শিরোনাম
সোমবার, ৫ আগস্ট, ২০১৯ ০০:০০ টা

মাদকের অদৃশ্য হাট

মির্জা মেহেদী তমাল

মাদকের অদৃশ্য হাট

এলিফ্যান্ট রোডের শেল সিদ্দিক বহুতল ভবনে অভিযান চালিয়ে গ্রেফতার করা হয় রবিউল ইসলাম ও ডালিয়াকে। তারা স্বামী-স্ত্রী। পরে গ্রেফতার করা হয় ধানমন্ডি থেকে ডালিয়ার বোন স্বপ্না ও তার স্বামী শামীম আহমেদ এবং রানী নামে আরও এক নারীকে। পশ্চিম রাজাবাজার থেকে গ্রেফতার করা হয় ডালিয়া ও স্বপ্নার মা মনোয়ারা বেগমকে। ওই অভিযানে ৫০ হাজার পিস ইয়াবা জব্দ করে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর। জিজ্ঞাসাবাদে এই ইয়াবা পরিবারের সদস্যরা ফাঁস করেন তাদের মাদকের অদৃশ্য হাটের খবর। জানা গেছে, চীন থেকে টাইলস আমদানি করতেন রবিউল ইসলাম। রাজধানীর বাংলামোটর এলাকায় তাদের এই টাইলসের দোকান ছিল। সেই দোকানের নামে ফেসবুকে পেজ ও গ্রুপ করেছিলেন তারা। এই গ্রুপে সক্রিয় থাকতেন রবিউলের স্ত্রী আসমা আহমেদ ডালিয়া, শ্যালিকা স্বপ্না ও নাসিরসহ আরও অনেকে। গ্রুপে চ্যাট করতেন। প্রয়োজনীয় কথা বলতে কল করতেন ভাইবার, ইমো ও হোয়াটসঅ্যাপে। তবে এই দোকানের আড়ালে ছিল ভয়ঙ্কর বাণিজ্য। মরণনেশা ইয়াবা পাইকারি বিক্রি করতেন তারা। বিশ্বস্ত, পরিচিত বিক্রেতারা গ্রুপে চ্যাট করে অর্ডার দিতেন। কথাগুলো ছিল সাংকেতিক। অর্ডার নিয়ে যথাস্থানে তা পৌঁছে দেওয়া হতো। এমনকি নিরাপদে টাইলসের শোরুম থেকেও ইয়াবা সংগ্রহ করতেন মাদকাসক্তরা। বিষয়টি নজরে পড়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের। এর পরেই চলে অভিযান। শুধু বাংলামোটরের ওই দোকান নয়, একইভাবে বংশালের এমএস মার্কেটে ইলেকট্রনিকের পণ্যের গোডাউনে রাখা হতো কোটি কোটি টাকার ইয়াবা। অর্ডার দেওয়া হতো অনলাইনে। এমএস মার্কেটে অভিযান চালায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর। কোটি টাকা মূল্যের ৩০ হাজার পিস ইয়াবাসহ গ্রেফতার করা হয় চট্টগ্রামের মহিউদ্দিন ইসলাম, নোয়াখালীর সুধারামের মোবারক হোসেন বাবু ও ঝালকাঠির দুলাল চন্দ্র শীলকে। এ ঘটনায় দুটি মামলা দায়ের করা হয়। নিত্য ব্যবহারের জিনিসপত্র থেকে শুরু করে গবাদিপশু, গাড়ি, বাড়ি সবই কেনা যাচ্ছে অনলাইনে। অনলাইন শপিংয়ের এই সময়ে বাদ পড়ছে না মাদকও। অনলাইনে অর্ডার দিলে অন্যান্য পণ্যের মতোই বাসায় পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে মাদক। হোম ডেলিভারির এই সুযোগ লুফে নিচ্ছেন একশ্রেণির মাদকসেবী। এ সুযোগ নিচ্ছেন অনেক নারীও। মাদকসেবী ও বিক্রেতাদের অসংখ্য গ্রুপ রয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে। এ ছাড়াও তারা ভাইবার, ইমো ব্যবহার করে থাকে। নিরাপত্তার জন্য সাংকেতিক ভাষা ব্যবহার করেন মাদকের এই অদৃশ্য হাটে। সূত্র জানায়, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে রয়েছে ডিজে পার্টি ঢাকা, ডিজে ঢাকা এরকম নানা নামের পেজ। এতে রয়েছে বিভিন্ন পার্টি সংবাদ সংক্রান্ত পোস্ট। ইরফান আদনান নামে নিকেতনের এক যুবক জানান, একবার অনলাইনে পার্টির টিকিট নিতে গিয়ে ফোন ও মেইল ঠিকানা দিয়েছিলেন তিনি। তারপর থেকে তার ইমোতে কল দিয়ে প্রায়ই আমন্ত্রণ জানানো হয়। নানা ধরনের প্রস্তাব দেওয়া হয়। একটি মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে চিকিৎসাধীন সুফিয়া (ছদ্মনাম) জানান, তিনি অনলাইনেই মাদকের অর্ডার দিতেন। টাকা দিতেন সরাসরি, কখনো অগ্রিম পাঠিয়ে দিতেন বিকাশে। বন্ধুদের সঙ্গে শখের বসে গাঁজা সেবন করেছিলেন কয়েকবার। কখনো ভাবতে পারেননি মাদকে আসক্ত হবেন তিনি। সবেমাত্র বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যেই দুঃসহ যন্ত্রণা তাকে চেপে বসে। কয়েক বছর প্রেম করেছেন। স্বামী-স্ত্রীর মতো সময় কাটিয়েছেন তারা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মায়ের পছন্দে প্রেমিক অন্য মেয়েকে বিয়ে করে ঘর বাঁধে। তারপর থেকে স্বেচ্ছায় ঘরবন্দী সুফিয়া। সম্প্রতি এ ধরনের পাঁচটি পেজ শনাক্ত করেছে পুলিশের সাইবার ক্রাইম কন্ট্রোল ইউনিট। তদন্তের মাধ্যমে তারা জানতে পেরেছেন, পালিয়ে বেড়ানো রাঘববোয়ালরাই এসব অনলাইন পেজ পরিচালনা করছেন এবং এসব পেজের মাধ্যমে মাদক কেনাবেচা হচ্ছে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর