রবিবার, ২৫ আগস্ট, ২০১৯ ০০:০০ টা

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসির দুর্নীতির খোঁজে মাঠে দুদক

আহমেদ আল আমীন

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরীর বিভিন্ন অনিয়ম, দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের ব্যাপারে অনুসন্ধানে মাঠে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক। ইতিমধ্যে ১০টি খাতে তার দুর্নীতিসংক্রান্ত কিছু তথ্য ও রেকর্ডপত্র দুদকের হাতে পৌঁছে গেছে। এর ভিত্তিতে অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ৪৬ জনকে তলবও করা হয়েছে। আরও তথ্য যাচাই-বাছাইসহ অনুসন্ধান কার্যক্রমে তৎপরতা চালাচ্ছেন দুদক কর্মকর্তারা। এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক পর্যায়ে গঠিত একটি কমিটির প্রতিবেদনে সাবেক উপাচার্যকে ‘দায়মুক্ত’ রাখার চেষ্টা চললেও দুদকের তৎপরতায় তা প  হয়। কয়েকটি খাতের দুর্নীতিতে সাবেক এই ভিসির সম্পৃৃক্ততা থাকার ব্যাপারে দুদকের কাছে যথেষ্ট তথ্য রয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। এ অবস্থায় সংস্থাটির চট্টগ্রামের এক নম্বর সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. ফখরুল ইসলামের অনুসন্ধান শেষে পরবর্তী আইনি পদক্ষেপের দিকে যাবে কমিশন।  জানা গেছে, চবির তৎকালীন উপাচার্য ইফতেখার চৌধুরীর বিরুদ্ধে অনিয়ম, দুর্নীতির অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গত এপ্রিলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে সুনির্দিষ্ট তথ্য চেয়ে চিঠি দেয় দুদক। কমিশনকে তথ্য দিতে ১০ জুন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার কে এম নুর আহমদের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি করেন উপাচার্য অধ্যাপক ইফতেখার। কয়েকদিন পর তার মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। নতুন উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পেয়ে অধ্যাপক শিরীন আখতার ওই কমিটির কার্যক্রম তদারকি করতে আইন বিভাগের অধ্যাপক আবদুল্লাহ আল ফারুকের নেতৃত্বে দুই সদস্যের কমিটি করেন। এরপর তথ্য প্রদানে গঠিত কমিটি ৭ জুলাই সাবেক উপাচার্য ইফতেখারের আমলের বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়ে কমিশনে তথ্যসহ চিঠি দেয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার কে এম নুর আহমদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ইফতেখার চৌধুরীর বিষয়ে তথ্য প্রদানে গঠিত কমিটির মাধ্যমে আমরা দুদককে তথ্য দিয়েছি। সেখানে কাউকে রক্ষা করা বা দায়মুক্তি দেওয়ার চেষ্টা করা হয়নি। কমিটি যেসব তথ্য পেয়েছে তাই কমিশনকে দেওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানিয়েছে, অধ্যাপক ইফতেখারের আমলে আবাসিক হল ও একাডেমিক ভবন নির্মাণ, সিটিং অ্যালাউন্স, নালা-নর্দমা, পাহাড় ও আগাছা পরিষ্কার, উপাচার্যের বাসভবন মেরামত ও সংস্কার এবং নিয়োগসংক্রান্ত দুর্নীতির তথ্য দুদকে দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। চবি প্রশাসন দুদককে জানিয়েছে, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতাভুক্ত বিভিন্ন নালা-নর্দমা, পাহাড় ও আগাছা পরিষ্কার, উপাচার্যের বাসভবন মেরামত ও সংস্কার কাজে কোনো টেন্ডার দেওয়া হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলীর বরাতে আরও বলা হয়েছে, ২০১৭-১৮ এবং ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এই কার্যক্রম চালিয়েছে অধ্যাপক ইফতেখারের নেতৃত্বাধীন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, এ ক্ষেত্রে বড় ধরনের অনিয়ম ও দুর্নীতির আশ্রয় নিয়েছে তৎকালীন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। আলোচ্য দুটি অর্থবছরে উপাচার্যের পদে থেকে অধ্যাপক ইফতেখার বিভিন্ন সভায় অংশগ্রহণের সম্মানীর নামে প্রায় ছয় লাখ টাকা সিটিং অ্যালাউন্স নিয়েছেন বলে দুদককে জানিয়েছে কমিটি। সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, সাবেক এই উপাচার্যের সিটিং অ্যালাউন্সের সঠিক তথ্য এখানে আসেনি। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে বেতনের পাশাপাশি উপাচার্যের দায়িত্ববাবদ মোটা অঙ্কের সম্মানী গ্রহণের পর নীতিগতভাবেই তিনি এই সিটিং অ্যালাউন্স নিতে পারেন না। দুদককে জানানো হয়েছে, ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউজিসির নির্দেশনার পর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অ্যাডহক বা মাস্টাররোলে কর্মচারী নিয়োগ হয়নি। তবে উপাচার্যের আদেশে ইউজিসির বাজেট বরাদ্দ থেকে মোট ৪২ জনকে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী হিসেবে দৈনিক মজুরি ভিত্তিতে কাজের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।

সর্বশেষ খবর