শিরোনাম
বুধবার, ২৪ জুলাই, ২০১৯ ০০:০০ টা

এখনো পানিবন্দী লাখ লাখ মানুষ

প্রতিদিন ডেস্ক

এখনো পানিবন্দী লাখ লাখ মানুষ

বগুড়ায় বাড়িঘরে উঠেছে বন্যার পানি -বাংলাদেশ প্রতিদিন

বিভিন্ন স্থানে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও অনেক জায়গায় এখনো পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে লাখ লাখ মানুষ। উজানের পাহাড়ি ঢল ও ভারি বর্ষণে তিস্তার পানি বিপদসীমা ছুঁই ছুঁই করছে। ফলে ফের বন্যার পদধ্বনিতে শঙ্কিত লালমনিরহাটের তিস্তা-ধরলা পাড়ের হাজারো পরিবার। বন্যার পানিতে বগুড়ায় কমপক্ষে ৭৩টি গ্রাম নিমজ্জিত হয়েছে। বন্যাকবলিত এলাকায় ত্রাণের পরিমাণ অপ্রতুল। গাইবান্ধার বিস্তীর্ণ অঞ্চল বন্যা প্লাবিত অবস্থায় রয়েছে। বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্র এবং বাঁধে আশ্রয় নেওয়া হাজার হাজার মানুষ এখনো তাদের ঘরে ফিরতে পারছে না। বন্যা দুর্গত মানুষের মধ্যে ত্রাণের জন্য হাহাকার অবস্থা বিরাজ করছে। আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর- জামালপুর প্রতিনিধি : জামালপুরের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে শুরু করেছে। যমুনা নদীর পানি বাহাদুরাবাদ পয়েন্টে বিপদসীমার ৪১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হলেও ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বইছে বিপদসীমার নিচ দিয়ে। বন্যার পানি নেমে যাওয়ার সঙ্গে দেখা দিচ্ছে নানা দুর্ভোগ। ব্রহ্মপুত্র নদের পানি গতকাল সকাল থেকে বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হলেও, এখনো বিপদসীমার ৪১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে যমুনা নদীর পানি। ফলে অনেক বসতবাড়ি থেকে বন্যার পানি নেমে না যাওয়ায় এখনো পানিবন্দী রয়েছে অন্তত সাত লাখ মানুষ। ফসলি জমিসহ বেশিরভাগ জায়গা পানিতে তলিয়ে থাকায় নিম্ন আয়ের মানুষরা কর্মহীন অবস্থায় মানবেতর জীবনযাপন করছে। অনেককেই অর্ধাহারে দিনযাপন করছে। বন্যা দুর্গত এলাকায় ত্রাণের সংকট রয়েছে। বন্যার পানিতে বেশিরভাগ নলকূপ তলিয়ে যাওয়ায় বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে। সংকট রয়েছে গো খাদ্যের। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত ১ হাজার ৪৩০ মেট্রিক টন চাল, ১৭ লাখ ৩০ হাজার নগদ টাকা এবং ৪ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে এবং বরাদ্দকৃত সেসব ত্রাণ বিতরণ প্রায় শেষ হয়ে গেছে। লালমনিরহাট : উজানের পাহাড়ি ঢল ও ভারি বর্ষণে তিস্তার পানি বিপদসীমা ছুঁই ছুঁই করছে। বিকাল থেকে ধরলার পানি কুলাঘাট পয়েন্টে ৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে ফের বন্যার পদধ্বনিতে শঙ্কিত লালমনিরহাটের তিস্তা-ধরলা পাড়ের হাজারো পরিবার। গতকাল সন্ধ্যা ৬টায় তিস্তা ব্যারাজ ডালিয়া পয়েন্টে পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয় ৫২ দশমিক ৬০ সেন্টিমিটর। ধরলার পানি বেড়ে গতকাল সন্ধ্যায় বিপদসীমার ৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে বইছে।

এতে ফের বন্যার শঙ্কায় রয়েছে তিস্তা-ধরলা পাড়ের মানুষ। স্থানীয়রা জানান, উজানের পাহাড়ি ঢল ও ভারি বৃষ্টিতে তিস্তা নদীর পানি প্রবাহ বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে লালমনিরহাটের ৫টি উপজেলার তিস্তা অববাহিকার চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চলগুলো প্লাবিত হয়ে প্রায় ১০-১১ হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। তিস্তা ব্যারাজের ডালিয়ার নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম বলেন, ব্যারাজ রক্ষার্থে সবগুলো কপাট খুলে দিয়ে পানি প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। এতে তিস্তার চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চলগুলো প্লাবিত হয়েছে।

বগুড়া : বন্যায় তিন উপজেলার মধ্যে দুটি উপজেলায় পানি কমলেও অপরটিতে পানি বেড়ে ব্যাপক বন্যা দেখা দিয়েছে। যমুনা নদীতে পানি কমে বিপদসীমার ২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে। তবে বাঙালি নদীর পানি বিপদসীমার প্রায় ৯৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে যাচ্ছে বলে সোনাতলা উপজেলায় বানভাসিদের সংখ্যা বেড়েছে। বগুড়া জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আজাহার আলী ম ল জানান, গত তিন দিনের বন্যার পানিতে সোনাতলা উপজেলায় কমপক্ষে ৭৩টি গ্রাম নিমজ্জিত হয়েছে। এর সঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রায় ৮০ হাজার মানুষ। সোনাতলায় এখন পর্যন্ত ১২০টি বাড়ি সম্পূর্ণরূপে ভেঙে যাওয়ার হিসাব পাওয়া গেছে। রাস্তা ক্ষতি হয়েছে প্রায় ২২ কিলোমিটার। সাড়ে ৫ হাজার হেক্টর জমির বিভিন্ন ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ত্রাণ দেওয়া অব্যাহত রয়েছে। বগুড়ার সোনাতলা উপজেলার তেকানীচুকাইনগর ইউপি চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ শামছুল হক জানান, তার ইউনিয়নের সাতটি চরের অর্ধশত ঘরবাড়ি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।

শেরপুর : সদর উপজেলার ১৪ ইউনিয়নের সবগুলো ইউনিয়নে বন্যা পরিস্থির সামান্য উন্নতি হয়েছে। ২০ জুলাই সকাল থেকে পানি বৃদ্ধি না হওয়ায় দুর্গত এলাকা থেকে পানি নামতে শুরু করেছে। ডুবে যাওয়া বাড়িঘরসহ রাস্তা-ঘাট, খেত-খামার আস্তে আস্তে ভাসতে শুরু করেছে। পানি নেমে যাওয়ার পর দেখা গেছে কৃষকের অসংখ্য সবজি খেত, পাট খেত, বীজতলা নষ্ট হয়ে গেছে। গো খাদ্যের চরম সংকট দেখা দিয়েছে। বন্যাকবলিত এলাকা ও আক্রান্ত মানুষের তুলনায় সরকারি-বেসরকারি ত্রাণের পরিমাণ খুবই অপ্রতুল। বন্যা দুর্গত মানুষের মধ্যে ত্রাণের জন্য হাহাকার অবস্থা বিরাজ করছে।

 

গাইবান্ধা : ব্রহ্মপুত্রের পানি ৩৪ সেন্টিমিটার কমেছে তবে তা বিপদসীমার এখনো ৩৪ সেন্টিমিটার ওপরে রয়েছে। অন্যদিকে ঘাঘট নদীর পানি ২২ সেন্টিমিটার কমে বিপদসীমার ১৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি এখনো অপরিবর্তিত রয়েছে। পানি কমতে থাকলেও সুন্দরগঞ্জ, সাঘাটা, ফুলছড়ি ও সদর উপজেলার বিস্তীর্ণ অঞ্চল বন্যা প্লাবিত রয়েছে। বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্র এবং বাঁধে আশ্রয় নেওয়া ৮০ হাজার মানুষ তাদের ঘরে ফিরতে পারেনি। বাঙ্গালি ও করতোয়া নদীর বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় পলাশবাড়ী ও গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার পৌরসভাসহ কয়েকটি গ্রামে নতুন করে পানি প্রবেশ করছে। এ ছাড়াও ঘাঘট নদীর শহর রক্ষা বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় খোলাহাটি ইউনিয়নের চকমামরোজপুর, কাজীপাড়া, বাহারবন পশ্চিমপাড়া, সরকারপাড়ার কিছু অংশ এবং ডেভিডকোম্পানীপাড়ার পশ্চিম অংশে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। গতকাল সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, আশ্রিতরা কিছু খাদ্য সহায়তা পেলেও বৃষ্টি ও রোদ থেকে রক্ষা পেতে তাঁবু বা পলিথিনের জন্য হাহাকার করছেন।

রংপুর : তিস্তা নদীর পানি কমলেও তীব্র স্রোতে রংপুরে ৩ হাজার ঘর-বাড়িসহ ফসলের খেত নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। গঙ্গাচড়া উপজেলার বিনবিনার চরের ৫০০ মিটার গ্রাম প্রতিরক্ষা বাঁধ নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। হুমকির মুখে রয়েছে গুচ্ছগ্রাম, বসত-বাড়ি ও ফসলি জমি। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, তিস্তার পানি কমে গিয়ে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও বেড়েছে নদী ভাঙন। ভাঙনের কবলে পড়ে চর চিলাখাল, বিনবিনার চর, চর মটুকপুরের ৩ হাজারের বেশি ঘর-বাড়ি, ভুট্টা খেত, সবজি খেত নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এতে করে ভাঙন কবলিতরা খোলা আকাশের নিচে উঁচু বাঁধে আশ্রয় নিয়েছে। বাড়ি ভিটা, ফসলের মাঠ হারিয়ে তারা অসহায় হয়ে পড়েছে।

সিরাজগঞ্জ : যমুনা নদী সিরাজগঞ্জের জন্য অভিশাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বন্যায় পাঁচটি উপজেলার ৩৯টি ইউনিয়ন ও তিনটি পৌরসভার ৪০০টি গ্রাম সম্পূর্ণ প্লাবিত হয়েছে। এসব এলাকার প্রায় সোয়া তিন লাখেরও বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। এ ছাড়াও ক্ষতিগ্রস্ত ঘর-বাড়ির সংখ্যা ৫০ হাজার ৩১৮টি। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বিপুল সংখ্যক রাস্তা, ব্রিজ, কালভার্ট ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। জেলার ১৫ হাজার ৯৫৯ হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত এসব মানুষ পরিবার-পরিজন নিয়ে খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবনযাপন করছে। আয়-রোজগার না থাকায় খেয়ে না খেয়ে জীবনযাপন করছে। সিরাজগঞ্জের চৌহালীতে বন্যার পানিতে ডুবে মরিয়ম খাতুন (৮) নামের এক স্কুলছাত্রী নিখোঁজ হয়েছে। সে চরকুকরী পশ্চিম পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী ও কুকরী কলেজ পাড়া মহল্লার সবজি ব্যবসায়ী বাবু সিকদারের মেয়ে। নিখোঁজের ভাই আরিফুল ইসলাম জানান, গতকাল দুপুরে বান্ধবীদের সঙ্গে বাড়ির পাশে যমুনা নদীর খালে গোসল করতে যায়। এ সময় বন্যার পানিতে ডুবে মরিয়ম তলিয়ে যায়। অনেক খুঁজেও তাকে পাওয়া যায়নি।

নীলফামারী : ডিমলা উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। গতকাল ব্যারাজ পয়েন্টে নদীর পানি বিপদসীমার ২৮ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়। ডিমলা উপজেলার টেপাখড়িবাড়ি ইউপি চেয়ারম্যান ময়নুল হক বলেন, তিস্তার পানি বাড়া-কমায় ভোগান্তি কমছে না তিস্তাপাড়ের মানুষের।

 

সর্বশেষ খবর