বৃহস্পতিবার, ২৫ জুলাই, ২০১৯ ০০:০০ টা

দুই সিটির সমন্বয়হীনতায় নিয়ন্ত্রণে আসছে না ডেঙ্গু

মৃত বেড়ে ২৬, তিন আক্রান্তকে পাওয়া গেল গাইবান্ধায়, ভবনে লার্ভা পাওয়া গেলে জরিমানা

জয়শ্রী ভাদুড়ী

দুই সিটির সমন্বয়হীনতায় নিয়ন্ত্রণে আসছে না ডেঙ্গু

রাজধানীতে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী প্রতিদিনই বাড়ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় সরকারি হিসাবে ৫৬০ জন মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন। এ বছরের জানুয়ারি থেকে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা লাখ ছাড়িয়েছে। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে না আসার পেছনে দুই সিটি করপোরেশনের সমন্বয়হীনতাকে দায়ী করা হচ্ছে। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা যায়, রুটিন কাজ হিসেবে ওয়ার্ডগুলোয় ছিটানো হচ্ছে মশার ওষুধ। ড্রেন, নালাসহ নানা জায়গায় ওষুধ ছিটানো হচ্ছে। কারও বাড়িতে পৌঁছাচ্ছে না এই ধোঁয়া। তাই এক জায়গায় ওষুধ ছিটালে মশা অন্য জায়গায় চলে যাচ্ছে। এটা শুধুই লোক দেখানো বলে অভিযোগ করেন এলাকাবাসী। এর আগেই গবেষণায় প্রমাণ মিলেছে, এসব ওষুধে মরছে না মশা। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ বলেন, সিটি করপোরেশনের সীমারেখা থাকলেও মশার তো কোনো সীমানা নেই। তাই একেক দিন একেক জায়গায় মশক নিধন অভিযান চালিয়ে ডেঙ্গুকে নিয়ন্ত্রণে আনা যাবে না। এর জন্য প্রয়োজন সমন্বিত পরিকল্পনা। দুই সিটি করপোরেশনকে একসঙ্গে পুরো রাজধানীতে মশক নিধন অভিযান চালাতে হবে। সমন্বয়হীনতার কারণে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। গতকাল রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আয়োজিত বৈজ্ঞানিক সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন। ‘এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গুজ্বরের যথোপযুক্ত চিকিৎসা, নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ’ শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. নজরুল ইসলাম। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ এবং প্যানেল বক্তা ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের রিউমাটোলজি বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সৈয়দ আতিকুল হক। অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ বলেন, ডেঙ্গু আক্রান্ত হলে আগে গায়ে র‌্যাশ উঠত, শরীরে ব্যথা হতো, জ্বরে তাপমাত্রা বেশি থাকত। কিন্তু এবার এসব উপসর্গে পরিবর্তন এসেছে। জ্বরের তাপমাত্রা কম থাকছে, র‌্যাশও উঠছে না। ধরন পাল্টানোয় ডেঙ্গু জটিল হচ্ছে। উপসর্গ পাল্টানোয় রোগীও বুঝতে পারছেন না তিনি ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন। এজন্য জ্বর অনুভূত হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে তবে এটাকে মহামারি বলা যাবে না। বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন বলেন, ‘ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাবে মানুষ অতিষ্ঠ। আমরা দুই মেয়রকে জানিয়েছি। কিন্তু তারা যেসব প্রোগ্রাম করছেন সেখানে চিকিৎসকদের ডাকছেন না। মশার বংশ বিস্তার রোধে তারা যেসব ওষুধ ছিটাচ্ছেন তাতেও কাজ হচ্ছে না।’

২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত ৫৬০ : সরকারি হিসাবে গত ২৪ ঘণ্টায় ৫৬০ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে রাজধানীর বাইরে ৪৪ জন। এ বছরের জানুয়ারি থেকে গতকাল পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন ৮ হাজার ৫৫৭ জন। এ পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা ৮। তবে বেসরকারি হিসাবে ১ লাখ ছাড়িয়েছে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা। মৃতের সংখ্যা ২৬। রাজধানীর বাইরে আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা। এ পর্যন্ত গাজীপুরে ৪২, চট্টগ্রামে ৭১, খুলনায় ৪০, যশোরে ৫, বরিশালে ২১ জন আক্রান্ত হয়েছেন।

মশা নিধনে দুই সিটি করপোরেশনের ভ্রাম্যমাণ আদালত : এডিস মশার বংশ বিস্তার রোধে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন অভিযান চালিয়েছে। যেসব প্রতিষ্ঠানের নির্মাণাধীন ভবনে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া গেছে তাদের জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সাজিদ আনোয়ারের নেতৃত্বে রাজধানীর গুলশানে অভিযান ও ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়। অভিযানে গুলশান-২-এর তিনটি ভবন নির্মাণ প্রতিষ্ঠানকে মোট ২ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। নির্মাণাধীন ভবনে বিভিন্ন স্থানে তিন দিনের বেশি জমে থাকা পানিও পাওয়া যায়। ১২ ঘণ্টার মধ্যে এগুলো পরিষ্কার করে ছবিসহ ভ্রাম্যমাণ আদালতের কাছে জানানোর নির্দেশ দেওয়া হয় তাদের। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) গতকাল ৮৬টি নির্মাণাধীন ভবন পরিদর্শন করে ১২টিতে এডিস মশার লার্ভা পেয়েছে। এসব ভবন মালিককে মোট ২ লাখ ৬৮ হাজার টাকা জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। এ নিয়ে গত তিন দিনে মোট ১৫৪টি ভবনে অভিযান চালিয়ে ২২ জন ভবন মালিককে মোট ৩ লাখ ৫৮ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। গাইবান্ধা প্রতিনিধি জানান, ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে জেলা সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন তিন ব্যক্তি। তারা তিনজনই ঢাকা থেকে আক্রান্ত হয়ে গাইবান্ধা এসেছেন বলে চিকিৎসক মনে করছেন। আক্রান্তরা হলেন গাইবান্ধা শহরের বানিয়ারজান এলাকার রাশেদুল ইসলাম (২২), মমিনপাড়ার প্রিয়া আক্তার (২০) এবং সুন্দরগঞ্জ উপজেলার শিবরাম গ্রামের সাগর খন্দকার (১৯)।

সর্বশেষ খবর