শুক্রবার, ২৬ জুলাই, ২০১৯ ০০:০০ টা
ভালুকায় খামার

রপ্তানি হচ্ছে কুমিরের চামড়া

মো. আসাদুজ্জামান সুমন, ভালুকা (ময়মনসিংহ)

রপ্তানি হচ্ছে কুমিরের চামড়া

২০০৪ সালে ভালুকা উপজেলার হাতিবেড় গ্রামে বাণিজ্যিকভাবে কুমির চাষের জন্য রেপটাইল্্স ফার্ম লিমিটেড ১৩ একর ৫৬ শতক জমি ক্রয় করে। বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। অনেকের হাসি-তামাশা ও উপহাসের সম্মুখীন হতে হয়েছে প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের। কারও কথায় পাত্তা না দিয়ে ২০০৪ সালের ২২ ডিসেম্বর ৭৪টি কুমির নিয়ে শুরু হয় খামারটির পথচলা। মালয়েশিয়ার সারওয়াত থেকে সোয়া কোটি টাকা ব্যয়ে আনা হয় ওই ৭৪টি কুমির। সেই প্রতিষ্ঠানটি সফলতার মুখ দেখেছে খুব অল্প সময়ের মধ্যে। ছয় বছর পর ২০১০ সালে গবেষণার জন্য জার্মানির হাইডেলবার্গ নামের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছোট-বড় মিলিয়ে ৬৯টি হিমায়িত কুমির ১ কোটি টাকায় বিক্রি করে প্রতিষ্ঠানটি। ২০১৩ সালের আক্টোবরে গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে উপহার হিসেবে পাঁচটি কুমির দেওয়া হয়। এই খামার থেকে প্রতিবছর ৩০০ কুমিরের চামড়া রপ্তানি হচ্ছে বিদেশে, যার বাজারমূল্য প্রায় ২ কোটি টাকা। বর্তমানে ছোট-বড় মিলিয়ে আড়াই হাজার কুমির রয়েছে এ খামারে। কুমিরের প্রজনন ও বাসযোগ্য করে খামারটি গড়ে তোলায় ঈর্ষণীয় সফলতার মুখ দেখেছে প্রতিষ্ঠানটি। খামারের ব্যবস্থাপক ডা. আবু সাইম মোহাম্মদ আরিফ জানান, খামারে ছয়-সাত বছর বয়সের একটি মা-কুমির বছরে একবার (এপ্রিল-মে মাসে) ৬০ থেকে ৮০টি করে ডিম দেয়। ডিম ফুটতে সময় লাগে ৭০ থেকে ৮০ দিন। প্রজনন মৌসুমে মা-কুমিরের দেওয়া ডিম থেকে প্রতিবছর কৃত্রিম উপায়ে কুমিরের বাচ্চা উৎপাদন হয় এখানে। এগুলোকে ধাপে ধাপে নিবিড় পরিচর্যার মাধ্যমে হ্যাচারিতে স্থানান্তর করা হয়। খামারের রক্ষণাবেক্ষণ কর্মীদের সঙ্গে কুমিরগুলোর তৈরি হয়েছে অন্য রকম এক সখ্য। বর্তমানে খামারে প্রায় অর্ধশত পুকুর রয়েছে। তিনি বলেন, ‘রপ্তানিযোগ্য কুমিরগুলো হ্যাচারি থেকে তুলে এনে আলাদা শেডে রাখা হয়। ছয় থেকে আট মাস সেখানে রেখে নানা প্রক্রিয়ার পর কুমির থেকে চামড়া আলাদা করে বিদেশে রপ্তানি করা হয়। বর্তমানে প্রতিবছর প্রায় ৩০০ থেকে ৪০০ কুমিরের চামড়া বিদেশে রপ্তানি করা হচ্ছে। গত চার বছরে আমরা মোট ১ হাজার ২৫৬টি কুমিরের চামড়া রপ্তানি করেছি। আমাদের উদ্দেশ্য ২০২১-২২ সালে এখান থেকে প্রতিবছর ১ হাজার কুমিরের চামড়া রপ্তানি করা। সরকারের অনুমতি পেলে দেশের ফাইভ স্টার হোটেলে বিদেশি লোকের জন্য কুমিরের মাংস বিক্রি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব। এ ছাড়া কুমিরের দাঁত, হাড়সহ অন্যান্য অংশ বিদেশে রপ্তানি করারও পরিকল্পনা রয়েছে আমাদের।’ স্থানীয় বাসিন্দা লুৎফর রহমান রিপন বলেন, ‘অজপাড়াগাঁয়ে এ প্রকল্পটি চালু হওয়ায় এখানে এলাকার শতাধিক মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। প্রথম দিকে কুমির চাষের মতো বিষয়টি এলাকার মানুষের কাছে হাস্যকর ব্যাপার ছিল। কিন্তু বর্তমানে আমার এলাকায় প্রতিষ্ঠিত এ খামারটি বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখায় আমি গর্বিত।’ উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. হেলাল আহম্মদ বলেন, ‘আমাদের কাছে কুমির খামারের লোকজন চিকিৎসা-সংক্রান্ত কোনো সহযোগিতা চাইলে আমরা তা করে আসছি এবং ভবিষ্যতেও তাদের পাশে আমরা থাকব।

সর্বশেষ খবর