বুধবার, ৭ আগস্ট, ২০১৯ ০০:০০ টা

পিছিয়েছে মেট্রোরেলের যাত্রা

এ বছর নয়, একসঙ্গে ২০ কিমি উদ্বোধন ২০২১ সালের ১৬ ডিসেম্বর

নিজামুল হক বিপুল

পিছিয়েছে মেট্রোরেলের যাত্রা

অর্ধেক নয়, ২০ কিলোমিটার লাইনের পুরোটাতেই চলবে মেট্রোরেল। যাত্রা শুরু হবে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে ২০২১ সালের ১৬ ডিসেম্বর। সে লক্ষ্যে দ্রুতগতিতে কাজ চলছে লাইন-৬ এর। উত্তরা তৃতীয় প্রকল্প থেকে মতিঝিল পর্যন্ত এই প্রকল্পের একটি অংশ উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত চালু হওয়ার কথা ছিল চলতি বছর ডিসেম্বরে। শুরুর সেই দিনক্ষণ থেকে সরে গিয়ে সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ২০২১ সালের ১৬ ডিসেম্বর মেট্রোরেল উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত চালু করবে। এখন দ্রুতগতিতে চলছে মেট্রোরেল প্রকল্প লাইন-৬ এর কাজ। ইতিমধ্যে উত্তরা তৃতীয় প্রকল্প থেকে মিরপুরের দিকে প্রকল্পের প্রায় সাড়ে পাঁচ কিলোমিটার দৃশ্যমান। বাকি ১৬ কিলোমিটারের কাজও চলছে দ্রুততার সঙ্গে। পাইলিং, পিলার নির্মাণ এবং কোথাও কোথাও উড়ালসড়কের স্লাব বসানোর কাজ চলছে। মেট্রোরেল প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী গত ২১ জুলাই পর্যন্ত এ প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি হয়েছে ৩০ দশমিক ০৫ শতাংশ। এর মধ্যে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত অংশের অগ্রগতি ৪৫ দশমিক ৬০ শতাংশ। মেট্রোরেল ও ডিপো ইকুইপমেন্ট সংগ্রহের অগ্রগতি ১৯ দশমিক ৮৭ শতাংশ। দৃশ্যমান ভায়াডাক্ট হচ্ছে পাঁচ দশমিক ০৫ কিলোমিটার। ডিপো এলাকার ভূমি উন্নয়নের কাজ নির্ধারিত সময়ের ৯ মাস আগেই শতভাগ সম্পন্ন হয়েছে।  ডিপো এলাকার পূর্ত কাজের অগ্রগতি ৫০ শতাংশ। রেল লাইন বসানো শুরু হবে আগামী অক্টোবর থেকে। একই সময়ে বৈদ্যুতিক লাইন বসানোর কাজও শুরু হবে। প্রথম মেট্রো ট্রেন সেট বাংলাদেশে পৌঁছাবে আগামী বছরের ১৫ জুন। প্রকল্পের শুরু থেকেই সরকার বলে আসছিল ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে মিরপুর থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত অংশটিতে মেট্রো চলাচল শুরু হবে। নির্মাণ কাজ কাক্সিক্ষত লক্ষ্যমাত্রায় না পৌঁছায় সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে কর্তৃপক্ষ এবং সরকার। এখন নতুন লক্ষ্য হচ্ছে ২০২১ সালের ১৬ ডিসেম্বর। মেট্রো লাইন-৬ হচ্ছে উত্তরা তৃতীয় প্রকল্প থেকে মতিঝিলে বাংলাদেশ ব্যাংক পর্যন্ত। দেশের প্রথম এই মেট্রোরেল পথের পুরোটাই হবে উড়াল । ২০ দশমিক ১ কিলোমিটার দীর্ঘ এই রেলপথে স্টেশন থাকবে ১৬টি। এগুলো হচ্ছেথ- উত্তরা উত্তর, উত্তরা সেন্টার, উত্তরা দক্ষিণ, পল্লবী, মিরপুর ১১, মিরপুর ১০, কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া, আগারগাঁও, বিজয় সরণি, ফার্মগেট, কাওরানবাজার, শাহবাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, সচিবালয় ও মতিঝিল। স্টেশনগুলোও হবে তিনতলাবিশিষ্ট। টিকিট কাউন্টার এবং অন্যান্য সুবিধাদি থাকবে দ্বিতীয় তলায়। আর ট্রেনে ওঠার প্লাটফর্ম থাকবে তৃতীয় তলায়। স্টেশনগুলোতে ওঠার জন্য সাধারণ সিঁড়ির পাশাপাশি থাকবে লিফট ও চলন্ত সিঁড়ি। টিকিট দিয়ে প্লাটফর্মে প্রবেশের ব্যবস্থা হবে স্বয়ংক্রিয়। নিরাপত্তার জন্য স্টেশনের প্লাটফর্মে নিরাপত্তাবেষ্টনী বা প্লাটফর্ম স্ক্রিন ডোর স্থাপন করা হবে। শুরুতে মেট্রোরেলে ২৪ সেট ট্রেন চলাচল করবে। প্রতি সেট ট্রেনে ছয়টি করে কোচ থাকবে।

ডিএমটিসিএল কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ১২ কিলোমিটারের মধ্যে প্রায় সাড়ে ৫ কিলোমিটার উড়ালসড়ক এখন দৃশ্যমান। আর আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত অংশে এখন রাত-দিন কাজ চলছে। পাইলিং থেকে শুরু করে পিলার তৈরি হচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মেট্রোরেলের কারণে কোনো শব্দ দূষণ হবে না। শব্দ নিয়ন্ত্রণের জন্য লাইনের দুই পাশে থাকবে শব্দ নিরোধক দেয়াল। রাজধানীকে যানজট থেকে মুক্তি দিতে সরকার মেট্রোরেল প্রকল্পের অনুমোদন দেয় ২০১২ সালের ডিসেম্বরে। প্রকল্প বাস্তবায়নে জাপানের আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থা জাইকার সঙ্গে ঋণ চুক্তি হয় ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে। প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে জাইকার অর্থায়ন হচ্ছে সাড়ে ১৬ হাজার কোটি টাকা। আর প্রকল্পের বাস্তবায়নকাল ধরা হয় ২০২৪ সাল পর্যন্ত। এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে উত্তরা থেকে মতিঝিল বাংলাদেশ ব্যাংক পর্যন্ত যেতে সময় লাগবে মাত্র ৩৫ মিনিট। মেট্রোরেল পিক আওয়ারে প্রতি ঘণ্টায় সাড়ে ২২ হাজার যাত্রী বহন করতে পারবে। আর প্রতিদিন যাত্রী পরিবহন করতে পারবে প্রায় পাঁচ লাখ।

সর্বশেষ খবর