সোমবার, ৫ আগস্ট, ২০১৯ ০০:০০ টা

এবার টিকে থাকার লড়াই

নিজস্ব প্রতিবেদক

এবার টিকে থাকার লড়াই

জামালপুরের ইসলামপুর উপজেলায় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক -বাংলাদেশ প্রতিদিন

বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় এখন বানভাসি মানুষ টিকে থাকার লড়াইয়ে ব্যস্ত। ঘরবাড়ি, ফসল, বীজতলা এবং সহায় সম্বল হারিয়ে বিপাকে রয়েছেন তারা। কাজের কোনো ব্যবস্থা নেই। খেয়ে পরে বাঁচার পথ খোলা নেই। বন্যার পানি নেমে যাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোতে বেরিয়ে পড়েছে ক্ষতচিহ্ন। এই অবস্থায় টিকে থাকার যুদ্ধে সরকারি সহায়তা কামনা করছেন বন্যার্তরা। বিশেষ করে পরবর্তী কৃষি পুনর্বাসনে সরকারি সহায়তার দাবি জানিয়েছেন তারা। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-গাইবান্ধা : বন্যার পানি নেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই গাইবান্ধার বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার কৃষকরা চরম বিপাকে পড়েছেন। কেননা বন্যাকবলিত জমিতে বিদ্যমান ফসল, শাক-সবজি, আমন ধানের বীজতলা এবং আউশ ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। তদুপরি চরাঞ্চলের জমিগুলোতে বালু জমে চাষাবাদের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ফলে কৃষকরদেরকে ক্ষতিগ্রস্ত জমিতে চাষাবাদ করতে নতুন করে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী এবারের বন্যায় জেলায় ১৪ হাজার ২১ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে ৫ হাজার ৫২০ হেক্টর জমির ফসল সম্পূর্ণরূপে এবং ৮ হাজার ৫০১ হেক্টর জমির ফসল আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। টাকার অঙ্কে এ ক্ষতির পরিমাণ ৯২ কোটি ১ লাখ ১৭ হাজার। সিরাজগঞ্জ : বন্যার পানি নেমে যাচ্ছে। রেখে যাচ্ছে ক্ষত চিহ্ন। আর সেই ক্ষতচিহ্নে ভুগছে বন্যাকবলিতরা। বন্যার ক্ষতচিহ্নে থাকা বিধ্বস্ত ঘরবাড়িতে ফিরতে শুরু করেছে মানুষ। ঘর-আসবাবপত্র ক্ষয়ক্ষতি দেখে হতাশ হয়ে পড়ছেন ক্ষতিগ্রস্তরা। ক্ষতির ধকল সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের। একদিকে আয় রোজগার নেই, অন্যদিকে ফসলহানি সবমিলিয়ে দুর্বিষহ অবস্থায় পড়েছে বন্যাকবলিতরা। এ অবস্থায় সরকারের সহায়তা কামনা করেছেন ক্ষতিগ্রস্ত বন্যাকবলিতরা। জানা যায়, চলতি বছর সিরাজগঞ্জ সদর, বেলকুচি, চৌহালী ও শাহজাদপুর ৫টি উপজেলার ৪১টি ইউনিয়ন বন্যাকবলিত হয়ে পড়ে। বন্যা ও ভাঙনে প্রায় ৫০ হাজারের বেশি ঘরবাড়ির ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এর মধ্যে প্রায় ভাঙনে ১৫ হাজার সম্পূর্ণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষগুলো সবাই নিম্নআয় পরিবারের। অর্থ না থাকায় ঘর মেরামত করতে না পেরে ভাঙাঘরেই জোড়াতালি দিয়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে থাকতে হচ্ছে। কৃষি নির্ভরশীল মানুষগুলোর ফসল ধান, পাট, আখ ও শাকসবজি নষ্ট হওয়ায় তারা আরও চরম বিপাকে পড়েছেন। জামালপুর : জামালপুরে বন্যার পানি নেমে যাওয়ায় বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নেওয়া মানুষগুলো ফিরতে শুরু করেছে নিজেদের ঘরে। কিন্তু বন্যায় বিধ্বস্ত ঘরে ফিরে আবারও লড়াইয়ে নামতে হচ্ছে তাদের। বন্যায় ল ভ  হয়ে গেছে জেলার সাত উপজেলার সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা। জেলাজুড়ে এখন শুধুই বন্যার ক্ষতচিহ্ন।

বন্যার পানি যতই কমছে ততই বেরিয়ে আসছে ক্ষতবিক্ষত রাস্তাঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট আর বিধ্বস্ত ঘরবাড়ি। প্রায় তিন সপ্তাহ সময় ধরে চলা বন্যায় ভেঙে দিয়েছে সাত উপজেলার আন্তইউনিয়ন যোগাযোগ ব্যবস্থা। পানির তোড়ে ভেঙে ল ভ  হয়েছে জেলার ৫৬২টি সড়কের ১ হাজার ৪২০ কিলোমিটার কাঁচা-পাকা রাস্তা, ২০.৫ কিলোমিটার সড়ক বাঁধ আর ২৪৩টি ব্রিজ-কালভার্ট। বন্যার পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রায় ৫৩ হাজার বসতঘর। এর মাঝে ৪৫ হাজার ৫৮০টি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আর সম্পূর্ণরূপে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৭ হাজার ২৮০টি বসতঘর। এর মধ্যে ইসলামপুর উপজেলার বেলগাছা, পার্থশী, কুলকান্দি, সাপধরী, চিনাডুলি এবং নোয়ারপাড়া ইউনিয়নের তিন শতাধিক গ্রামের পাঁচ সহস্রাধিক বসতঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং বন্যায় ভেসে গেছে। ফেনী : ফুলগাজী ও পরশুরামের দুঃখ বলে খ্যাত মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর বেড়িবাঁধের ১২টি স্থানে ভাঙনের কারণে দুই উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকায় প্লাবিত হয়েছে এক মাস আগে। প্লাবনে ল ভ  হওয়া গ্রামীণ সড়কগুলো এখনো মেরামত না হওয়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থা এখনো স্বাভাবিক হয়নি। চাঁদপুর : চাঁদপুর মেঘনা নদীর শহর রক্ষা বাঁধের ২০০ মিটার ব্লক ধসে পুরান বাজার হরিসভা এলাকায় ভয়াবহ ভাঙন দেখা দিয়েছে। গতকাল সকাল পর্যন্ত সেমি পাকা ও টিনের ১৫টি বসতঘর ভেঙে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। হুমকির মুখে রয়েছে হরিসভা এলাকার ৪টি মন্দির ও চলাচলের পাকা সড়ক। বহু বসত ঘর ভেঙে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। ওই এলাকায় বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। শনিবার রাতে ভাঙন শুরু হয়। রাতেই পানি উন্নয়ন বোর্ড ঘটনাস্থলে বালি ভর্তি ৫০০ জিও টেক্সটাইল ব্যাগ ফেলে ভাঙন প্রতিরোধের চেষ্টা করেছে। ভাঙনের শিকার পরিবারগুলো হচ্ছে-হরিসভা এলাকার গুপিনাথ সাহা, আদিনাথ সাহা, সম্ভুনাথ দে, সুশান্ত দে, মানিক সাহা, সঞ্জয় চক্রবর্তী, বিমল দে, দ্বীপক দে, ধ্রুবরাজ সাহা, সুনীল দে, শ্যামল দে, ওয়াহেদ আলী শেখ, অঞ্জু শেখ, আমজাদ আলী মুন্সি ও কার্তিক সাহা।

জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি সুভাষ চন্দ্র রায় জানান, ভাঙন শুরু হওয়ার পরেই আমরা প্রশাসনকে বিষয়টি অবহিত করেছি। গত বছরও একই স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছিল। স্থানীয় সংসদ সদস্য ও শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানটি রক্ষায় বিশেষ বরাদ্দ দেন। কিন্তু পানি উন্নয়ন বোর্ডের নিয়োজিত ঠিকাদার সঠিকভাবে কাজটি সম্পন্ন না করায় আবারও ভাঙন দেখা দিয়েছে। এই অবস্থায় ভাঙন অব্যাহত থাকলে আরও বসতিসহ হরিসভা, কালি, ইসকন ও লোকনাথ মন্দির মেঘনা গর্ভে বিলীন হয়ে যাবে।

চাঁদপুরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মাহমুদ জামান জানান, ঘটনার সংবাদ পেয়ে রাতেই পানি উন্নয়ন বোর্ডের সহায়তায় ৫০০ জিও টেক্সটাইল ব্যাগ ফেলা হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। বর্তমানে সেখানে পুলিশ, দমকল বাহিনীর সদস্যরা অবস্থান করছেন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর