শিরোনাম
শুক্রবার, ৯ আগস্ট, ২০১৯ ০০:০০ টা

বাড়ি ফেরায় যত ভোগান্তি

লঞ্চ-বাস টার্মিনাল ও রেলস্টেশনে উপচে পড়া ভিড়

সাঈদুর রহমান রিমন

বাড়ি ফেরায় যত ভোগান্তি

বৃষ্টিতে ভিজেও ট্রেনযাত্রায় মানুষ -বাংলাদেশ প্রতিদিন

দিনভর কখনো মুষলধারে, আবার কখনো গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির সীমাহীন ভোগান্তি সঙ্গী করেই ঈদযাত্রায় শামিল হয়েছেন মানুষজন, দলে দলে ঢাকা ছাড়ছেন নগরবাসী। এ ছাড়া পথে পথে আছে নানা রকম সমস্যা। কোথাও কোরবানির পশুর হাটের একাংশ উঠে এসেছে মহাসড়কের ওপর। ফলে সেখানে ভয়াবহ আকার ধারণ করছে যানজট। আবার যমুনা সেতুর পশ্চিম প্রান্তে রাস্তা মেরামতের কাজ শেষ না হওয়ায় সেখানেও যানজটের ধকল সৃষ্টি হচ্ছে।

সকাল থেকেই লঞ্চ ও ফেরিঘাটগুলোতে বাড়িফেরা মানুষজনের রীতিমতো স্রোত যেন হামলে পড়ে। ফলে পাটুরিয়া ও শিমুলিয়া ঘাটে পর্যাপ্তসংখ্যক ফেরির জোগান দেওয়া কষ্টকর হয়ে পড়েছে। এতে আটকে পড়া শত শত গাড়ির হাজার হাজার যাত্রী এ দুটি ঘাটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থাকতে বাধ্য হন। বৃষ্টিজনিত বৈরী আবহাওয়ায় আটকে পড়া যাত্রীদের দুর্ভোগের শেষ ছিল না। এ ছাড়া আগাম টিকিট পাওয়া ভাগ্যবান যাত্রীরা ট্রেনে-বাসে বসার আসন পেলেও তাৎক্ষণিকভাবে রওনা দেওয়া যাত্রীরা ছাদে হলেও বসার জায়গা করে নেন। ঝুঁকিপূর্ণ ঈদযাত্রায় তবু তারা বাড়ি যান। কিন্তু বৃষ্টির কারণে ছাদের যাত্রীরা সীমাহীন ভোগান্তির মুখে পড়েন।

ঈদের আগে সরকারি অফিসগুলোর শেষ কর্মদিবস হওয়ায় বিকাল থেকে রেলস্টেশন, বাস টার্মিনাল ও লঞ্চঘাটগুলোতে মাত্রাতিরিক্ত চাপ বাড়ে। তাদের ঈদ আনন্দ যাত্রায় মুহূর্তেই কষ্ট-যন্ত্রণার কারণ হয়ে দাঁড়ায় বৃষ্টি। রাজধানীর রাস্তাঘাট, অলিগলির একহাঁটু কাদা-পানি ডিঙিয়ে মানুষজনকে ছুটতে হয়েছে ট্রেনস্টেশন কিংবা বাস টার্মিনালের পথে। ব্যাগ-ব্যাগেজ, নারী-শিশুদের সঙ্গী করে যানবাহন পর্যন্ত পৌঁছতে মানুষজন অন্তহীন ভোগান্তির শিকার হন।

এদিকে বৃষ্টির সঙ্গে ট্রেনের বিলম্বও যাত্রীদের বেশ ভুগিয়েছে। গতকাল দিনের শুরুতে রাজশাহীগামী ধূমকেতু এক্সপ্রেস ট্রেনটি ভোর ৬টা ২০ মিনিটে কমলাপুর ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও সেটি ছাড়ে প্রায় দুই ঘণ্টা পর সকাল সাড়ে ৮টায়। চিলাহাটীগামী নীলসাগর এক্সপ্রেস সকাল ৮টায় ছাড়ার কথা থাকলেও স্টেশনে রাখা স্ক্রিনে সম্ভাব্য সময় দেওয়া হয় ১০টা ২৫ মিনিট। কিন্তু বেলা ১১টা পেরিয়ে গেলেও এ ট্রেনকে স্টেশন ছাড়তে দেখা যায়নি। এ ছাড়া সকাল ৯টার রংপুর এক্সপ্রেস ট্রেন ছেড়ে যাওয়ার সম্ভাব্য সময় দেওয়া হয় সকাল সাড়ে ১০টায়। তবে বেলা ১১টা পর্যন্ত ঠায় দাঁড়ানো অবস্থায় দেখা গেছে ট্রেনটিকে। দিনাজপুর-পঞ্চগড়গামী একতা এক্সপ্রেস সকাল ১০টায় ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও বেলা ১১টা ১৫ মিনিটে ছাড়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়। কিন্তু এর ২০ মিনিট পরও ট্রেনটি স্টেশনে থামানো অবস্থাতেই দেখা গেছে। এমন শিডিউল বিপর্যয়ে বৃষ্টিতে কাকভেজা মানুষজন প্লাটফরমে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অবর্ণনীয় দুর্ভোগে আটকে পড়েন। সকাল থেকে রাজধানীর কমলাপুর ও বিমানবন্দর রেলস্টেশনে ঘরমুখো যাত্রীদের ঢল নামে। ঈদযাত্রার সার্বিক বিষয়ে কমলাপুর স্টেশন ম্যানেজার আমিনুল হক বলেন, ‘ঈদযাত্রার দ্বিতীয় দিন কমলাপুর স্টেশন থেকে তিনটি স্পেশালসহ মোট ৫৫টি ট্রেন ছেড়ে যাবে। আমরা সার্বিক চেষ্টা করছি ট্রেনগুলোর শিডিউল ঠিক রাখার। আসলে যে ট্রেনগুলো দেরি করে স্টেশনে এসে পৌঁছেছে, সেগুলোই দেরিতে ছেড়েছে।’ বাকি ট্রেনগুলো নির্ধারিত সময়েই স্টেশন ছেড়ে গেছে বলে দাবি করেন তিনি। রাজধানীর টার্মিনাল, কাউন্টার-স্ট্যান্ড আর পথে পথে বাসযাত্রীদের ভোগান্তির দৃশ্য চোখে না দেখলে বোঝার উপায় ছিল না। হাতে হাতে ব্যাগ-ব্যাগেজ, কোলে-কাঁধে শিশুদের নিয়ে রাস্তায় রাস্তায় মানুষকে কাদা-পানি পেরোতে হয়েছে। ফলে ঈদে ঘরমুখো মানুষজন রাজধানী ছাড়তে গিয়ে দুর্ভোগের মধ্যে পড়েছেন। সড়কে বৃষ্টির ভোগান্তির পাশাপাশি রিকশা ও সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালকদের বাড়তি ভাড়ার ভোগান্তিও যোগ হয়েছে যাত্রীদের। আবদুল্লাহপুর-বাইপাইল সড়কের বাইপাইল থেকে শুরু করে জিরাবো পর্যন্ত ছয় কিলোমিটার, ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের বিশমাইল থেকে নিরিবিলি পর্যন্ত চার কিলোমিটার ও নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কের নবীনগর থেকে জিরানী বাজার পর্যন্ত প্রায় ১০ কিলোমিটার এলাকার যানজট স্থায়ী রূপ পেয়েছে। আশুলিয়ার ইউনিক বাসস্ট্যান্ড থেকে জামগড়া পর্যন্ত মহসড়কের ওপর জমেছে প্রায় হাঁটুপানি। এতে স্বাভাবিক যান চলাচল বিঘিœত হচ্ছে, সূত্রপাত ঘটছে যানজটের। বিকাল থেকেই ঈদযাত্রীদের বিরাট অংশকে বৃষ্টিভেজা হয়েই সদরঘাটে হাজির হতে দেখা গেছে। নৈরাজ্য ও যাত্রী হয়রানিই ঈদের উপহার : যাত্রী অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের নেতারা বলেছেন, যাতায়াতের সব বাহনে সীমাহীন নৈরাজ্য আর যাত্রী হয়রানিই হচ্ছে ঈদের উপহার। ঈদকে কেন্দ্র করে বাস, লঞ্চ ও বিমানপথে সারা দেশে ‘ভাড়া ডাকাতি’ চললেও প্রশাসন ও যথাযথ কর্তৃপক্ষ তেমন কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। অন্যদিকে হাজার হাজার ফিটনেসবিহীন ট্রাকে পশু বহন করা হচ্ছে। এসব পশুবাহী ট্রাক ও ফিটনেসহীন বাস থেকে পুলিশ ও চাঁদাবাজদের চাঁদাবাজির কারণে রাজধানীর প্রবেশমুখসহ সারা দেশের সড়ক-মহাসড়কে যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। গতকাল সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে যাত্রী অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের উদ্যোগে ঈদযাত্রায় ভাড়া নৈরাজ্য ও যাত্রী হয়রানি বন্ধের দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচিতে তারা এসব কথা বলেন। সংগঠনের কার্যকরী সভাপতি রিয়াদ হোসেনের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক আরমান হোসেন পলাশের পরিচালনায় এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর