সারা দেশে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা এ মাসের প্রথমদিকের তুলনায় কমেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত হয়েছেন ১ হাজার ২৫১ জন। এর মধ্যে ঢাকার হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৫৭৭ জন এবং অন্য বিভাগের হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৬৭৪ জন।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশনস সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম সূত্রে জানা গেছে, এ বছর সরকারি হিসেবে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন ৬৪ হাজার ৭৬৫ জন। এর মধ্যে ছাড়পত্র পাওয়া রোগী ৫৯ হাজার ৩০ জন। বর্তমানে দেশের সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৫ হাজার ৫৬২ জন। ঢাকার ৪১টি সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন ৩ হাজার ৮১ জন এবং অন্য বিভাগে ভর্তি রয়েছেন ২৫৮১ জন। এ পর্যন্ত ডেঙ্গু সন্দেহে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে (আইইডিসিআর) ১৭৩ জনের মৃত্যুর তথ্য পাঠিয়েছে বিভিন্ন হাসপাতাল। এর মধ্যে ৮৮ জনের তথ্য পর্যালোচনা করে ৫২ জনের ডেঙ্গুজনিত কারণে মৃত্যু নিশ্চিত করেছেন।
আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরে জানা গেছে, গত রবিবার শরীয়তপুরের গোসাইরহাট উপজেলায় মো. দাদন লস্কর (২৫) নামে এক কলেজ ছাত্র ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। দাদন উপজেলার ইদিলপুর ইউনিয়নের মাছুয়াখালী গ্রামের কৃষক জামাল হোসেন লস্করের ছেলে। রাত সাড়ে ৯টার দিকে তিনি মারা যান। এ নিয়ে শরীয়তপুরে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে তিনজন নারী ও একজন পুরুষের মৃত্যু হলো। গত ৩০ জুলাই জাজিরার স্কুল শিক্ষিকা বর্ষা আক্তার (২৭), ৫ আগস্ট ভেদরগঞ্জের ইতালি প্রবাসী হাফসা লিপি (৩০) ও ২১ আগস্ট ডামুড্যার গৃহবধূ সুরাইয়া বেগম (৩৭) মারা যান। পরিবার ও স্থানীয় সূত্র জানায়, দাদনরা তিন ভাই এক বোন। দাদন সংসারের বড় ছেলে। তিনি গোসাইরহাট সরকারি সামসুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের ডিগ্রি দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। অভাবের সংসারের হাল ধরতে তিনি ঢাকা বানানীর একটি হোটেলে ম্যানেজার হিসেবে চাকরি করতেন। গত ১৫ আগস্ট বৃহস্পতিবার হঠাৎ জ্বর অনুভব হয় তার। জ্বর ক্রমেই বাড়তে থাকলে ২২ আগস্ট শরীয়তপুরের গ্রামের বাড়ি চলে আসেন তিনি। পরের দিন শুক্রবার সন্ধ্যায় পরিবার দাদনকে গোসাইরহাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। সেখানে রক্ত পরীক্ষা করলে ডেঙ্গু জ্বর শনাক্ত হয়। ওই হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা চলছিল। রবিবার বিকেলে দাদনের অবস্থার অবনতি হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক শরীয়তপুর সদর হাসপাতলে প্রেরণ করেন তাকে। কিন্তু সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সময় পথে তার মৃত্যু হয়।উত্তর সিটি করপোরেশনের চিরুনি অভিযান : এডিস মশা নির্মূলে চলমান চিরুনি অভিযানে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম মোহাম্মদপুরে পরিচ্ছন্নতা ও মশককর্মীদের কাজ পরিদর্শন করেন। নুরজাহান রোডের ঢাকা স্টেট কলেজের সামনে এলাকার বাড়ি মালিকগণের উদ্দেশে মেয়র বলেন, দুই বাড়ির ময়লা এবারের মতো ডিএনসিসির পরিচ্ছন্নতাকর্মীগণ পরিষ্কার করে দিচ্ছে। তবে ভবিষ্যতে কমিউনিটির লোকজনকে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে। মেয়র আতিকুল ইসলাম এর পরে তাজমহল রোডে ‘চিরুনি অভিযান’ পরিদর্শন করেন।
এদিকে এডিস মশার লার্ভা পাওয়ায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সাজিদ আনোয়ারের নেতৃত্বে পরিচালিত ভ্রাম্যমাণ আদালত গুলশানের ‘এক্সিকিউটিভ ইন লিমিটেড’কে ৩ লাখ টাকা এবং ‘মিরাকি রেস্টুরেন্ট’কে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেন। একই অপরাধে অঞ্চল-৩ এর আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মীর নাহিদ আহসান গুলশানে শান্তা প্রোপার্টিজকে ১ লাখ টাকা, শাহজাদপুরে ‘অনওয়ার্ড প্রোপার্টিজ’কে ৫০ হাজার টাকা এবং শাহজাদপুরে একটি ব্যক্তিগত নির্মাণাধীন ভবনের মালিককে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের অভিযান : সিটি করপোরেশন পরিচালিত ৬টি ভ্রাম্যমাণ আদালত মোট ২০৬টি বাড়ি ইন্সপেকশন করেছে। এডিস মশার লার্ভা পাওয়ায় দুজনকে কারাদ প্রদান করেছে এবং অন্য বাড়ির মালিককে ৬০ হাজার টাকা জরিমানা করেছে। কলাবাগান সেন্ট্রাল রোডের একটি বাসায় এডিস মশার লার্ভা পাওয়ায় মো. আবদুল মালেক (৬৭) এবং মো. ইউসুফ আলীকে (৫৫) তিনদিনের বিনাশ্রম কারাদ প্রদান করা হয়েছে। সেন্ট্রাল রোডের একটি বাড়িতে এডিস মশার প্রজনন উপযোগী পরিবেশ পাওয়ায় ১০ হাজার টাকা অর্থদ দিয়েছেন অঞ্চল-১ এর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মিজানুর রহমান। অঞ্চল-৩ এর নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বাবর আলি ৪৭টি বাড়ি পরিদর্শন করেছেন। এর মধ্যে জিগাতলার হোটেল সুনামীতে মশার লার্ভা বংশবিস্তার সহায়ক পরিবেশের কারণে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন।