বুধবার, ২৮ আগস্ট, ২০১৯ ০০:০০ টা

চার হাজার কোটি টাকার অবকাঠামো তহবিল আসছে

পিপিপি প্রকল্প বাস্তবায়ন

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

দেশের অবকাঠামো উন্নয়নে একটি ন্যাশনাল ইনফ্রাস্ট্রাকচার ফান্ড বা জাতীয় অবকাঠামো তহবিল গঠন করতে যাচ্ছে সরকার, যার আকার হবে প্রায় ৫০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। টাকার অংকে তহবিলের পরিমাণ দাঁড়াবে প্রায় ৪ হাজার ২৫০ কোটি টাকা। এই তহবিলের ২০ থেকে ৩০ শতাংশ দেবে সরকার। বেসরকারি খাত থেকে আসবে ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক সভায় এই অবকাঠামো তহবিল সম্পর্কে ধারণাপত্র উপস্থাপন করে পিপিপি (পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ) কর্তৃপক্ষ। পরে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মহাপরিচালক-০১কে আহ্বায়ক করে তহবিল গঠনের লক্ষ্যে একটি কমিটি গঠন করা হয়। সূত্রগুলো জানায়, জাতীয় অবকাঠামো তহবিল গঠন করতে মূলত বেসরকারি খাত থেকে সিংহভাগ বিনিয়োগ সংগ্রহ করা হবে। আর তহবিল পরিচালনায় কাঠামোগত সহায়তা, সিড ক্যাপিটাল, ঝুঁকি নিশ্চয়তা এবং নীতিগত সহায়তা দেবে সরকার। বিভিন্ন ব্যাংক, বীমা, পেনশন ফান্ড, মিউচুয়াল ফান্ড, বন্ড এবং অন্যান্য উপকরণের মাধ্যমে এই তহবিলে অর্থ সংগ্রহ করা হবে।

তহবিলে সরকারি-বেসরকারি অর্থায়ন ও প্রণোদনা নিয়ে গত ২৯ জুলাই একটি সভা করে পিপিপি কর্তৃপক্ষ। সভার কার্যবিবরণী পর্যালোচনা করে দেখা যায়, আলোচ্য তহবিলে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ টানতে বেশ কিছু প্রণোদনার প্রস্তাব করা হয়েছে। বেসরকারি খাতের অর্থায়নকারীদের মুনাফার ওপর আরোপিত ট্যাক্স মওকুফ, বিভিন্ন ফি বা চার্জের ওপর আরোপিত ভ্যাট মওকুফ এবং তহবিল থেকে বিনিয়োগকৃত অর্থকে সঞ্চয়পত্রের মতো করমুক্ত সুবিধা দেওয়ার প্রস্তাব রয়েছে। এ ছাড়া বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো যাতে এই তহবিলে বেশি করে অর্থায়ন করতে পারে এ লক্ষ্যে ব্যাংকের যে বিনিয়োগ সীমা রয়েছে তা থেকে অব্যাহতির প্রস্তাব করা হয়েছে। বীমা খাতের অলস তারল্যের অন্তত ৭ থেকে ১০ শতাংশ অর্থ পিপিপি খাতে ব্যবহারের বিধান সংযুক্ত করার প্রস্তাব রয়েছে। 

সূত্রগুলো জানায়, এই তহবিলে অর্থায়নের বিষয়টিকে ঝুঁকিমুক্ত করতে রাষ্ট্রীয় গ্যারান্টির প্রস্তাব করা করে পিপিপি কর্তৃপক্ষ। তবে অর্থ বিভাগ বলেছে, বর্তমান নীতিমালায় শুধু রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানকে এ ধরনের গ্যারান্টি দেওয়া হয়। ‘জাতীয় অবকাঠামো তহবিল’ গ্যারান্টি দিতে হলে এই নীতিমালা পরিমার্জন করতে হবে।

তহবিলে পুঁজিবাজার থেকে বিনিয়োগ সংগ্রহের বিষয়টিও পর্যালোচনা করা হয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বড় বড় অবকাঠামো বাস্তবায়নে পুঁজিবাজার থেকে তহবিল সংগ্রহ করা হয়। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে পিপিপি প্রকল্পের জন্য বাংলাদেশের পুঁজিবাজার থেকে তারল্য সংগ্রহ করা সম্ভব হবে না বলে মনে করছে কর্তৃপক্ষ। তারা বলছে, তেমন কোনো কার্যকর বন্ড মার্কেট বা কোনো বৃহৎ প্রতিষ্ঠান নেই, যারা এই বাজার থেকে তারল্য সংগ্রহে ভূমিকা রাখতে পারে।

এই তহবিলে প্রবাসী বাংলাদেশিদের সম্পৃক্ত করার সুযোগ তৈরির বিষয়টিও পর্যালোচনা করে দেখা হচ্ছে। এ লক্ষ্যে অবকাঠামো তহবিল কর্তৃক ইস্যুকৃত বন্ড এবং পাবলিক লিস্টিং করার বিষয়টি বিবেচনা করা হচ্ছে বলে জানায় পিপিপি কর্তৃপক্ষ। অর্থনৈতিক সমীক্ষার তথ্য অনুযায়ী, পিপিপির মাধ্যমে বাস্তবায়নের জন্য এ পর্যন্ত ১৩টি খাতে ৫৬টি প্রকল্প নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে, যাতে প্রাক্কলিত বিনিয়োগের পরিমাণ প্রায় ২ লাখ ২ হাজার ৩০০ কোটি টাকা (২৩ দশমিক ৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার)। এরই মধ্যে ১০টি প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য বেসরকারি অংশীদারের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করা হয়েছে, যেগুলো বাস্তবায়ন করতে লাগবে প্রায় ৩৪ হাজার কোটি টাকা (৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার)। উল্লেখযোগ্য প্রকল্পগুলো হচ্ছে : ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, ঢাকা বাইপাস চারলেনে উন্নীতকরণ, বাগেরহাট খানজাহান আলী বিমানবন্দর, ঢাকা-চট্টগ্রাম অ্যাকসেসওয়ে, শান্তিনগর-মাওয়া ফ্লাইওভার, চট্টগ্রাম বে-টার্মিনাল, পায়রা পোর্ট ড্রেজিং, কমলাপুর ও বিমানবন্দরে রেলওয়ে মাল্টিমডেল হাব তৈরি, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার হাইওয়ে উন্নীতকরণ এবং পাটুরিয়া-গোয়ালন্দে দ্বিতীয় পদ্মা সেতু নির্মাণ। এ অবস্থায় মাত্র ৫০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের প্রস্তাবিত তহবিল এসব অবকাঠামো বাস্তবায়নে কতটা কার্যকর হবে? জানতে চাইলে পিপিপি কর্তৃপক্ষের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ আলকামা সিদ্দিকী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, এই ৫০০ মিলিয়ন ডলারের তহবিল দিয়ে আমরা মূলত শুরু করতে চাইছি। এটা অনেকটা সরকারের সিড মানির মতো। পর্যায়ক্রমে এই তহবিল বাড়ানো হবে। আলকামা সিদ্দিকী বলেন, পিপিপি প্রকল্প বাস্তবায়নে আমরা মূলত বেসরকারি খাতের অর্থায়নে  সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছি। সরকার এখানে দেবে নীতি সহায়তা।

সর্বশেষ খবর