শনিবার, ১৭ আগস্ট, ২০১৯ ০০:০০ টা
কৃষি সংবাদ

ভালুকায় পাম চাষে সম্ভাবনার হাতছানি

ভালুকা (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি

ভালুকায় পাম চাষে সম্ভাবনার হাতছানি

ভালুকায় অর্থকরী ফসল পাম চাষে ব্যাপক সফলতা অর্জনে সক্ষম হয়েছেন উপজেলার রাজৈ ইউনিয়নের কুল্লাব গ্রামের আনোয়ার হোসেন ফকির। তিনি স্থানীয় রাজৈ ইউনিয়ন পরিষদের ইউপি সদস্য। তার এ সফলতা কৃষিতে নতুন সম্ভাবনা হিসেবে দেখছেন সংশ্লিষ্টরা। বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে কৃষিকে খাপ খাইয়ে নিতে প্রচলিত কৃষি থেকে কৃষকদের নির্ভরতা কমিয়ে আনাতে পাম চাষ বিশেষ ভূমিকা রাখবে বলে প্রত্যাশা করছে স্থানীয় কৃষি বিভাগ। সরেজমিন জানা যায়, ভালুকার প্রত্যন্ত অঞ্চল রাজৈ ইউনিয়নের কুল্লাব গ্রামে ১০ বছর আগে আনোয়ার হোসেন ফকির ১০ একর জমিতে এক হাজার পাম গাছের চারা রোপণ করেন। কোটি টাকা ব্যয়ে গড়া এই বাগানের সব কটি গাছের কাঁদিতে এখন থোকায় থোকায় পরিপক্ব ফল। তিন বছর ধরে এ বাগানে ফলনকৃত পাম ফল থেকে উৎপাদিত হচ্ছে বিশুদ্ধ পাম তেল। তবে নিজস্ব পাম অয়েল প্রসেসিং প্লান্ট না থাকায় এ ফলন কাজে লাগাতে পারছেন না কৃষক আনোয়ার হোসেন ফকির। সফল কৃষক মো. আনোয়ার হোসেন ফকির বলেন, ‘আমার বাগানের পাম থেকে উৎপাদিত তেল বিদেশ থেকে আমদানি করা তেলের চেয়ে বহুগুণে উন্নত ও সুস্বাদু। এ বছর বাগানে ৪০০ টনেরও বেশি ফল ধরেছে।

এ ফল পরিশোধন করা গেলে দ্বিগুণ পাম অয়েল পাওয়া যেত। কিন্তু আমার বাগানে নিজস্ব পাম অয়েল প্রসেসিং প্লান্ট না থাকায় এ ফলন কাজে লাগাতে পারছি না। মাঝে মাঝে স্বল্প মূল্যে পাম ফল কিনে নিতে আসে দেশের বিভিন্ন অয়েল ফার্ম প্রতিষ্ঠান। কিন্তু ওই সব প্রতিষ্ঠানের পাম ফল ক্রয় নিয়মিত না হওয়ায় এবং দাম কম দেওয়ায় আমার বাগানের অনেক ফল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আমি কোনো ব্যাংক ঋণ পাইনি। আমার এ সাফল্যের জন্য কোনো সরকারি বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান আমাকে কোনো সম্মাননা বা স্বীকৃতি দেয়নি।’  বাংলাদেশ পাম অয়েল উন্নয়ন প্রকল্প ও পাম অয়েল রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট লিমিটেড সূত্রে জানা যায়, পাম গাছ একটি বর্ষজীবী উদ্ভিদ। টানা ৬০-৭০ বছর ফল দেয়। ঝড়-জলোচ্ছ্বাসে গাছের ক্ষতি হয় না। অন্যান্য গাছ থেকে ১০ গুণ বেশি অক্সিজেন দেয় পাম গাছ। একটি পরিবারের সারা বছরের তেলের চাহিদা পূরণের জন্য দুটি গাছই যথেষ্ট। ২০ ফুট দূরত্বে ২ ফুট বাই ২ ফুট গর্ত করে মাটির সঙ্গে পাঁচ-সাত কেজি গোবর, ১০০ গ্রাম টিএসপি ও ৫০ গ্রাম এমওপি মিশিয়ে চারা রোপণ করতে হয়। পাকা ফল থেকে হাতে ও মেশিনে তেল সংগ্রহ করা যায়। ফল পানিতে সেদ্ধ করে চিপড় দিলে তেল বের হয়। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নূরুল ইসলাম বাদশা বলেন, ‘আনোয়ার ফকির আমার পরিষদের ইউপি সদস্য। তার এমন সফলতায় আমি সত্যি গর্বিত। আমার দাবি থাকবে সরকার তার এ সফলতাটি আমলে নিয়ে তাকে সহায়তা করবে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস এ বৃহৎ বাগানটি সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে রাষ্ট্রীয় সম্পদে পরিণত হবে।’ ভালুকা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জেসমিন নাহার বলেন, ‘এ অঞ্চলের মাটি পাম চাষবান্ধব। চাষের পরিসর বাড়ানো হলে এবং সেই পাম থেকে তেল উৎপাদন করলে আমদানি-নির্ভরতা কমবে। ব্যাপকভাবে পাম চাষ করা গেলে বিদেশ থেকে পাম তেল আমদানি করার প্রয়োজন হবে না।’

সর্বশেষ খবর