শুক্রবার, ২ আগস্ট, ২০১৯ ০০:০০ টা

বরেন্দ্রর মিঠাপানিতে গলদা চাষ

কাজী শাহেদ, রাজশাহী

বরেন্দ্রর মিঠাপানিতে গলদা চাষ

রাজশাহী অঞ্চলে গত কয়েক বছরে কার্পজাতীয় মাছ চাষে বিপ্লব ঘটেছে। লাভজনক হওয়ায় এ খাতে প্রায় এক লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। কার্পজাতীয় মাছের পাশাপাশি এবার রাজশাহীর বরেন্দ্রর পুকুরের মিঠাপানিতে বিপুল সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে গলদা চিংড়ি চাষের। এরই মধ্যে এ অঞ্চলের পুকুরে গলদা চিংড়ির পরীক্ষামূলক চাষও শুরু হয়েছে। এতে সফল হলে পুকুরের চিংড়িতে যোগ হবে অর্থনীতির নতুন মাত্রা। এরই মধ্যে রাজশাহীর বরেন্দ্র অঞ্চলের গোদাগাড়ী ও পবা উপজেলায় মিঠাপানিতে গলদা চিংড়ি চাষ শুরু হয়েছে। লাভের মুখও দেখেছেন চাষিরা। মৎস্য বিভাগের সহযোগিতা ও পৃষ্ঠপোষকতায় মিঠাপানিতে চিংড়ি চাষ আরও বাড়ছে। ফলে খুলে যাচ্ছে এ অঞ্চলের মৎস্যচাষিদের ভাগ্য। রাজশাহীর দুই উপজেলায় সীমিত আকারে পরীক্ষামূলক গলদা চিংড়ির চাষে সফলতার আভাস মিলেছে। পুরো পুকুরে নেট দিয়ে ঘিরে সেখানে চাষ হচ্ছে গলদা চিংড়ির। বাণিজ্যিক ভিত্তিতে এ মাছ চাষে চাষি ও সরকার এগিয়ে এলে এ অঞ্চলে ভাগ্য বদলাবে- এমনটাই আশা করছেন মৎস্য-সংশ্লিষ্টরা। কয়েক বছর আগেও এ অঞ্চলের মৎস্যচাষিরা চিংড়ি চাষে লোকসানের ভয়ে নিরুৎসাহী হয়েছেন। তবে ২০১৫ সালে স্থানীয় মৎস্য বিভাগের কর্মকর্তাদের উৎসাহে চিংড়ি চাষের প্রশিক্ষণ নিয়ে প্রথমবারের মতো পবার কর্ণহারের শহিদুল ইসলাম ও হরিয়ানের আলী আকবর পরীক্ষামূলকভাবে আলাদা পুকুরে চিংড়ি চাষ শুরু করেন। সব আশঙ্কা ও ভীতিকে পেছনে ফেলে এখন মিঠাপানির গলদা চিংড়ি আশার সঞ্চার করেছে তাদের। পবা উপজেলার কর্ণহারের চিংড়ি চাষি শহিদুল ইসলাম জানান, তিনি নাটোর থেকে পিএল (পোস্ট লার্ভি বা পোনা চিংড়ি) সংগ্রহ করেন। আগে থেকে চিংড়ি চাষে উপযোগী করে রাখা পুকুরে ওইসব পিএল ছেড়ে দেন। পিএলগুলো মাত্র ২০ থেকে ৪৫ দিনে সুষ্ঠুভাবেই বেড়ে উঠে কিশোর চিংড়িতে পরিণত হয়। হরিয়ানের আলী আকবর বলেন, তিনি শহিদুলের কাছ থেকে কিশোর চিংড়ি সংগ্রহ করে পুকুরে ছাড়েন। তিনি মিশ্র হিসেবে চাষ করেই ভালো লাভ পান। মাত্র পাঁচ থেকে সাত মাসেই এসব চিংড়ি বাজারে বিক্রি করা যায়। রাজশাহী জেলা মৎস্য কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জেলার ২০ জন মৎস্যচাষি পরীক্ষামূলক গলদা চিংড়ির চাষ শুরু করেছেন। এখনো লাভের দিকটা তেমন না হলেও পুকুরের চিংড়িতে সফলতার ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। গোদাগাড়ী ও পবা উপজেলার বরেন্দ্রভূমির পুকুরের মিঠাপানিতে গলদা চিংড়ি চাষ করে ব্যাপক সফলতার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। মৎস্য বিভাগের সূত্র জানায়, গলদা চিংড়ি চাষে বিশেষ কোনো পরিচর্যার প্রয়োজন হয় না। অন্যান্য কার্পজাতীয় মাছের সঙ্গেই চিংড়ি সহজে চাষ করা যায়। তবে আলাদা চাষ করলে তুলনামূলক ভালো ফল পাওয়া যায়। খাদ্যের ক্ষেত্রেও বিশেষ কোনো পার্থক্য নেই। গলদা চিংড়ি পাঁচ-ছয় মাসের মধ্যেই পরিপক্ব হয়ে ওঠে। ছয় মাসের মধ্যে এদের ওজন ১২০ থেকে ১৪০ গ্রাম পর্যন্ত হয়। লাভও প্রচুর। জেলা মৎস্য কর্মকর্তা অলক কুমার সাহা জানান, বরেন্দ্র অঞ্চলসহ জেলায় পুকুরের মিঠাপানিতে গলদা চিংড়ির চাষ সম্ভব। কারণ গলদা চিংড়ি স্বাদু পানিতেই বেড়ে ওঠে। তবে বাজারজাতে এখনো অসুবিধা আছে। মৎস্যচাষিদের সহযোগিতা দেওয়ার জন্য মৎস্য বিভাগের যথেষ্ট প্রস্তুতি আছে।

সর্বশেষ খবর