শুক্রবার, ১৬ আগস্ট, ২০১৯ ০০:০০ টা

৯ বছরে প্রতিযোগিতা বেড়েছে ৪ গুণ

সরকারি চাকরি

শামীম আহমেদ

৯ বছরে প্রতিযোগিতা বেড়েছে ৪ গুণ

ক্রমেই দুষ্প্রাপ্য হয়ে উঠছে সরকারি চাকরি। বেতন ও সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি, চাকরির নিশ্চয়তা, সামাজিক মর্যাদা ও ক্ষমতা ব্যবহারের সুযোগের কারণে সরকারি চাকরি পেতে বেশি আগ্রহী শিক্ষিত যুবসমাজ। কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে বেসরকারি খাত কাক্সিক্ষত হারে সম্প্রসারণ না হওয়াতেও প্রতিযোগিতা বাড়ছে সরকারি খাতে। শুধু বিসিএস পরীক্ষাতেই গত নয় বছরে আবেদনকারীর হার বেড়েছে প্রায় চারগুণ। ব্যাংক, স্কুল-কলেজ, বিভিন্ন অধিদফতরসহ সরকারি, আধা-সরকারি প্রতিষ্ঠানে একটি পদের বিপরীতে যুদ্ধে অবতীর্ণ হচ্ছেন ১৫০ থেকে সাড়ে আট হাজার প্রার্থী। দিনে দিনে এ প্রতিযোগিতা বেড়েই চলেছে। ২৪-২৫ বছরের শিক্ষা জীবন শেষে সরকারি চাকরি নামের সোনার হরিণ ধরতে গিয়ে মুখ থুবড়ে পড়ছেন অধিকাংশ তরুণ-তরুণী। বয়স পার হওয়ার পরও চাকরি না পাওয়ার হতাশা থেকে মাদকাসক্ত, এমনকি আত্মহত্যার পথও বেঁছে নিচ্ছেন অনেকে।

নানা সুযোগ-সুবিধার কারণে শিক্ষিত যুবক-যুবতীর বড় অংশের প্রথম পছন্দ সরকারি চাকরি। সম্প্রতি ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্নেন্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (বিআইজিডি) ও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌথভাবে পরিচালিত এক জরিপে দেখা গেছে শিক্ষিত যুবদের মধ্যে ৫৭% নারী এবং ৪২% পুরুষ সরকারি চাকরি করতে চান। যারা সরকারি চাকরি করতে চান না তাদের একটা বড় অংশ উদ্যোক্তা হতে চান। এদিকে সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে প্রার্থীদের প্রথম পছন্দ বিসিএস। তবে ন্যূনতম চার বছরের (সম্মান) ¯œাতক ছাড়া এ পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার সুযোগ না থাকায় ¯œাতক অনেকেই বিসিএস দিতে পারেন না। তারপরও সর্বশেষ ৪০তম বিসিএস-এ ১ হাজার ৯০৩ পদের বিপরীতে আবেদন করেন ৪ লাখ ১২ হাজার ৫৩২ জন। প্রতিটা পদের      বিপরীতে লড়েন ২১৭ জন। চলতি বছরের ৩ মে হয় এর প্রিলিমিনারি পরীক্ষা। অন্যদিকে ২০১০ সালে অনুষ্ঠিত ৩০তম বিসিএস-এ ২ হাজার ৫৭২টি পদের বিপরীতে অংশ নেয় এক লাখ ৪৭ হাজার ৯৮৮ জন। প্রতি পদের বিপরীতে লড়েন ৫৮ জন। অর্থাৎ, গত নয় বছরে প্রতি পদের বিপরীতে আবেদনকারী বেড়েছে প্রায় চারগুণ।

শুধু বিসিএস নয়, সরকারি অন্যান্য চাকরিগুলোতেও আবেদনকারীর সংখ্যা বিস্ময়কর। দ্বিতীয় বা তৃতীয় শ্রেণির চাকরি পেতে আবেদন করছেন লাখো উচ্চশিক্ষিত যুবক-যুবতী। মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের উপপরিদর্শকের (এসআই) নয়টি শূন্য পদের বিপরীতে আবেদন জমা পড়ে ৭৮ হাজার ৮২টি। প্রতি পদের বিপরীতে আবেদনের সংখ্যা আট হাজার ৬৭৫টি। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সর্বশেষ ১১ হাজার শিক্ষক নিয়োগে আবেদন জমা পড়ে প্রায় ২৬ লাখ। পরীক্ষা নিতে হিমশিম খায় প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর। খাদ্য অধিদফতরের ১ হাজার ১০০ শূন্য পদের বিপরীতে আবেদন জমা পড়ে প্রায় ১৫ লাখ। ২৭৪টি সহকারী খাদ্য পরিদর্শক (এএফআই) পদের বিপরীতে আবেদন পড়ে ছয় লাখ ৩৩ হাজার ৯৫২টি। প্রতি পদের বিপরীতে আবেদন করেন দুই হাজার ৩১৩ জন। গত বছরের অক্টোবরে রাষ্ট্রায়ত্ত বিভিন্ন ব্যাংকে ৭ হাজার ৩৭২ জন কর্মকর্তা নিয়োগে আবেদন জমা পড়ে ১০ লাখের বেশি।

এ ব্যাপারে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ না বাড়ায় নতুন কর্মসংস্থান বাড়ছে না। তাই সরকারি চাকরিতে চাপ বাড়ছে। এ ছাড়া চাকরির নিরাপত্তা ও নানা সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর কারণেও সরকারি চাকরিতে আগ্রহ বাড়ছে। কিন্তু চাকরিপ্রার্থীর তুলনায় সরকারি চাকরি খুবই সীমিত। কর্মসংস্থানের এ দুর্দশা কাটাতে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। শুধু কর্ম সৃজন করলেই হবে না, শিক্ষিতদের জন্য সম্মানজনক চাকরি সৃষ্টি করতে হবে।

সর্বশেষ খবর