শনিবার, ৩১ আগস্ট, ২০১৯ ০০:০০ টা

২২ বছর ধরে চলছে গ্রুপিং আওয়ামী লীগে

দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের দ্বন্দ্ব চলছে। এক গ্রুপের নেতৃত্বে আছেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বাহাউদ্দিন নাছিম। অন্য গ্রুপের নেতৃত্ব দিচ্ছেন সাবেক নৌমন্ত্রী ও সদর আসনের এমপি শাজাহান খান। এই গ্রুপিংয়ের প্রভাব পড়ছে জেলা থেকে ইউনিয়ন পর্যন্ত দলের প্রতিটি অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনে। দুই গ্রুপের এ দ্বন্দ্বকে আদর্শগত দ্বন্দ্ব মানতে রাজি নয় অনেকেই। তাদের মতে, এটা কর্তৃত্বের লড়াই। মাদারীপুর জেলা আওয়ামী লীগের একাধিক দায়িত্বশীল নেতা  জানান, ১৯৭২ সালের পর মাদারীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন মাওলানা আছমত আলী খান এবং তার ছেলে শাজাহান খান ছিলেন জেলা জাসদের সভাপতি। ওই সময়কার নির্বাচনে মাদারীপুর সদর আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়েছিলেন আছমত আলী খান এবং তার ছেলে শাজাহান খান জাসদের প্রার্থী হয়েছিলেন শিবচর সংসদীয় আসনে। ১৯৭২ থেকে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত জাসদের রাজনীতিতে যুক্ত ছিলেন শাজাহান খান। এর আগে মাদারীপুর মহকুমা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। ১৯৯১ সালের নির্বাচনে মাদারীপুর সদর আসনসহ একাধিক আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হন প্রয়াত আবদুর রাজ্জাক। তার প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন জাসদের প্রার্থী শাজাহান খান। নির্বাচনে জিতে ছিলেন আবদুর রাজ্জাক। পরে তিনি সদর আসনটি ছেড়ে দেন। তার ছেড়ে দেওয়া আসনের উপনির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে এ আসনে দলীয় প্রার্থী হয়ে জয়লাভ করেন সাবেক জাসদ নেতা শাজাহান খান। নির্বাচনে তৎকালীন জেলা নেতা ফেরদাউস জমাদ্দারকে মনোনয়ন না দেওয়ায় মাদারীপুরে আওয়ামী লীগে গ্রুপিং শুরু হয়। উপনির্বাচনে শাজাহান খানকে মনোনয়ন দেওয়ায় আওয়ামী লীগের বৃহৎ একটি অংশ ক্ষুব্ধ হয়। তারা জেলা সাধারণ সম্পাদক ফেরদাউস জমাদ্দারকে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে দাঁড় করায়। কিন্তু তাতে সুফল মেলেনি। জিত হয় শাজাহান খানের। সেই থেকে শুরু হওয়া দ্বন্দ্ব এখনো চলছে। ২২ বছর আগে শুরু হওয়া গ্রুপিং মানসিকতা দিনে দিনে এতই পোক্ত হয়েছে, বিভিন্ন জাতীয় কর্মসূচিও পালিত হয় দুই গ্রুপের উদ্যোগে ভিন্নভাবে। সদ্য সমাপ্ত মাদারীপুর সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়েছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাজল কৃষ্ণ দে। বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছিলেন শাজাহান খানের ছোট ভাই ওবাইদুর রহমান কালু খান। নির্বাচনে কালু খান জয়লাভ করেন। তবে নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে কাজ না করার অভিযোগ এনে দলীয় গঠনতন্ত্রবিরোধী কাজে লিপ্ত থাকার কারণ দেখিয়ে শাজাহান খানপন্থি আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের একাধিক নেতা-কর্মীকে বহিষ্কার করা হয়। এ ছাড়াও রাজৈর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনেও আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপ থেকে দুই প্রার্থী হয়েছিলেন। নির্বাচনে শাজাহান খান গ্রুপের নেতা মোতালেব মিয়া আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী হয়েছিলেন। শাজাহান খান গ্রুপের দাবি, দলীয় প্রার্থীর বিপক্ষে বাহাউদ্দিন নাছিম গ্রুপ রাজৈরে বিদ্রোহী প্রার্থীকে সমর্থন দিয়েছে। এসব কারণে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে মাদারীপুর জেলা রাজনীতি। এ ব্যাপারে মাদারীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি শেখ সিরাজুল ইসলাম ফরাজী বলেন, এখানে আওয়ামী লীগে আদর্শগত কোনো দ্বন্দ্ব নেই। কর্তৃত্ব বজায় রাখার জন্য শাজাহান খান ও বাহাউদ্দিন নাছিম এ দ্বন্দ্ব জিইয়ে রেখেছেন। ১৯৯১ সালের নির্বাচনে শাজাহান খানের পক্ষেই ছিলেন বাহাউদ্দিন নাছিম। পরে তাদের ব্যক্তিগত কর্তৃত্ব বজায় রাখতে গিয়েই আওয়ামী লীগকে খি ত করে শাজাহান খান লীগ ও নাছিম লীগে পরিণত করা হয়েছে।

সর্বশেষ খবর