বুধবার, ২১ আগস্ট, ২০১৯ ০০:০০ টা

দ্রুত শাস্তি না হওয়ায় বাড়ছে ধর্ষণ

হাই কোর্টের পর্যবেক্ষণ-দায় রাষ্ট্রের, বিচার বিভাগও জবাবদিহির ঊর্ধ্বে নয়, আসামিরা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বেপরোয়া ধূর্ত, নারী-শিশু মামলা দ্রুত নিষ্পত্তিতে ছয় দফা নির্দেশনা

নিজস্ব প্রতিবেদক

দ্রুত শাস্তি না হওয়ায় বাড়ছে ধর্ষণ

দ্রুততম সময়ে অপরাধীদের বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত না হওয়ায় সমাজে ধর্ষণের ঘটনা বেড়েছে বলে মনে করে হাই কোর্ট। এ-সংক্রান্ত এক রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত বলেছে, সাম্প্রতিক সময়ে দেশে ধর্ষণ বিশেষত শিশু ধর্ষণ ও পরে হত্যার মতো ঘৃণ্য অপরাধ বেড়েই চলেছে। এ অপরাধের সঙ্গে জড়িত অপরাধীর দ্রুততম সময়ে বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে না পারার দায় মূলত রাষ্ট্রের ওপরই বর্তায়। এ ক্ষেত্রে বিচার বিভাগও জবাবদিহির ঊর্ধ্বে নয়।

গত ১৮ জুলাই বগুড়ার একটি শিশু ধর্ষণ মামলার আসামির জামিনসংক্রান্ত আপিল নিষ্পত্তি করে দেওয়া রায়ের পর্যবেক্ষণে এমন মন্তব্য করে হাই কোর্ট। একই সঙ্গে ধর্ষণসহ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে দায়েরকৃত মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তিতে ছয় দফা নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ১৮ জুলাই বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাই কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ থেকে ঘোষিত এ রায়ের অনুলিপি গত সোমবার সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে। রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত বলেছে, আমাদের অভিজ্ঞতা হলো ধর্ষণ মামলার আসামিরা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বেপরোয়া ও ধূর্ত প্রকৃতির। এরা ভিকটিম ও তার পরিবারের ওপর চাপ-প্রভাব বিস্তার করে সাক্ষ্য প্রদানে ভয়ভীতি, প্রলোভনসহ বিভিন্ন ধরনের কূটকৌশল অবলম্বন করে। ক্ষেত্রবিশেষ শালিসের নামে সামাজিক বিচার করে ভিকটিম ও তার পরিবারকে মামলা প্রত্যাহারে বাধ্য এবং আদালতে সাক্ষ্য প্রদানে বিরত থাকার জন্য চাপ প্রয়োগ করে। এ অবস্থায় সাক্ষী সুরক্ষা আইন প্রণয়নের বিকল্প নেই। আমরা প্রত্যাশা করছি, সরকার দ্রুততম সময়ে এ বিষয়ে আইন প্রণয়ন করবে। রায়ে বলা হয়, বিচার বিলম্বের জন্য ট্রাইব্যুনাল, পাবলিক প্রসিকিউটর ও সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তাকে সুপ্রিম কোর্ট এবং সরকারের কাছে লিখিতভাবে ব্যাখ্যা প্রদানের নির্দেশনা থাকলেও সমন্বয়হীনতার কারণে সংশ্লিষ্টদের জবাবদিহি দৃশ্যমান নয়। এ কারণে ছয় দফা নির্দেশনা বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে রায়ের অনুলিপি ট্রাইব্যুনালের সব বিচারকের কাছে পাঠাতে বলা হয়েছে।

নির্দেশনাসমূহ : সমন জারির পর ধার্য তারিখে অফিশিয়াল সাক্ষীদের (ম্যাজিস্ট্রেট/পুলিশ/চিকিৎসক বা অন্য বিশেষজ্ঞগণ) সাক্ষ্য প্রদানে আদালতে হাজির হতে হবে। সন্তোষজনক কারণ ছাড়া সাক্ষ্য প্রদানে হাজির না হলে সাক্ষীর বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ এবং প্রয়োজনে বেতন বন্ধের আদেশ দিতে বিবেচনা করবে ট্রাইব্যুনাল। অন্যান্য সাক্ষীর উপস্থিতি ও নিরাপত্তা নিশ্চিতে মনিটরিং কমিটি গঠন করতে হবে।

সর্বশেষ খবর