বুধবার, ৭ আগস্ট, ২০১৯ ০০:০০ টা

ছোট ভুলের বড় খেসারত

মির্জা মেহেদী তমাল

ছোট ভুলের বড় খেসারত

নেত্রকোনা জেলা শহরের সাতপাই বাবুল সরণি এলাকার একটি বাসায় খুন হলেন মিহির বিশ্বাস (৭০) ও তার স্ত্রী সবিতা চন্দ বিশ্বাস (৫৮)। খুনিরা তাদের দুজনকেই শ্বাসরোধে হত্যা করে পালিয়ে যায়। তিন দিন পর তাদের লাশ উদ্ধার হয়। তাদের ছেলে সুমন বিশ্বাস বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা কয়েকজনকে আসামি করে নেত্রকোনা মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মিহির নেত্রকোনা সদর উপজেলার কৃষ্ণ গোবিন্দ উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন ও তার স্ত্রী তুলিকা সমাজসেবা অধিদফতরের নেত্রকোনা সদর উপজেলার কাইলাটি ইউনিয়ন সমাজকর্মী হিসেবে দায়িত্ব পালন করতেন। খুনের ঘটনাটি গোটা এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে। চাঞ্চল্যকর এই খুনের পর পুুলিশের ঘুম হারাম। তদন্ত শুরু হয়। খুনি কারা, এ প্রশ্নের জবাব বের করতে পুলিশের ত্রাহি মধুসূদন অবস্থা। স্থানীয় ছিঁচকে চোর ছিনতাইকারী কয়েকজনকে গ্রেফতার করলেও ঘটনার রহস্যের জাল ভেদ করতে পারে না পুলিশ। উপরন্তু পুলিশ খুনের শিকার মিহির দম্পতির ছেলে মামলার বাদী সুমনকেই সন্দেহ করতে থাকে। পুলিশ তাকে নিয়ে কয়েক দফা জেরাও করেছে। কিন্তু খুন সংশ্লিষ্ট কোনো তথ্যই পায় না পুলিশ। থানা পুলিশ এ ঘটনায় কাউকে গ্রেফতার বা খুনিকে শনাক্ত করতে পারেনি। পরে মামলাটি জেলা গোয়েন্দা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। গোয়েন্দা পুলিশও মামলার তদন্ত এগিয়ে নিতে পারেনি। পরে মামলার তদন্তের ভার পড়ে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)-এর ওপর। পিবিআই দীর্ঘ তদন্ত শেষে ঘটনার সাত মাস পর খুনের রহস্য উন্মোচন করে। পিবিআই জানায়, ঘটনায় জড়িত খুনিদের গ্রেফতারের পর এর নেপথ্য ঘটনা জানা গেছে। তাতে করে তদন্ত কর্মকর্তারাই হতবাক।

পিবিআইয়ের তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলেন, খুনের সঙ্গে জড়িত ছিল পাঁচজন। এরা প্রত্যেকেই শ্রমিক। এই পাঁচজনের মধ্যে প্রথমে আতিকুলকে ঢাকা থেকে, পরে তার দেওয়া তথ্যমতে বাকিদের ঢাকা ও নেত্রকোনার বিভিন্ন স্থান থেকে গ্রেফতার করা হয়। মিহির বিশ্বাসের আলমারিতে থাকা টাকা এরা দেখে ফেলা এবং তা লুটের জন্যই তাদের হত্যা করা হয়। পুলিশ জানায়, একদিন সকালে মিহির বিশ্বাসের ওই বাসায় (কাজের লোক হিসেবে) গাছের ডাল কাটতে যায় আতিকুল। ডাল কাটার পর পারিশ্রমিক নেওয়ার সময় মিহির কান্তির স্ত্রী তুলিকা চন্দ তাকে ঘরের ভিতর ডাকে। আলমারির ড্রয়ার খুলে তাকে ১০০ টাকা দেয়। এ সময় ড্রয়ারে আরও অনেক টাকা দেখতে পায় আতিকুল। এতে লোভে পড়ে যায় আতিকুল। পারিশ্রমিক নিয়ে সে সময় আতিকুল চলে যায়। পরে আতিকুল ও তার সঙ্গীরা একই দিন সন্ধ্যার পর বাসায় পেছনের দেয়াল টপকে ভিতরে প্রবেশ করে। ঘরে ঢুকে টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার নেওয়ার সময় প্রথমে মিহির কান্তি দেখে ফেলে। এ সময় আসামিরা মিহির কান্তিকে গলা টিপে হত্যা করে। মিহির কান্তিকে গলা টিপে হত্যার সময় স্ত্রী তুলিকা চন্দ এগিয়ে এলে তাকেও গলা টিপে হত্যা করে খুনিরা। সেখান থেকে তারা দ্রুত কেটে পড়ে। আধাপাকা বাড়িটিতে মিহির কান্তি ও তুলিকা চন্দ একাই থাকতেন। এলাকায় তারা সজ্জন হিসেবে পরিচিত। তাদের এক ছেলে ও এক মেয়ে। ছেলে সুমন বিশ্বাস ঢাকায় আর মেয়ে সুস্মিতা বিশ্বাস (৩২) সিলেটে স্বামীর সঙ্গে থাকেন। নেত্রকোনা জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে সোপর্দ করা হলে বিচারকের কাছে ১৬৪ ধারায় আসামিরা এই জোড়া খুনের মামলায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। গ্রেফতার ব্যক্তিরা হলো রাসেল মিয়া, পলাশ মিয়া, রুবেল, আতিকুল ইসলাম ও পলাশ। এরা সবাই শহরের সাতপাই ও মধ্য নাগড়া এলাকার বাসিন্দা। অপরাধ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সামান্য ছোট একটা ভুলেই চরম খেসারত দিতে হলো এই দম্পতিকে। অসতর্কতার কারণেই জীবন দিতে হয়েছে এই দম্পতিকে। বাইরের একজন শ্রমিককে ঘরে ঢুকিয়ে আলমারি খোলাটাই ছিল সবচেয় বড় অসতর্কতা। ওই শ্রমিক যখন আলমারিতে প্রচুর টাকা দেখেছেন, তখনই তার লোভ হয়েছে টাকা লুটের। আর এই সামান্য অসতর্কতাই জীবন দিতে হলো এই দম্পতিকে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর