শুক্রবার, ২ আগস্ট, ২০১৯ ০০:০০ টা

বন্যায় বিপর্যস্ত সড়ক

ভাঙছে ঘরবাড়ি, দিশাহারা মানুষ

নিজস্ব প্রতিবেদক

বন্যায় বিপর্যস্ত সড়ক

সিরাজগঞ্জে নদীভাঙনের কবলে ঘরবাড়ি -বাংলাদেশ প্রতিদিন

দেশের সব নদ-নদীর পানি কমলেও বন্যা উপদ্রুত এলাকার মানুষের দুর্ভোগ কমেনি। বন্যার পানির তোড়ে রাস্তা, সড়ক ও ব্রিজ ভেঙে যাওয়ায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে গ্রামীণ যোগাযোগ ব্যবস্থা। বেহাল সড়কের কারণে দুর্ভোগ পোহাচ্ছে বানভাসি মানুষ। এদিকে কিশোরগঞ্জের ইটনায় হাওরের পানিতে ডুবে দুই যমজ শিশুর মৃত্যু হয়েছে। সিরাজগঞ্জে বন্যার পানি কমলেও যমুনার অব্যাহত ভাঙনে দিশাহারা হয়ে পড়ছেন বন্যাকবলিতরা। বগুড়ার ৬ উপজেলার বন্যার কারণে সম্পূর্ণরূপে বিলীন হয়েছে ৬৭০টি বাড়ি। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-

গাইবান্ধা : গাইবান্ধায় এবারের ভয়াবহ বন্যায় জেলা, উপজেলা ও গ্রাম পর্যায়ের সড়ক, ব্রিজ ও কালভার্টগুলো মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিপন্ন যোগাযোগ ব্যবস্থায় এলাকাবাসী দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। অন্যদিকে ৩৬৯টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তিন সপ্তাহ যাবৎ জলমগ্ন এবং আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করায় ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এখনো পাঠদান শুরু হয়নি। গাইবান্ধা-সাঘাটা সড়কের কুকড়ারহাট এলাকায় বন্যার পানির তোড়ে ৬০০ ফুট রাস্তা ভেঙে যাওয়ায় রাস্তার মাটি সরে গেছে।

কিশোরগঞ্জ : ইটনায় হাওরের পানিতে ডুবে দুই যমজ শিশুর মৃত্যু হয়েছে। গতকাল সকালে ইটনা সদর ইউনিয়নের হিরণপুর মিরাকান্দি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। তারা হলো আলিম উদ্দিনের তিন বছর বয়সী শিশু সন্তান জুয়েল ও সোহেল। ইটনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোর্শেদ জামান জানান, সকালে বাড়ির পাশে খেলা করার সময় সবার অজান্তে হাওরের পানিতে ডুবে যায় তারা। বেশ কিছুক্ষণ পর বাড়ির লোকজন বাড়ির সামনের হাওরে খোঁজাখুজি করে তাদের লাশ উদ্ধার করে।               সিরাজগঞ্জ : বন্যার পানি কমলেও যমুনার বিভিন্ন পয়েন্টে ভাঙন শুরু হয়েছে। অব্যাহত ভাঙন ও বন্যায় বসতবাড়ির ক্ষতি হওয়ায় দিশাহারা বন্যাকবলিতরা। বন্যায় বসতভিটা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও রাস্তাঘাটের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। কৃষকের ফসলগুলো নষ্ট হয়ে পানির মধ্যে পচে আছে। সরকারি হিসেবে এ বছর বন্যায় জেলার ৪০৮টি গ্রামের সোয়া তিন লাখ মানুষ ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়েছে। ৫০ হাজার বসতভিটা ক্ষতি হয়েছে। 

বগুড়া : বগুড়ায় যমুনা নদীর পানি দ্রুত হ্রাস পাওয়ায় সারিয়াকান্দি উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও বানভাসিদের দুর্ভোগ কমেনি। জেলার ৬টি উপজেলার ৩৭৭টি গ্রামের প্রায় সাড়ে ৩ লাখ মানুষ পানিবন্দী হয়ে এখন দুর্ভোগের শিকার হয়েছে। সম্পূর্ণরূপে বাড়ি বিলীন হয়েছে ৬৭০টি।

কুড়িগ্রাম : কুড়িগ্রামে টানা ১২ দিন ধরে বন্যার কবলে পড়ে জেলার ৭৬টি ইউনিয়নের মধ্যে ৫৭টি ইউনিয়নের ৮৯৪টি গ্রাম ডুবে গেছে। দীর্ঘদিন পানিবন্দী থাকায় প্রায় ২০ হাজার হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়ে গেছে।

জামালপুর : যমুনার পানি বিপদসীমার নিচে নেমে আসায় জামালপুরের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। পানি নেমে যাওয়ায় আশ্রয় কেন্দ্র ছেড়ে বাড়িঘরে ফিরতে শুরু করেছে বানভাসি মানুষ। বিধ্বস্ত বাড়িঘর আর ভঙ্গুর রাস্তার কারণে এখনো স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় ফিরতে পারছে না তারা। কর্মসংস্থানের অভাবে নি¤œ আয়ের মানুষের দুই মুঠো খাবারের জন্য ত্রাণ সহায়তাই ভরসা। জামালপুরে টানা ১৭ দিন যমুনার পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় জেলার ৬২টি ইউনিয়নের প্রায় ১৩ লাখ মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়ে। বন্যার পানিতে তলিয়ে থাকা বাড়িঘর, রাস্তাঘাট থেকে পানি নেমে যাওয়ায় ইতিমধ্যেই বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্র, উঁচু সড়ক আর বাঁধ ছেড়ে ঘরে ফিরতে শুরু করেছে বন্যাদুর্গতরা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর