সোমবার, ৫ আগস্ট, ২০১৯ ০০:০০ টা

সার্টিফিকেট দেওয়ার প্রতিষ্ঠান নেই রপ্তানি হচ্ছে না হালাল মাংস

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

সার্টিফিকেট দেওয়ার প্রতিষ্ঠান নেই, তাই সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও দেশ থেকে হালাল মাংস রপ্তানি করা যাচ্ছে না। মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশে প্রতিবছর ১০ লাখ টনের মতো প্রক্রিয়াজাত মাংস রপ্তানি করে প্রায় ৪০০ কোটি মার্কিন ডলার আয় করে পার্শ¦বর্তী ভারত। ‘ভারত পারলে বাংলাদেশ পারবে না কেন’- এ বিবেচনায় তড়িঘড়ি করে সরকারও হালাল মাংস রপ্তানিতে ২০ শতাংশ নগদ সহায়তা ঘোষণা করে। প্রণোদনার লোভে আবার দেশের কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ‘কোমর বেঁধে’ নামে হালাল মাংস রপ্তানিতে। তারা মধ্যপ্রাচ্যে কিছু মাংস রপ্তানিও শুরু করে। তবে প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো ছাড়া এ ধরনের কার্যক্রম শুরু করলে যা হয় তাই হয়েছে। জানা গেছে, শুধু ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ছাড়পত্র নিয়ে সৌদি আরবে হালাল মাংস রপ্তানি শুরু করে কিছু বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠান। তবে জীবাণুঘটিত ত্রুটি পাওয়ার পর সেটি বন্ধ হয়ে গেছে। সূত্র জানায়, গত বছর ১৩ এপ্রিল বাংলাদেশের মাংস আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করে সৌদি আরব। সৌদি ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অথরিটি (এসএফডিএ) কর্তৃক বাংলাদেশ থেকে দেশটিতে রপ্তানিকৃত প্রায় ১২ হাজার কেজি খাদ্যপণ্যে ভৌত রাসায়নিক ও জীবাণুঘটিত ত্রুটি উদ্্ঘাটিত হয়। বিষয়টি সমাধানে সৌদিতে অবস্থিত বাংলাদেশি দূতাবাস দেশটির এসএফডিএর সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে কয়েক মাস আগে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় সৌদি ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অথরিটির নির্ধারিত ফরমে দেওয়া প্রশ্নের উত্তরমালা পাঠিয়েছে। তবে এখনো সৌদি থেকে এ বিষয়ে কোনো ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। সব মিলিয়ে হালাল মাংস রপ্তানি পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে বিষয়টি নিয়ে জরুরি সভা করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। হালাল মাংস রপ্তানি খাতের সম্ভাবনা, সমস্যা ও সার্টিফিকেশন-সংক্রান্ত বর্তমান অবস্থা বিষয়ে পর্যালোচনা এবং করণীয় নির্ধারণে সভাটি হয় ১৮ জুলাই। সভায় গৃহীত সিদ্ধান্তগুলো হলো- রপ্তানির উদ্দেশ্যে বা অন্য কোনো প্রয়োজনে হালাল সার্টিফিকেট প্রদানে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের পাশাপাশি উপযুক্ত এক বা একাধিক প্রতিষ্ঠানকে ক্ষমতা দেওয়া; সাভারে নির্মিতব্য ল্যাবরেটরিতে প্রক্রিয়াজাত হালাল মাংস ও মাংসজাত পণ্যের সার্টিফিকেট প্রদানে ইসলামিক ফাউন্ডেশনকে সম্পৃক্ত করা; হালাল-সংশ্লিষ্ট বিষয়ে অ্যাক্রিডিটেশন প্রদানের লক্ষ্যে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ; হালাল মাংস রপ্তানিতে প্রণোদনার বিষয়টি সংশ্লিষ্ট খাতের ব্যবসায়ীদের অবহিত করা; বাংলাদেশে বিএসই (বোভিন স্পঞ্জিফর্ম অ্যানসিফেলোপ্যাথি) জীবাণুমুক্ত কি না সে বিষয়ে যথাযথ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক ঘোষণা দেওয়া এবং তুরস্ক ও মালয়েশিয়ার অভিজ্ঞতা নিয়ে বাংলাদেশে হালাল মাংস রপ্তানির গাইডলাইন তৈরিতে একটি কোর গ্রুপ গঠন করা। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (রপ্তানি) তপন কান্তি ঘোষ বলেন, ‘প্রক্রিয়াজাত পণ্যের সার্টিফিকেশনের জন্য আমাদের বিএসটিআই রয়েছে। শাক-সবজিসহ কৃষিজাত পণ্যের সার্টিফিকেশন দেয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর। হালাল মাংসের সার্টিফিকেশন দেওয়ার জন্য সেভাবে আমাদের কোনো প্রতিষ্ঠান নেই। পশুটি সঠিক পদ্ধতিতে জবাই হচ্ছে কি না সে বিষয়ে ইসলামিক ফাউন্ডেশন থেকে ছাড়পত্র নিয়ে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান মধ্যপ্রাচ্যে হালাল মাংস রপ্তানি করেছিল। তবে সেখানেও সমস্যা দেখা দিয়েছে।’ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এই কর্মকর্তা জানান, ‘মধ্যপ্রাচ্যের পাশাপাশি ইউরোপীয় ইউনিয়নে হালাল মাংসের প্রচুর চাহিদা রয়েছে। তবে এ ক্ষেত্রে আমদানিকারক দেশগুলো পশু ঠিকমতো জবাই ছাড়াও মাংস প্রক্রিয়াকরণ পদ্ধতিটি স্বাস্থ্যসম্মত স্লটারিং হাউসে হচ্ছে কি না এ বিষয়ে নিশ্চিত হতে চায়। এ কারণে আমাদের সিদ্ধান্ত হচ্ছে- একটি কোর গ্রুপ গঠন করা হবে, যারা মালয়েশিয়া ও তুরস্কের অভিজ্ঞতা নিয়ে একটি পৃথক সার্টিফিকেশন প্রতিষ্ঠান গড়ার বিষয়ে সুপারিশমালা দেবে।’ শিগগিরই এ কার্যক্রম শুরু হবে বলে জানান তিনি। নগদ সহায়তার বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, ‘যেসব পণ্যে প্রণোদনা কার্যকর রয়েছে, ঘোষিত সেসব রপ্তানিপণ্যের বিপরীতে সব ধরনের কাগজপত্র ও প্রমাণাদি দিয়ে তবেই নগদ সহায়তার জন্য আবেদন করা যায়। হালাল মাংস রপ্তানি বন্ধ থাকলে এ পণ্যে নগদ সহায়তা কেউ পাবে না। তবে পণ্যটি যাতে সঠিক প্রক্রিয়ায় আবার রপ্তানি করা যায়, সে লক্ষ্যেই তো আমরা সভা করে বিভিন্ন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলাম।’

সর্বশেষ খবর