সোমবার, ১৯ আগস্ট, ২০১৯ ০০:০০ টা
ঐতিহ্য

আদ্যাবাড়ি মন্দির

নওগাঁ প্রতিনিধি

আদ্যাবাড়ি মন্দির

দূর থেকে মনে হয় যেন একটি টিলায় অসংখ্য গাছগাছালির মাঝে মাথা উঁচু করে কিছু একটি দাঁড়িয়ে আছে। মূল সড়ক থেকে নেমে কাঁচা সড়ক ধরে এগিয়ে গেলে নজরে আসবে দেশের প্রাচীন মন্দিরগুলোর অন্যতম নওগাঁর মহাদেবপুরের খাজুর ইউনিয়নের দেবীপুরের আদ্যাবাড়ি মন্দির। মহাদেবপুর সদর থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে মহাদেবপুর-সরাইগাছী সড়কের উত্তর ধারে এই প্রাচীন মন্দিরটি অবস্থিত। ইতিহাসে এই মন্দিরের বিষয়ে তেমন উল্লেখযোগ্য কিছু নেই। যা আছে তা লোকমুখে প্রচলিত। মন্দিরের নির্মাণশৈলী দেখে ধারণা করা হয় পাল রাজত্বকালে কোনো এক সময় মন্দিরটি নির্মাণ করা হয়েছে। মাটি থেকে মন্দিরের চূড়ার উচ্চতা প্রায় ৫০ ফুট। নিভৃত পল্লীর প্রাচীন এই ঐতিহ্যের ধারক স্থাপনায় এখন দৈন্যদশা। রক্ত কাঠমালিকা, রক্তকরবী, হলুদ করবীসহ নানান ফুল আর গাছগাছালিতে আচ্ছাদিত প্রায় ৪ বিঘা জমির ওপর এই মূল মন্দিরটি কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে থাকলেও অনুসঙ্গ মন্দিরগুলো ধসে পড়েছে। আসলে এটি ছিল একটি মন্দির কমপ্লেক্স। মন্দিরটির চারধারে ছিল উঁচু সীমানা প্রাচীর। এখনো তার চিহ্ন রয়ে গেছে। মন্দিরের সামনে আছে বিশাল দীঘি। ধারণা করা হয়; পূর্বে এটি বৌদ্ধ মন্দির ছিল। পরবর্তীতে পালরা শৈব ধর্ম গ্রহণ করে। এরপর এই মন্দিরটির চার পাশে ১০৫টি শিবমন্দির নির্মাণ করা হয়। ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত মন্দিরগুলোর স্থায়িত্ব ছিল। মন্দিরগুলোয় নিয়মিত পূজা-আর্চা হতো। এই মন্দিরের তিনটি দেবী ছিল আদ্যামাতা, অন্নপূর্ণা, গৌরীপট। তিনটি মূর্তিই ছিল পাথরের নির্মিত। আদ্যামাতা দেবীর ছিল ৪ হাত। আদ্যামাতা দেবীর মন্দিরটিকে তৎকালীন মূল মন্দির হিসেবে গণ্য করা হতো। এখানে ছিল পুরোহিত, দেবদাস ও সেবাদাসীদের জন্য বসবাসের ব্যবস্থা। এ ছাড়াও ছিল মন্দির প্রহরী। তারাও নিয়মিত দায়িত্ব পালন শেষে মন্দির কমপ্লেক্সের ভিতর থাকতেন। মন্দিরে দেবতার সন্তুষ্টিতে দেবদাসীদের নৃত্যাঞ্জলি, শঙ্খধ্বনি, পুরোহিতের মন্ত্রপাঠ, ধূপের ধোঁয়া আর খোল-করতালের শব্দ থেমে গেছে বহু আগে। দূরদূরান্ত থেকে দেবী দর্শনে এখানে আসত রাজন্যবর্গ ও সাধারণ প্রজারা। বলতে গেলে প্রায় দিনই কোনো না কোনো দেব-দেবীর জন্য বিশেষ আয়োজনে পূজা হতো বরেন্দ্র ভূমির এই মন্দিরটিতে। মন্দির কমপ্লেক্স ছিল সমতল ভূমি থেকে অনেক উঁচুতে। কাছাকাছি বলতে শুধু লক্ষণীয় ছিল আত্রাই নদী। কাছাকাছি কোনো ক্যানেল নজরে পড়ে না। ধারণা করা হয়, হয়তো আত্রাই নদীপথেই মানুষের যাতায়াত ছিল সে সময়। তবে বরেন্দ্র অঞ্চল হওয়ায় মানুষ সচরাচর হেঁটে অথবা কোনো পশুবাহনে করে মন্দিরে আসা-যাওয়া করত বলে অনেকের অভিমত। অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ও গবেষক আতাউল হক সিদ্দিকী জানান, মন্দিরটি পাল সাম্রাজ্যের কোনো এক সময় স্থাপন করা হয়। কিন্তু এর কোনো দালিলিক প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তবে গবেষণার মাধ্যমে এর সব কিছু উন্মোচিত হতে পারে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর