মেয়াদি কার্যক্রমে নদীর নাব্য বৃদ্ধিতে কমিটি গঠন, আইন সংশোধন ও জারি করার জন্য ছয় মাস থেকে এক বছর সময় দেওয়া হয়েছে। যা বাস্তবায়ন করবে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, আইন ও নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়, জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন ও চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। বিবিধ গবেষণা ও সমীক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার জন্যও ছয় মাস থেকে এক বছর সময় দেওয়া হয়েছে। এটি বাস্তবায়ন করবে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার বিভাগ, বিআইডব্লিউটিএ, পাউবো, ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদফতর, জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনও চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। নদী দূষণের উৎস বন্ধ এবং পানির প্রবাহ নিশ্চিতকরণে সময় দেওয়া হয়েছে ২০২০ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত। এটি বাস্তবায়ন করবে আইন ও পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় এবং বিআইডব্লিউটিএ। নাব্য নিশ্চিতকরণে ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে পাঁচ বছর সময় দেওয়া হয়েছে। এই কার্যক্রম বাস্তবায়ন করবে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়, সিটি করপোরেশন, বিআইডব্লিউটিএ, বাংলাদেশ পুলিশ এবং জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন। নদী দূষণ রোধে দূষণের কারণ, উৎস এবং প্রকৃতি নির্ধারণের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য সময় ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে এক বছর। এটি বাস্তবায়ন করবে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং বিআইডব্লিউটিএ। দূষণ রোধে আইন ও নীতিমালা প্রণয়নে সময় দেওয়া হয়েছে ছয় মাস থেকে তিন বছর। যা বাস্তবায়ন করবে আইন, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রণালয়, শিল্প মন্ত্রণালয় এবং স্থানীয় সরকার বিভাগ। নদী এবং নদীর তলদেশে অধিকতর দূষণ প্রতিরোধের জন্য সময় দেওয়া হয়েছে ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে। যেটি ধারবাহিকভাবে চলবে। এটি বাস্তবায়ন করবে পরিবেশ, বন, ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রণালয়, সিটি করপোরেশন, নদী রক্ষা কমিশন এবং শিল্প মন্ত্রণালয়।

নদী দূষণ রোধে সচেতনতা বৃদ্ধির চলমান কার্যক্রম বাস্তবায়নের দায়িত্বে রয়েছে পরিবেশ অধিদফতর, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। এবং চট্টগ্রামের হালদা নদীর নাব্য বৃদ্ধি ও দূষণরোধের সময় জুলাই থেকে ২০২১ সালের জুন মাস পর্যন্ত। বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান পরিবেশ অধিদফতর, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ।

মধ্য মেয়াদি কার্যক্রম : মধ্য মেয়াদের পরিকল্পনার বাস্তবায়ন সময় পাঁচ বছর থেকে দশ বছর। এই সময়ে মূলত তিনটি বিষয়ে অগ্রাধিকার পাবে : অবৈধ দখলরোধ, নাব্য বৃদ্ধি এবং দূষণরোধ। এর মধ্যে অবৈধ দখল উচ্ছেদ কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্য ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে এক বছরের সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে। এই কার্যক্রম বাস্তবায়ন করবে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, আইন ও ভূমি মন্ত্রণালয়, ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদফতর, রাজউক ও জেলা প্রশাসন। আর অবৈধ দখল মুক্ত নদীর সীমানা সংরক্ষণ করার জন্য সময় দেওয়া হয়েছে ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে অব্যাহতভাবে। এই কার্যক্রম বাস্তবায়ন করবে স্থানীয় সরকার বিভাগ, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রণালয়, ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদফতর, রাজউক ও পরিবেশ অধিদফতর।

নদীর নাব্য বৃদ্ধির লক্ষ্যে নদী দূষণের উৎস বন্ধ এবং পানির প্রবাহ নিশ্চিতকরণ চলবে ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে, যা এরপরও চলমান থাকবে। এটি বাস্তবায়ন করবে আইন ও পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়, পরিবেশ অধিদফতর, বিআইডব্লিউটিএ এবং ওয়াসা। আর নদীর প্রবাহ নিশ্চিতকরণে কাজ করবে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়, সিটি করপোরেশন বিআইডব্লিউটিএ, পুলিশ ও নদী রক্ষা কমিশন।

এই পাঁচ থেকে দশ বছর মেয়াদে নদী এবং নদীর তলদেশের অধিকতর দূষণ রোধে কাজ করবে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রণালয়, সিটি করপোরেশন, নদী রক্ষা কমিশন ও শিল্প মন্ত্রণালয়। এই কার্যক্রম শুরু হবে ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে।  

গুরুত্ব পাবে ৩টি বিষয় : মহাপরিকল্পনায় দীর্ঘ মেয়াদের বর্ণনা দিতে গিয়ে বলা হয়েছে দশ বছর এবং পরবর্তী সময় পর্যন্ত। এখানেও অবৈধ দখল, নদীর নাব্য বৃদ্ধি এবং নদী দূষণ রোধে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে অবৈধ দখল ব্যতিত নদীর সীমানা সংরক্ষণ কার্যক্রম চলমান রয়েছে। বাকি দুটির বিষয়ে বলা হয়েছে এগুলো শুরু হবে ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে।

সর্বশেষ খবর