বুধবার, ২১ আগস্ট, ২০১৯ ০০:০০ টা

কিশোর প্রেমের করুণ পরিণতি

মির্জা মেহেদী তমাল

কিশোর প্রেমের করুণ পরিণতি

মাইসার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক ছিল রওনকের। কিন্তু রওনক মাইসার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে ফেলে। তুহু নামে আরেক মেয়ের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলে রওনক। কিন্তু এই তুহুর সঙ্গে সম্পর্ক ছিল অন্য আরেক ছেলের। তুহুর ওই প্রেমিক রওনকের ওপর ক্ষুব্ধ। তাকে কীভাবে কী করা যায় এ নিয়েই তার চিন্তাভাবনা। খোঁজ নিয়ে জানতে পারে, রওনকের আগের প্রেমিকা মাইসাও ক্ষুব্ধ আছে রওনকের ওপর। ব্যস, সূত্র একটি পেয়ে যায় সে। মাইসার সঙ্গে যোগাযোগ করে সে। মাইসাকে ব্যবহার করে রওনককে হত্যার পরিকল্পনা হয়। হত্যার জন্য বেছে নেওয়া হয়  হোলি উৎসব। পরিকল্পনা মতো রওনক হোলি উৎসবে এলে তাকে হত্যা করা হয়। রক্তারক্তির মধ্য দিয়ে ইতি ঘটল চার কিশোরের ভয়ঙ্কর প্রেমের গল্প। ঘটনাটি পুরান ঢাকার শাঁখারী বাজারের।

এ ঘটনায় পুলিশ রিয়াজ আলম ওরফে ফারহান, ফাহিম আহম্মেদ ওরফে আব্রো, ইয়াসিন আলী, আল আমিন ওরফে ফারাবী খান ও লিজা আক্তার ওরফে মাইসা আলম নামে ৫ জনকে গ্রেফতার করে। এরা প্রত্যেকেই কিশোর বয়সী। এদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত ছুরি। পুলিশ ঘটনার  তদন্ত করতে গিয়ে জানতে পারে, রওনক, মাইসা, তুহু কিংবা এই বন্ধুমহলের কেউ কোনো নির্দিষ্ট এলাকা অথবা একই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়ন করে না। তারা ফেসবুকের মাধ্যমে একে অপরের সঙ্গে পরিচিত হয় এবং নির্দিষ্ট সময়ে তারা একসঙ্গে দেখা করে। এদের মধ্যে কলেজছাত্র যেমন রয়েছে,  তেমনি ফলের দোকানিও আছে। উঠতি বয়সী তরুণ-তরুণীদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারের বিষয়ে তাদের পরিবারকে আরও সচেতন হতে হবে।

পুলিশ জানায়, মূলত রওনকের দ্বিতীয় প্রেমের সম্পর্ককে কেন্দ্র করে ওই ছেলে ও রওনকের মধ্যে ফেসবুকে কথা কাটাকাটি ও একজন অন্যজনকে হুমকিদানের ঘটনা ঘটে। তাই ওই ছেলে পরিকল্পনা করে হোলি উৎসবকে বেছে নেয় রওনককে খুন করার। তাই মাইসাকে ব্যবহার করে রওনককে হোলি উৎসবে নিয়ে আসে ওই তরুণ। পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী মাইসার কল  পেয়ে গত ১ মার্চ রওনক কামরাঙ্গীরচরের বাসা থেকে কলাবাগানে অন্য বন্ধুদের সঙ্গে মিলিত হয়। রওনক পৌঁছার আগেই ওই তরুণ লক্ষ্মীবাজারে কয়েকজনকে নিয়ে পরিকল্পনা করে এবং ছুরি সরবরাহ করে। রওনক বন্ধুদের সঙ্গে শাঁখারী বাজার শনি মন্দিরের সামনে গেলে মাইসা তাকে একপাশে ডেকে নিয়ে যায়।  সেখানে ২০-২৫ জন মিলে তাকে মারধর করে। এদের মধ্যে কয়েকজন রওনককে ছুরিকাঘাত করে। গ্রেফতার ব্যক্তিদের মধ্যে ফারহান নিজেই ছুরিকাঘাত করেছে।

অপরাধ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখনকার সমাজ অনেক বেশি বিশৃঙ্খল ও বিচ্ছিন্ন। আগে ছোটবেলা থেকেই পাড়া-মহল্লায় বন্ধুত্ব  তৈরি হতো নানা ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে। এখন পাড়া-মহল্লা কালচার না হওয়ায় স্কুলকেন্দ্রিক বন্ধুত্ব হয়। কিন্তু সেখানে বন্ধুত্বটি সামনে এগোতে পারে না। কারণ পড়ার অনেক চাপ। ফলে সবাই বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে। আর এই বিচ্ছিন্নতা থেকে তারা  ফেসবুক বা টেকনোলজি নির্ভর বন্ধুত্বে যাচ্ছে। কিন্তু সেখানে মানুষ পর্দার আড়ালে থাকে বলে তাদের চেনা যায় না। যেখানে ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে সম্পর্ক হয় না, সেখানে ভুল হওয়ার সম্ভাবনা থাকেই।’ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক তৌহিদুল হক বলেন, বন্ধু কে হবে, সেটি প্রথমত বাবা-মাকে দেখেই সন্তান শেখে। তিনি বলেন, ‘ভালো বন্ধু  বেশি হওয়ার কথা না। আমরা দেখি, এখন সবাই কথায় কথায় একজন আরেকজনকে ‘বন্ধু পরিচয় দিচ্ছি। ভুলে গেলে চলবে না, অসাম্প্রদায়িক মানবিক সম্পর্ক হিসেবে বন্ধুত্বকে এগিয়ে নেওয়ার সময় ও জায়গা হলো স্কুল। এর পরবর্তীতে সে কীভাবে বড় হবে,  সেটা অভিভাবকদের দায়িত্ব।’ তিনি আরও বলেন, ‘বাবা-মা কোন বন্ধুদের সঙ্গে কীভাবে সময় কাটাচ্ছেন সেটা ছেলেমেয়েদের প্রভাবিত করতে বাধ্য।’

সর্বশেষ খবর