বুধবার, ২৪ জুলাই, ২০১৯ ০০:০০ টা

ঘুষের মামলায় কারাগারে দুদকের পরিচালক বাছির

আদালত প্রতিবেদক

ঘুষের মামলায় কারাগারে দুদকের পরিচালক বাছির

ঘুষ লেনদেনের মামলায় দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সাময়িক বরখাস্তকৃত পরিচালক খন্দকার এনামুল বাছিরকে কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত। গতকাল ঢাকার জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ আদালতের বিচারক কে এম ইমরুল কায়েস এ আদেশ দেন। এর আগে সোমবার রাতে রাজধানীর দারুসসালাম থানা এলাকার একটি বাসা থেকে এনামুল বাছিরকে গ্রেফতার করে দুদক। গতকাল বেলা ২টায় তাকে আদালতে হাজির করা হয়।

পরে এনামুল বাছিরের আইনজীবী কবির হোসাইন আদালতে জামিন আবেদন করেন। শুনানিতে তিনি বলেন, এনামুল বাছির দুদকে ২৮ বছর ধরে চাকরি করছেন। চাকরি জীবনে তার বিরুদ্ধে কখনো ঘুষ গ্রহণের কোনো অভিযোগ আসেনি। ন্যূনতম কোনো  অসততার অভিযোগ তার বিরুদ্ধে নেই। ডিআইজি মিজান চক্রান্ত করে এনামুল বাছিরের বিরুদ্ধে ঘুষ গ্রহণের মিথ্যা অভিযোগ এনেছেন। ডিআইজি মিজানের সঙ্গে এনামুল বাছির টেলিফোনে কোনো কথা বলেননি। এনামুল বাছির ডিআইজি মিজানের সঙ্গে কথা বলেছেন বলে যে দাবি করা হচ্ছে তা মোটেও ঠিক নয়। তিনি আরও বলেন, পদোন্নতিসংক্রান্ত ব্যাপার নিয়ে এনামুল বাছির উচ্চ আদালতে রিট আবেদন করেন। এ কারণে ষড়যন্ত্র করে তাকে মিথ্যা এ মামলায় ফাঁসানো হয়েছে। এনামুল জামিন পেলে বিদেশে পালাবেন না। তিনি অসুস্থ। বাংলাদেশ ব্যাংক প্রতিবেদন দিয়েছে, বেতনের টাকা ছাড়া আর কোনো টাকা তার ব্যাংক হিসাবে নেই। এদিকে দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল জামিনের বিরোধিতা করে আদালতকে বলেন, এনামুল বাছিরের বিরুদ্ধে ঘুষ গ্রহণ, ক্ষমতার অপব্যবহার ও অর্থ পাচারের অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ায় ডিআইজি মিজান ও এনামুল বাছিরের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুদক।

দুদক কারও প্রতিপক্ষ নয়। যদি কেউ প্রতিপক্ষ মনে করেন, তিনি ভুল করছেন। তিনি আরও বলেন, ঘুষ গ্রহণসংক্রান্ত ডিআইজি মিজানের সঙ্গে এনামুল বাছিরের কথোপকথনের যে অডিও পাওয়া গেছে তার ফরেনসিক প্রতিবেদন এসেছে। ওই অডিওতে এনামুল বাছিরের কণ্ঠ বলে প্রতিবেদনে উঠে আসে। এনামুল বাছির গণমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। সেই কণ্ঠের সঙ্গে ডিআইজি মিজানের সঙ্গে কথোপকথনে এনামুল বাছিরের কণ্ঠের মিল পাওয়া গেছে। এনামুল বাছিরকে বিপদে ফেলার জন্য দুদক এ মামলা করেনি। টাকার লেনদেন হয়েছে। তদন্ত চলমান। এনামুল বাছিরকে কারাগারে পাঠানো হোক। উভয় পক্ষের বক্তব্য শুনে এনামুল বাছিরকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেওয়া হয়। এর আগে ঘুষের মামলায় ডিআইজি মিজানকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে এবং ১ জুলাই থেকে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের মামলায় তিনি কারাগারে আছেন। এর আগে ১৭ জুলাই ডিআইজি মিজান ও এনামুল বাছিরকে আসামি করে মামলা করে দুদক। মামলায় অভিযোগ করা হয়, খন্দকার এনামুল বাছির কমিশনের দায়িত্ব পালনকালে অসদুদ্দেশ্যে নিজে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার আশায় ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন। অভিযোগ-সংশ্লিষ্ট ডিআইজি মিজানুর রহমানকে অবৈধ সুযোগ দেওয়ার উদ্দেশ্যে ডিআইজি মিজানের অবৈধভাবে অর্জিত ৪০ লাখ টাকা ঘুষ হিসেবে নিয়েছেন। ঘুষের ওই টাকার অবস্থান গোপন করেছেন। এ কারণে তিনি দ বিধির ১৬১ ধারা তৎসহ দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৪৭-এর ৫(২) ধারা এবং মানি লন্ডারিং আইন, ২০১২-এর ৪(২) (৩) ধারায় অপরাধ করেছেন। একইভাবে ডিআইজি মো. মিজানুর রহমান সরকারি কর্মকর্তা হয়েও তার বিরুদ্ধে ওঠা অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ থেকে অব্যাহতি পাওয়ার আশায় অর্থাৎ অনুসন্ধানের ফল নিজের পক্ষে নেওয়ার অসদুদ্দেশ্যে খন্দকার এনামুল বাছিরকে অবৈধভাবে প্রভাবিত করেছেন। এজন্য ৪০ লাখ টাকা ঘুষ দিয়ে পরস্পর যোগসাজশে দ বিধির ১৬৫(ক) ধারাসহ দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৪৭-এর ৫(২) ধারা এবং মানি লন্ডারিং আইন, ২০১২-এর ৪(২) (৩) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন।

সর্বশেষ খবর