শনিবার, ১০ আগস্ট, ২০১৯ ০০:০০ টা

আগাম জামিনে ১৬ নির্দেশনা আপিল বিভাগের

হত্যা ও ধর্ষণের সুনির্দিষ্ট মামলায় আগাম জামিন নয়। গ্রেফতারের আগে সংবিধানের ৩২ অনুচ্ছেদ অনুসরণ। ৮ সপ্তাহের বেশি আগাম জামিন নয়

নিজস্ব প্রতিবেদক

আগাম জামিনে ১৬ নির্দেশনা আপিল বিভাগের

উচ্চ আদালতে কোনো ব্যক্তি বা আসামিকে আগাম জামিন দেওয়ার বিষয়ে নতুন নীতিমালা দিয়েছে আপিল বিভাগ। আগের নীতিমালায় আগাম জামিন দেওয়ার বিষয়ে হাই কোর্টের প্রতি সাত দফা নির্দেশনা থাকলেও এবার তা ১৬ দফায় উন্নীত করা হয়েছে। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের সাত বিচারপতির বেঞ্চের দেওয়া এক রায়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়। নির্দেশনায় বলা হয়েছে, হাই কোর্ট বিভাগ এখন থেকে কোনো ব্যক্তিকে ৮ সপ্তাহের আগাম জামিন দিতে পারবেন; যা আগে চার সপ্তাহ নির্ধারিত ছিল। হত্যা, ডাকাতি ও ধর্ষণের সুনির্দিষ্ট মামলায় আসামিকে আগাম জামিন দেওয়া যাবে না। এ ছাড়াও রায়ে কোনো ব্যক্তিকে গ্রেফতারের সময় সংবিধান ৩২ অনুচ্ছেদ অনুসরণ করতেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এর ফলে উচ্চ আদালতে আগাম জামিন পাওয়া আগের চেয়ে কিছুটা সহজ হবে বলে মনে করছেন আইনজীবীরা।  নাশকতার মামলায় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ এক ডজন বিএনপি নেতাকে হাই কোর্টের দেওয়া আগাম জামিনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষে করা লিভ টু আপিল (আপিল অনুমতি) আবেদন নিষ্পত্তি করে গত ১৮ এপ্রিল আদেশ দেয় আপিল বিভাগ। ওই মামলার লিখিত রায় সম্প্রতি আপিল বিভাগ থেকে প্রকাশ করা হয়। রায়ে আগাম জামিনের বিষয়ে হাই কোর্টকে এবার ১৬ দফা নির্দেশনা অনুসরণ করতে বলা হয়েছে। এর আগে ২০১৪ সালের ২০ মার্চ আগাম জামিন দেওয়ার বিষয়ে হাই কোর্টের প্রতি সাত দফা নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল।

১৬ দফা নির্দেশনার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো : হত্যা ও ধর্ষণের সুনির্দিষ্ট মামলায় আগাম জামিন দেওয়া যাবে না। কোনো ব্যক্তিকে গ্রেফতারের আগে অবশ্যই সংবিধানের ৩২ অনুচ্ছেদ অনুসরণ করতে হবে। ৮ সপ্তাহের বেশি আগাম জামিন দেওয়া যাবে না, আগাম জামিন বিবেচনায় সুনির্দিষ্ট, যৌক্তিক ও বিশ^াসযোগ্য কারণ থাকতে হবে। জামিন সংক্রান্ত ফৌজদারি কার্যবিধির ৪৯৭ (ক) বাতিল। আগাম জামিনের অপব্যবহার করলে তা রাষ্ট্রপক্ষ বাতিল চাইতে পারবে। হাই কোর্টকে এফ আই আর সূক্ষ্মভাবে পর্যবেক্ষণ করতে হবে। অভিযোগের গুরুত্ব বিবেচনা করতে হবে। আগাম জামিন দিলে পলাতক হওয়ার সম্ভাবনা আছে কি না। চরিত্র আচার-আচরণ বিবেচনায় নিতে হবে। গ্রেফতার হওয়া ব্যক্তি অপদস্ত হওয়ার সম্ভাবনা আছে কিনা তা দেখতে হবে। কেউ  যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেটা খেয়াল রাখতে হবে। কোনো সাক্ষীকে ভয়-ভীতি দেখাতে না পারে আগাম জামিনের ক্ষেত্রে এমন শর্তজুড়ে দিতে হবে। জামিন দেওয়ার ক্ষেত্রে অত্যন্ত সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। অনির্দিষ্টকালের জন্য আগাম জামিন দেওয়া যাবে না; যা তদন্ত ব্যাঘাত ঘটায়। আগাম জামিনের ক্ষেত্রে তদন্তের বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে। আগাম জামিনপ্রাপ্ত ব্যক্তি বা আসামি তদন্ত কর্মকর্তাকে সহযোগিতা করবে। মামলার বিবরণে জানা যায়, একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় করা নাশকতার মামলায় হাই কোর্ট থেকে আগাম জামিন নেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, মওদুদ আহমদ, মির্জা আব্বাস, খন্দকার মাহবুব হোসেন, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, বরকতউল্লাহ বুলু, রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, হাজী সালাহউদ্দিন আহমেদ, মো. শাহজাহান, এজেডএম জাহিদ হোসেন ও অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন। এ ছাড়া তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন, গণস্বাস্থা কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, অধ্যাপক ড. মোরশেদ হাসান খান ও মো. আমিনুর রহমানও আগাম জামিন পান। এরপর বিভিন্ন সময়ে হাই কোর্টের দেওয়া ওই আগাম জামিনের বিরুদ্ধে আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ। এরই ধারাবাহিকতায় গত ১৮ এপ্রিল ওই আপিল নিষ্পত্তি করে আদেশ দেয় আপিল বিভাগ। আদালতে বিএনপি নেতাদের পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন। আপিল বিভাগের নতুন নির্দেশনার বিষয়ে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আপিল বিভাগের সিদ্ধান্ত রয়েছে চার সপ্তাহের বেশি জামিন দেওয়া যাবে না। জনস্বার্থে ওই সিদ্ধান্ত পরিবর্তন হওয়া দরকার ছিল। আপিল বিভাগের নতুন নির্দেশনায় তার প্রতিফলন ঘটেছে।

সর্বশেষ খবর