শুক্রবার, ২৬ জুলাই, ২০১৯ ০০:০০ টা

গহনার বদলে আলু পটোল ঘড়ি হয় পিয়াজ

মির্জা মেহেদী তমাল

গহনার বদলে আলু পটোল ঘড়ি হয় পিয়াজ

লক্ষ্মীপুরের পিয়াস সরকার ‘স্মার্ট শপ ঢাকা’ নামে একটি অনলাইন পেজে ঢুকে একটি স্মার্ট ঘড়ি অর্ডার করেন। ঘড়িটির দাম ১ হাজার ৮০০ টাকা। ঘড়িটি পেতে ৬০ টাকা এসএ পরিবহনকে বাড়তি বিল দিতে ওই অনলাইন  থেকে জানানো হয় তাকে। বিক্রেতাদের সঙ্গে তার ফেসবুক পেজ ম্যাসেঞ্জারে যোগাযোগ হয়েছে। পরদিন সন্ধ্যায় এসএ পরিবহন লক্ষ্মীপুর শাখা থেকে ১৮৬০ টাকা দিয়ে তার নামে আসা ঘড়ির প্যাকেটটি গ্রহণ করেন। কিন্তু প্যাকেটটি খুলে ঘড়ির বদলে পাওয়া গেছে দুটি পিয়াজ। এরপরই তিনি বিল ভাউচারে থাকা বিক্রেতাদের নম্বরে কল দিয়েও যোগাযোগ করতে পারেননি।

পিয়াস সরকার বলেন, বাক্সটি খুলে ঘড়ির বদলে পেয়েছি দুটি পিয়াজ। এরপর থেকেই ওই অনলাইনের নম্বরে কল দিয়েও যোগাযোগ করা যায়নি। পেজটিও বন্ধ দেখাচ্ছে। এ বিষয়ে এসএ পরিবহনকে জানালে তারা থানায় সাধারণ ডায়েরির কথা বলে। পরে সাধারণ ডায়েরির একটি ফটোকপি প্রসার। প্রচলিত বিক্রয়ব্যবস্থার পাশাপাশি অনলাইনের মাধ্যমে সাশ্রয়ী দামে গ্রাহকপর্যায়ে সরাসরি পণ্য পৌঁছে দিতে দেশে জনপ্রিয়তা অর্জন করছে অনলাইন ব্যবসা। আর এই সুযোগটা কাজে লাগিয়ে ভুয়া অনলাইন পেজ খুলে গ্রাহকদের সঙ্গে প্রতারণা করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে একটি চক্র। ‘অনলাইনে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠিত কোম্পানির পেজ থেকে তাদের পণ্যের ছবি নকল করে এবং একই কোম্পানির নামে ভুয়া পেজ খুলে সেখানে বিজ্ঞাপন দেয়। প্রকৃত দামের তুলনায় কয়েকগুণ কমদামে বিজ্ঞাপন দেখে পণ্যের প্রতি আকৃষ্ট হন ক্রেতারা। পছন্দের পণ্য অনলাইনে অর্ডারের পর ক্রেতারা প্রতারিত হচ্ছেন। পণ্যের পরিবর্তে প্যাকেটের ভিতর খুব নিম্নমানের পণ্য, কখনো গহনার পরিবর্তে আলু পটোল, মোবাইলের পরিবর্তে সাবান বা অন্যকিছু দিয়ে ডেলিভারি দেয় ও প্রতারিত করে।’ গত মঙ্গলবার রাজধানীর মোহাম্মদপুর ও মৌচাক এলাকায় অভিযান চালিয়ে এ ধরনের সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের ১৩ সদস্যকে গ্রেফতার করে রিমান্ডে নিয়েছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সিরিয়াস ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন বিভাগ। এ সময় তাদের কাছ থেকে ৯১টি মোবাইল, ৫টি ল্যাপটপ, একটি পিসি, ১টি প্রিন্টার, নিম্নমানের ৩০টি শাড়ি, ১০টি থ্রি পিসসহ বিভিন্ন নিম্নমানের পণ্য এবং প্যাকেজিং মালামাল জব্দ করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাদে গ্রেফতাররা পুলিশকে জানিয়েছে, তারা ফেসবুকে মিম ফ্যাশন, নিউ ফ্যাশন বিডি, কেজেড ফ্যাশন, রোজ ফ্যাশন বিডি, বিক্রয় বাজার বিডি, ইন্ডিয়ান থ্রি পিস গ্যালারি, শাধমার্ট বিডি, এসএম ফ্যাশন, স্টাইল জোন, এমজেড ফ্যাশন, ¯িœগ্ধা ফ্যাশন, সানজু ফ্যাশন, শাড়িস হাউস, বিশ্ব বাজার, ব্র্যান্ড শপসহ বিভিন্ন নামে পেইজ খুলে গুগল হতে ছবি ডাউনলোডের পর এডিট করে পেইজে আপলোডের মাধ্যমে ক্রেতাদের আকৃষ্ট করে। ক্রেতারা যে পণ্যেরই অর্ডার করুক না কেন প্রতারকরা তাদের কাছে থাকা নিম্নমানের পণ্য এবং অত্যন্ত কমদামি ইলেক্ট্রনিক পণ্য সরবরাহ করে। সিরিয়াস ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন বিভাগের শুটিং ইনসিডেন্ট ইনভেস্টিগেশনের সিনিয়র সহকারী কমিশনার আশরাফ উল্লাহ বলেন, এরা সবাই বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। এই চক্রটি অনলাইনে বিভিন্ন পেজ খুলে নানা কৌশলে প্রতারণা করে আসছিল। আমরা ইতিমধ্যে শতাধিক পেজ শনাক্ত করেছি। তিনি বলেন, এসব অনলাইন শপ থেকে যে কোনো পণ্য কেনার আগে অবশ্যই যাচাই-বাছাই করতে হবে। অন্যথায় প্রতারণার শিকার হওয়ার আশঙ্কা থাকবে। অনলাইনে পণ্য কিনে প্রতারণার শিকার মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান নামে এক ব্যক্তি জানান, তার স্ত্রী হোসনে আরা খানম রোজী গত ২৫ এপ্রিল ‘ফ্যাশন টাচ’ নামের একটি অনলাইন শপ থেকে দুটি গাউন অর্ডার করেন। সে হিসাবে ২৭ এপ্রিল তারিখে এ্যালিফ্যান্ট রোডের গাউছিয়া সংযোগ সড়ক সংলগ্ন এসএ পরিবহনের মাধ্যমে গাউন দুটি পাঠালে ৪ হাজার ৫০০ টাকা পরিশোধ করা হয়। পরে বাসায় এসে প্যাকেট খুললে দুটি ১৫০ টাকার শাড়ি পাওয়া যায়। পরে আমার স্ত্রী অনলাইন শপের পেজে থাকা নম্বরে ফোন করে বিষয়টি তাদের অবহিত করেন। এরপর তারা এক সপ্তাহের মধ্যে সমাধান দেওয়ার আশ্বাস দেয়। কিন্তু এক সপ্তাহ পরে তারা ফোন রিসিভ করা বন্ধ করে দেয়। পরে তাদের ক্যাশ মেমোতে উল্লিখিত মৌচাকের ১৫৪/২-এ নম্বর দোকানেরও কোনো হদিস পাওয়া যায়নি। এ বিষয়ে চলতি মাসের ২২ তারিখে প্রতারণার অভিযোগ এনে নিউমার্কেট থানায় একটি মামলা (নং-১২) দায়ের করা হয়। পুলিশ সূত্র জানায়, এ চক্রের মূলহোতা ওমর আলী। তারা মৌচাক মার্কেটের ৪র্থ তলায় একটি দোকান ভাড়া নিয়ে একেকজন এক একটি অনলাইন পেজ চালাত।

আর পেজগুলোতে দেওয়া হতো ভুয়া ঠিকানা। ক্রেতা আকৃষ্টের জন্য পণ্যের দামও দেওয়া হতো খুবই অল্প। তাদের রকমারি পণ্যের মধ্যে কেউ যদি পোশাক অর্ডার করত তাহলে সেটি যত দামিই হোক না কেন কপালে জুটত ১৫০ টাকার কাপড়।

 

সর্বশেষ খবর